স্যার আর্নেস্ট শ্যাকলটন একজন অ্যাংলো-আইরিশ নাবিক, যিনি ‘ইম্পেরিয়াল ট্রান্স-অ্যান্টার্কটিক এক্সপিডিশন’-এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই অভিযানেই প্রথম কেউ অ্যান্টার্কটিকার ভূখণ্ড অতিক্রম করেছিল।
Published : 11 Oct 2024, 12:15 PM
অ্যান্টার্কটিকার বরফগলা পানিতে ডুবে থাকার একশ বছরেরও বেশি সময় পর আইরিশ নাবিক স্যার আর্নেস্ট শ্যাকলটনের জাহাজ ‘এনডিউরেন্স’র বিস্তারিত উঠে এসেছে থ্রিডি স্ক্যানিংয়ে, যা এর আগে কখনও দেখা যায়নি।
১৯১৫ সালে ডুবে যাওয়ার পর থেকে ওয়েডেল সাগরের তিন হাজার মিটার গভীরে থাকা জাহাজটি এই প্রথম জনসমক্ষে দেখা গেল, যেন এই মাত্র কাদা পানি থেকে উঠে এল এটি।
এর ডিজিটাল স্ক্যানিংয়ের ছবিটি তৈরি হয়েছে ২৫ হাজার হাই রেজুলিউশনের ছবি থেকে, যেগুলো ধারণ করা হয়েছিল ২০২২ সালে জাহাজটি খুঁজে পাওয়ার পরপরই।
এই থ্রিডি স্ক্যানিং প্রকাশ পেয়েছে ‘এনডিউরেন্স’ নামে ডাকা এক তথ্যচিত্রের অংশ হিসেবে, যা শিগগিরই সিনেমা হলে দেখা যাবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
গবেষণা দলটি এ স্ক্যানিংয়ের খুঁটিনাটি তথ্য ঘেঁটে দেখে, এগুলোর প্রত্যেকটিই একেকটা গল্প বলে, যার যোগসূত্র আছে অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত।
এর মধ্যে এক ছবিতে জাহাজের নাবিকদের খাবারের প্লেট দেখা গেছে, যেগুলো ডেকে এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে।
আরেক ছবিতে একটি বুট দেখা গেছে, যা সম্ভবত ওই অভিযানে শ্যাকলটনের ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’ ফ্যাংক ওয়াইল্ডের।
তবে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ছবিটি হল একটি পিস্তল বা ফ্লেয়ার গানের, যার কথা উঠে এসেছিল জাহাজের সদস্যদের লেখা বিভিন্ন জার্নালে।
এ অভিযানের আলোকচিত্রী ফ্যাংক হার্লি এই বন্দুক ব্যবহার করেছেন, যেখানে বরফে হারিয়ে যাওয়া জাহাজটিই ছিল নাবিকদের ঠিকানা।
“হার্লি এ বন্দুক পেয়েছিলেন এবং একটি বিশাল ডেটনেটর’সহ আকাশে গুলি ছুড়েছিলেন। এর মাধ্যমেই তিনি জাহাজটিকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।” ব্যাখ্যা করেছেন ড. জন শিয়ার্স, যিনি হারিয়ে যাওয়া জাহাজটির অনুসন্ধানী অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
“নিজের ডায়েরিতে তিনি বন্দুকটি ডেকে রেখে আসার কথা উল্লেখ করেছেন। আর একশ বছরের বেশি সময় পর আমরা ওই বন্দুক খুঁজে পেয়েছি, যা সত্যিই অসাধারণ।”
সর্বনাশা অভিযান
স্যার আর্নেস্ট শ্যাকলটন একজন অ্যাংলো-আইরিশ নাবিক, যিনি ‘ইম্পেরিয়াল ট্রান্স-অ্যান্টার্কটিক এক্সপিডিশনে’র নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এটিই প্রথম অভিযান, যেখানে কেউ অ্যান্টার্কটিকা ভূখণ্ড অতিক্রম করেছিল।
তবে মিশনটি শুরু থেকেই অভিশপ্ত ছিল। আটলান্টিকের দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপ থেকে অভিযান শুরু করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জাহাজটি বরফে আটকে যায়।
জাহাজের সদস্যরা বেশ কয়েক মাস এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করার পর সেটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। অবশেষে ১৯১৫ সালের ২১ নভেম্বর এনডিউরেন্স পানির নীচে তলিয়ে যায়।
এর পর নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছাতে শ্যাকলটন ও তার সহযোগীরা বরফ, মাটি ও সমুদ্রের ওপর দিয়ে শত শত মাইল পাড়ি দিতে বাধ্য হন। সবচেয়ে রোমাঞ্চকর বিষয় হল, জাহাজের ২৭ জন সদস্যই অলৌককভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন।
তাদের এ অসাধারণ গল্পের খোঁজ মিলেছে তাদের লেখা বিভিন্ন ডায়েরি ও ফ্র্যাংক হার্লির বিভিন্ন ছবিতে, যেগুলোতে রং যোগ করা হয়েছে এনডিউরেন্স তথ্যচিত্রটির জন্য।