ক্যামেরাটির বিশেষত্ব বোঝাতে উদাহরণ হিসেবে ধরা যায় আইফোনের সর্বশেষ মডেলে থাকা ৪৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাকে, যেখানে এলএসএসটি’র তুলনায় বিভিন্ন ছবির বিস্তারিত ফুটে উঠে কেবল ০.০১ শতাংশ।
Published : 06 Apr 2024, 03:31 PM
দুই দশক দীর্ঘ কর্মযজ্ঞের পর বিশ্বের বৃহত্তম ক্যামেরার নির্মাণকাজ শেষ করেছেন একদল বিজ্ঞানী।
তিন হাজার দুইশ মেগাপিক্সেল রেজুলিউশনের এ ডিভাইসটির নাম ‘লিগাসি সার্ভে অফ স্পেস অ্যান্ড টাইম (এলএসএসটি) ক্যামেরা’, যার ওজন তিন মেট্রিক টন। এর সঙ্গে একটি লেন্সও যোগ করা হয়েছে, যার দৈর্ঘ্য পাঁচ ফুট এক ইঞ্চি।
ক্যামেরাটির বিশেষত্ব বোঝাতে উদাহরণ হিসেবে ধরা যায় আইফোনের সর্বশেষ মডেলে থাকা ৪৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাকে, যেখানে এলএসএসটি’র তুলনায় বিভিন্ন ছবির বিস্তারিত ফুটে উঠে কেবল ০.০১ শতাংশ।
ক্যামেরাটি বানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্ল্যাক ন্যাশনাল অ্যাক্সেলেটর ল্যাবরেটরি’র গবেষক ও প্রকৌশলীরা। তাদের দাবি, মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় কয়েকটি রহস্য নিয়ে অভূতপূর্ব অন্তর্দৃষ্টি মিলবে এ ক্যামেরায়।
চিলিতে অবস্থিত রুবিন অবসারভেটরির ওপর ক্যামেরাটি একবার স্থাপন করা গেলে জোতির্বিদরা ‘ডার্ক ম্যাটার’-এর খোঁজে এটি ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন, যা গোটা মহাবিশ্বের ৮৫ শতাংশ জায়গাজুড়ে বিস্তৃত।
“শিগগিরই আমরা সর্বকালের সেরা সিনেমা বানানোর কাজ শুরু করব, যা হবে রাতের আকাশ নিয়ে তৈরি সবচেয়ে তথ্যবহুল মানচিত্র, ” বলেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন’-এর অধ্যাপক ও ‘রুবিন অবসারভেটরি কনস্ট্রাকশন’-এর পরিচালক জেলজকো ইভেজিচ।
রুবিন অবসারভেটরির উপ-পরিচালক অ্যারন রুডম্যানের তথ্য অনুসারে, ক্যামেরাটির রেজুলিউশন এতটাই বেশি যে এর একেকটি ছবি ফুল সাইজে দেখতে শত শত আল্ট্রা এইচডি টেলিভিশন লাগবে।
“এর ছবিগুলো এতটাই বিস্তারিত যে এটি ২৪ কিলোমিটার দূর থেকেও একটি গলফ বলের স্পষ্ট ছবি তুলতে পারে, যেখানে পূর্ণিমার আকাশের চেয়েও সাতগুণ চওড়া আকাশ ধারণ করতে পারে এটি,” বলেন অধ্যাপক রুডম্যান।
“শত শত কোটি নক্ষত্র ও ছায়াপথকে ধারণ করা এইসব ছবি মহাবিশ্বের বিভিন্ন রহস্য উন্মোচনে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।”
এ ছাড়া, এলএসএসটি ক্যামেরা ব্যবহার করে এর আগে নথিভুক্ত হয়নি এমন বিভিন্ন সুপারনোভা তারা চিহ্নিত করার পরিকল্পনা করছেন জোতির্বিদরা। এর পাশাপাশি, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি ও আমাদের নিজস্ব সৌরজগৎ বোঝার পরিসর বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এটি সহায়ক হিসেবে কাজ করবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
এমনকি ক্যামেরার ‘সেনসিটিভিটি’র সহায়তায় ছায়াপথের এমন বিস্তারিত ম্যাপ তৈরি করা সম্ভব, যা আগে কখনও দেখা যায়নি।
“স্ল্যাক’সহ বিশ্বের নানা বিজ্ঞানীই এ ক্যামেরার ডেটা থেকে মূল্যবান কিছু খুঁজে পেতে চাইবেন, ” বলেন স্ল্যাক অধীনস্থ ‘কাভলি ইনস্টিটিউট ফর পার্টিকেল অ্যাস্ট্রোফিজিক্স অ্যান্ড কসমোলজি’ ও ‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র পরিচালক রিসা ওয়েচসলার।
“মহাবিশ্বতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে খুবই মজার সময় এটি।”