চাকরীর প্রলোভনে জালিয়াতি বাড়ছে অনলাইনে

এক ভুক্তভোগী বর্ণনা করেছেন, তিনি কয়েনবেইজের ছদ্মবেশধারী একটি কোম্পানির চাকরি কীভাবে পেয়েছিলেন। অথচ কোম্পানিটির কোনো অস্তিত্বই ছিল না।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2022, 02:32 PM
Updated : 26 Dec 2022, 02:32 PM

অনলাইনে বিভিন্ন জাল কোম্পানির নামে ভুয়া ‘চাকরীর’ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে স্ক্যামাররা। এর ফলে, বিভ্রান্তির মুখে পড়েছেন অনেকেই।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশাল সংখ্যক কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট জালিয়াতির নজির মিলেছে। প্রার্থীদের কৌশলে ভুয়া চাকরীর আবেদন করিয়ে প্রতারণা করছে স্ক্যামাররা। বেশিরভাগ চাকরী এখন তুলনামূলক দুরবর্তী স্থানে থাকায় এমন প্রতারণার সংখ্যা বেড়েই চলছে। এমনকি বৈধ চাকরীর বেলাতেও সহকর্মীদের সঙ্গে তাদের কখনও সরাসরি দেখা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্ক্যামাররা প্রায়ই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ভুয়া চাকরী পোস্ট করে উচ্চাভিলাষী চাকরীপ্রার্থীদেরকে প্রলোভন দেখায়। এর পর, প্রার্থীদের বিস্তারিত ও ‘আসলের মতো দেখতে’ একটি আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে যায় তারা। ফলে, অনেকেই ভেবে বসেন, তারা সত্যিকারের চাকরীর লাইনে আছেন বা আসলেই চাকরীটা পেয়ে গেছেন।

পরবর্তীতে, প্রার্থীদের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনা বা অন্য যে কোনো অজুহাতে স্ক্যামাররা তাদেরকে অর্থ পাঠাতে বলে। পাশাপাশি, আবেদন অগ্রসর করার নাম করেও আক্রমণকারীরা তাদের কাছে অর্থ বা ব্যক্তিগত তথ্য চাইতে পারে বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

লিংকডইনে ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবস্থাপক গুস্তাভো মিলার বর্ণনা করেছেন, তিনি কীভাবে ক্রিপ্টো কোম্পানি কয়েনবেইজের ছদ্মবেশধারী একটি ভুয়া কোম্পানির চাকরি পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন, এর কোনো অস্তিত্বই ছিল না।

“মাসখানেক আগে আমি একটি নতুন (নকল) চাকরি শুরু করি। এতে (ভুয়া) প্রবেশ করি। এমনকি (নকল) সহকর্মীদের সঙ্গেও দেখা করি।” --সাইটে লিখেন গুস্তাভো।

কোম্পানিতে নিয়োগ পাওয়ার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর চাকরির জন্য গুস্তাভোকে যন্ত্রাংশ কিনতে বলা হয়। ওই অর্থ পাঠানোর পর তিনি জানতে পারেন, এটা আসলে ভুয়া চাকরি ছিল ও তার অর্থ ফেরত আসার সম্ভাবনা নেই।

তিনি বলেন, অন্য কেউ যেন এমন জালিয়াতির বেলায় সতর্ক অবস্থানে থাকেন, সেজন্য তিনি এই গল্প শেয়ার করেছেন। তিনি আরও বলেন, অন্যদের কাছেও তিনি এমন জালিয়াতির গল্প শুনেছেন, যা বলতে তারা বিব্রত বোধ করতেন।

“স্ক্যামাররা জানে, কীভাবে বিভিন্ন দুর্বল মানুষকে শিকার বানাতে হয় ও তাদের সঙ্গে প্রতারণা করতে হয়।” --লিখেছেন তিনি।

“এটি সম্পর্কে জানার পর নিজেকে অনেক বোকা ও সাদাসিধে মনে হয়েছে। তবে, আমি জানি, এটি কোনো সাধারণ জালিয়তি নয়। এরা পেশাদার, দূরবর্তী জায়গায় প্রথম চাকরীর বেলায় বিভিন্ন শর্ত ও প্রযুক্তি শিল্পের নিয়োগ সংস্কৃতি সম্পর্কে তারা ভালোই ধারণা রাখে।”

গুস্তাভোর পোস্টের কমেন্ট সেকশনে, বিশাল সংখ্যক মানুষ একই ধরনের প্রতারণার মুখে পড়ার অভিযোগ জানিয়েছেন। এমনকি কয়েকজন বলছেন, এআই’র মাধ্যমে তারা এইসব কোম্পানির কাছে ভুয়া ইন্টারভিউ দিয়েছেন।

গ্রীষ্মে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সতর্ক করেছে, একইভাবে এর উল্টো ঘটনাও ঘটছে। এর ফলে, আসল কোম্পানিতে বিভিন্ন ভুয়া চাকরীপ্রার্থী আবেদন করে ইন্টারভিউ’র জন্য ডাক পাচ্ছেন। সংস্থাটি আরও বলেছে, স্ক্যামাররা ওইসব নকল আবেদনকারীর তথ্য ব্যবহার করে কোম্পানির অভ্যন্তরীন সিস্টেমে প্রবেশাধিকার পায়। তবে, এই সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত তথ্য মেলেনি।

এমন জালিয়াতির ঝুঁকিতে থাকা আবেদনকারীকে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া পড়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর বিভিন্ন সাধারণ বার্তা, ভুল বানানের ইমেইল ঠিকানা যাচাইয়ের পাশপাশি কোনো চাকরী বিজ্ঞপ্তি ‘অতিরঞ্জিত’ বলে মনে হয় কি না, ওই বিষয়গুলোতেও তারা নজর দিতে বলেছেন।