গ্রাহক ডেটা বিজ্ঞাপনে ব্যবহার প্রশ্নে মেটার জরিমানা ৪১ কোটি ডলার

‘ডেটা প্রটেকশন কমিশন’ বলছে, ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য গ্রাহক ডেটা ব্যবহারে মেটার অনুরোধের ধরন পুরোপুরি বেআইনি ছিল।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2023, 02:03 PM
Updated : 5 Jan 2023, 02:03 PM

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)’র ডেটা নীতিমালা লঙ্ঘন করে আয়ারল্যান্ডের নিয়ন্ত্রকদের জরিমানার মুখে পড়েছে সামাজিক জায়ান্ট মেটা।

এই জরিমানার পরিমাণ ৪১ কোটি ডলার (৩৯ কোটি ইউরো)।

আয়ারল্যান্ডের ‘ডেটা প্রটেকশন কমিশন’ বলছে, ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য গ্রাহক ডেটা ব্যবহারে মেটার অনুরোধের ধরন পুরোপুরি বেআইনি ছিল।

মেটা বলছে, তারা এই বিষয়ে ‘হতাশ’। আর শীঘ্রই এর বিপরীতে আপিলের পরিকল্পনা করছে তারা। মেটা জোর দিয়ে বলেছে, এই সিদ্ধান্তের কারণে তারা নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে ‘পার্সোনালাইজড’ বিজ্ঞাপন দেখানো বন্ধ করবে না।

কমিশনের নিয়ন্ত্রক বলেন, “গ্রাহকদের ডেটা যেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটাই মেনে নিতে হবে” - এমন কথা বলে ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ‘জোর করে অনুমতি’ নিতে পারে না।

ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামের ইউরোপীয় প্রধান কার্যালয় আয়ারল্যান্ডে হওয়ায় তাদের ইইউ’র ডেটা আইন নিশ্চিত করার বিষয়টি নেতৃত্ব দেয় ডিপিসি।

ব্যবহারকারীর ডেটা প্রাইভেসি সংক্রান্ত প্রচারকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত একটি ‘বড় বিজয়’। এর মানে, অনলাইন বিজ্ঞাপনের জন্য গ্রাহকদের ডেটা কীভাবে ব্যবহৃত হবে, তা ব্যবহারকারীদের স্পষ্টভাবে জানাতে বাধ্য হবে মেটা। আর সম্ভবত নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের মূল অংশই বদলে ফেলতে হবে।

কোম্পানিটির বেশিরভাগ অর্থই আসে বিজ্ঞাপন থেকে। ২০২১ সালেও এই খাত থেকে ১১ হাজার আটশ কোটি ডলার আয় করেছে তারা।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নিয়ন্ত্রকদের দেওয়া দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য জরিমানা এটি।

নভেম্বরে কোটি কোটি ফেইসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে ফাঁস হওয়ার ঘটনায় কোম্পানিটিকে সাড়ে ২৬ কোটি ডলার জরিমানা করেছিল ডিপিসি।

আইরিশ টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইইউ’র সম্ভাব্য বিভিন্ন জরিমানার বিপরীতে দুইশ ১২ কোটি ডলার আলাদা করে রেখেছে মেটা।

নতুন আইন, নতুন অভিযোগ

২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়া ও বেলজিয়ামের দুই ব্যবহারকারীর বরাতে ম্যাক্স স্ক্রেমস নামে এক ডেটা প্রাইভেসি প্রচারকের অভিযোগের ভিত্তিতে ডিপিসি’র তদন্ত শুরু হয়। ইইউ’র ডেটা ও প্রাইভেসি আইন ‘জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন (জিডিপিআর)’ চালুর পরপরই অভিযোগটি আসে।

‘জিডিপিআর’ মেনে চলতে ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রাম উভয় প্ল্যাটফর্মই ব্যবহারকারীদের ‘আই এক্সেপ্ট’ নামে পরিচিত একটি অপশনে ক্লিক করতে বলে। এর ফলে, বিজ্ঞাপনে তাদের ডেটা কীভাবে ব্যবহার করা যাবে, ওই শর্তে সম্মতি দেওয়ার ইঙ্গিত মেলে।

এই শর্তে অনুমতি না দিলে ব্যবহারকারী আর ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করতে পারেন না বলে উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে।

অভিযোগকারীরা যুক্তি দেখিয়েছেন, এর মানে দাঁড়ায় মেটা বিজ্ঞাপনে তাদের ডেটা ব্যবহারের অনুমোদন দিতে ‘বাধ্য’ করার পাশাপাশি জিডিপিআর আইনও লঙ্ঘন করেছে।

অন্যদিকে মেটার মুখপাত্ররা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ‘সহজজাত উপায়েই পার্সোনালাইজ’ করা। আর প্ল্যাটফর্মটি কাজ করার ‘প্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য অংশ’ হলো এর বিজ্ঞাপন।

তারা আরও বলেন, ব্যবহারকারীদের কোনো শর্ত দেয়নি মেটা। আর বিজ্ঞাপনে ব্যবহারকারীর ডেটা ব্যবহার ব্যতীত অন্য কোনো উপায়ে প্ল্যাটফর্মটি কাজ করতে পারে না।

তবে, ডিপিসি’র অনুসন্ধান বলছে ভিন্ন কথা। সকল ব্যবহারকারীর কাছেই ‘জোর করে’ অনুমতি নিয়েছে মেটা।

ডিপিসি আরও বলেছে, ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ডেটা কীভাবে ও কেন ব্যবহৃত হতে পারে, ওই বিষয়টি নিয়েও পুরোপুরি পরিষ্কার ছিল না মেটা।

তবে, অন্যান্য ইউরোপীয় ডেটা নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে বাদানুবাদের পরপরই এই সিদ্ধান্ত এলো। ডিসেম্বরে ওই বিষয়টি অবশেষে নিষ্পত্তি করেছে ‘ইউরোপিয়ান ডেটা প্রোটেকশন বোর্ড’।

মেটার মুখপাত্ররা বলছেন, তারা এইসব জরিমানার পরিমাণকে চ্যালেঞ্জ জানানোর পরিকল্পনা করছে। এর কারণ হিসেবে তারা নিয়ন্ত্রকদের মধ্যেই ‘মতের অমিলের’ বিষয়টি উল্লেখ করেছে।

কোম্পানির যুক্তি অনুযায়ী, তারা গ্রাহদের ডেটা ব্যবহারে বাধ্য না করে বরং তাদের ডেটা কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেই প্রশ্নে বেশ কিছু সংখ্যক টুলের ওপর নিয়ন্ত্রণ দিয়ে রেখেছে।

এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় প্রাইভেসি প্রচারক স্ক্রেমস লিখেন, “ইইউ-তে মেটার লাভের বেলায় এটি বিশাল এক ধাক্কা। এখন থেকে গ্রাহকদের জিজ্ঞেস করতে হবে, তারা কী বিজ্ঞাপনের জন্য নিজস্ব ডেটা ব্যবহার করাতে ইচ্ছুক কি না।”

“তারা এখন ‘হ্যা অথবা না’ বলার সুযোগ পাবেন ও চাইলে যেকোনো সময় তাদের মন পাল্টাতে পারবেন।”