টিকটকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সাবেক কনটেন্ট মডারেটর

মনস্তাত্বিক ক্ষতির অভিযোগে শীর্ষস্থানীয় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির এক সাবেক কনটেন্ট মডারেটর। ওই সাবেক কর্মীর অভিযোগ, দৈনিক ১২ ঘণ্টা করে ‘সহিংসতার’ ভিডিও কনটেন্ট দেখতে হতো তাকে এবং তার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ওই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বিরূপ প্রভাব থেকে তাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে টিকটক।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2021, 12:36 PM
Updated : 30 Dec 2021, 12:57 PM

সাবেক টিকটক কর্মী ক্যান্ডি ফ্রেজিয়ারের অভিযোগ দৈনিক ১২ ঘণ্টা করে “চরম সহিংস” ভিডিও কনটেন্ট দেখার ফলে ব্যাপকভাবে মানসিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন তিনি; অস্থিরতা, হতাশা এবং ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি)’-তে ভুগছেন তিনি।

কিন্তু টিকটকের দাবি, বরাবরই কর্মীদের জন্য “যত্নশীল কাজের পরিবেশ” প্রচারের চেষ্টা করে তারা। 

২০২১ সালে এসে বাজারের অন্যান্য শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে টিকটক। মাস প্রতি প্ল্যাটফর্মটির নিয়মিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা একশ’ কোটি ছাড়িয়েছে– সেপ্টেম্বর মাসেই ঘোষণা দিয়েছে টিকটক কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরে ইন্টারনেটে হিটের হিসাবে টিকটক গুগলকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ক্লাউডফ্লেয়ার।

প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীদের নিরাপদ রাখতে কয়েক হাজার নিজস্ব কর্মী এবং চুক্তিভিত্তিক কনটেন্ট মডারেটরদের উপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানটি।

বিবিসি জানিয়েছে, টিকটক এবং এর মূল প্রতিষ্ঠান চীনের বাইটড্যান্স, উভয়ের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছেন ফ্রেজিয়ার। তার অভিযোগ, কনটেন্ট মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় যৌন নিপীড়ন, নরখাদক, গণহত্যা, শিশু নিপীড়ন, এবং প্রাণী নির্যাতনের মতো ভয়াবহ কনটেন্ট দেখতে হতো তাকে। 

‘টেলুস ইন্টারন্যাশনাল’ নামের তৃতীয় পক্ষীয় একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করতেন ফ্রেজিয়ার। সাবেক ওই কর্মীর দাবি,  প্রতিদিন কয়েকশ’ সহিংস ভিডিও দেখতে বাধ্য ছিলেন তিনি।

ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ক্যালিফোর্নিয়ার ফেডারেল আদালতে দায়েরকৃত অভিযোগে বলছে, সহিংসতার কনটেন্টগুলোর কারণে “ব্যাপক মানসিক ক্ষতি”র শিকার হয়েছেন ফ্রেজিয়ার, যার মধ্যে আছে, “অস্থিরতা, হতাশা এবং পিটিএসডি”

মামলায় আরো উল্লেখ রয়েছে, ফ্রেজিয়ার সরাসরি টিকটকের কর্মী না হলেও “কীভাবে কনটেন্ট মডারেশনের কাজ করতে হবে তার পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করতো” টিকটক কর্তৃপক্ষ।

ফ্রেজিয়ারের অভিযোগ, এতো বেশি পরিমাণ কনটেন্ট রিভিউ করতে বলা হতো তাকে যে একসঙ্গে ১০টি ভিডিও চালিয়ে রাখতেন তিনি। এ ছাড়াও ১২ ঘন্টার শিফটের প্রথম চার ঘণ্টা পরে ১৫ মিনিটের ছুটি পেতেন কর্মীরা; এরপর থেকে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর ১৫ মিনিটের ছুটি পেতেন কর্মীরা। আর দুপুরের খাবারের জন্য এক ঘণ্টার ছুটি মিলতো কর্মীদের।

মামলায় বাদীপক্ষের অভিযোগ, সামাজিক মাধ্যম শিল্পের কনটেন্ট মডারেটরদের বেলায় প্রযোজ্য শিল্প মান বজায় রাখেনি টিকটক কর্তৃপক্ষ এবং ক্যালিফোর্নিয়ার শ্রমআইন লঙ্ঘন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

চলতি মামলা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি টিকটক কর্তৃপক্ষ। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, শিশু নিপীড়নের কনটেন্ট রিভিউ করতে হয় এমন কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে নীতিমালা তৈরির জন্য গঠিত শীর্ষ সামাজিক মাধ্যমগুলোর জোটের সদস্য টিকটক।