ইন্টারনেটে ‘নিষিদ্ধ কনটেন্ট’ স্ক্যানিং ব্যবস্থা চালু করল রাশিয়া

“ইউক্রেইনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন ‘গুজব’ এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা আগে কখনও ঘটেনি।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2023, 11:01 AM
Updated : 14 Feb 2023, 11:01 AM

ইন্টারনেটে নিজেদের বিবেচনায় বিভিন্ন নিষিদ্ধ কনটেন্ট শনাক্তে নতুন এক ব্যবস্থা চালু করেছে রাশিয়া।

দেশটির কর্মকর্তারা বলেন, ‘অকুলাস’ নামের এই ব্যবস্থা অনলাইনের বিভিন্ন পোস্টে ভিন্নমত ও এলজিবিটি প্রচারণার মতো বিষয়গুলো খুঁজে বের করবে।

রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, এটি বিভিন্ন টেক্সট পড়ার পাশাপাশি ‘অবৈধ দৃশ্য’ শনাক্তে বিভিন্ন ছবিও পরীক্ষা করতে পারে। আর দৈনিক দুই লাখের বেশি ছবি পর্যবেক্ষণে সক্ষম ব্যবস্থাটি প্রতিটি ছবি স্ক্যানিংয়ের পেছনে সময় নেয় তিন সেকেন্ড।

রাশিয়া ও অন্যান্য জায়গায় প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট কারণ নিজেদের চোখে অবৈধ ও প্রতিবাদে উস্কানিমূলক হিসেবে বিবেচিত কনটেন্ট সরাতে চান বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তারা।

সাম্প্রতিক মাসগুলোয় বেশ কিছু জায়গায় ইন্টারনেট বন্ধ ও সেন্সরশিপের মতো ঘটনা ঘটেছে। ফলে, নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক সাইটে প্রবেশে বাধা এমনকি কখনও কখনও পুরোপুরি প্রবেশাধিকার বন্ধের মতো ঘটনার সম্মুখীন হন ব্যবহারকারীরা।

ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনে সামরিক বাহিনী পাঠানোর পর থেকে মস্কো সেইসব রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও রাশিয়ার ভেতরে থাকা বিভিন্ন স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের মতামত দমন করে আসছে, যারা আগের বিভিন্ন দমন প্রচেষ্টায় টিকে গিয়েছে। আর দেশটি এমন রক্ষণশীল, জাতীয়তাদী মনোভাব প্রকাশ করেছে, ‘অপ্রচলিত’ জীবনধারা এবং অভিযোজনে যা তাদের কপালে ভাঁজ ফেলে।

রাশিয়ার যোগাযোগ ও ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা রসকমনাদজরের ‘মেইন রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি সেন্টার (এমআরএফসি)’র দেওয়া বিবৃতি প্রকাশ করেছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স। সংস্থাটি বলছে, “চরমপন্থামূলক কনটেন্ট, অবৈধ হিসেবে বিবেচিত জনসমাবেশ বা আত্মহত্যা, ড্রাগ সমর্থিত কনটেন্ট, এলজিবিটি প্রচারণার মতো অনেক বিষয়ই অকুলাস স্বয়ংক্রিয় উপায়ে শনাক্ত করতে পারে।”

“ইউক্রেইনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন ‘গুজব’ এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা আগে কখনও ঘটেনি। আর এমনটি ঘটেছে বিভিন্ন বাস্তব তথ্যের বদলে বিশেষভাবে তৈরি করানো বাস্তবতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।”

“এই সিস্টেমটি তৈরি হয়েছে বিদেশী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে উস্কানিমূলক ও রাশিয়া বিরোধী কার্যক্রমের প্রতিক্রিয়া হিসেবে।”

পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে রাশিয়ার অভিযোগ, দেশটির সামরিক বাহিনীর সম্মান নষ্ট করে তারা ইউক্রেইনের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ সম্পর্কে বিভিন্ন ভুল তথ্য ছড়ানো কনটেন্টের প্রচারণা চালাচ্ছে।

গত বছর রাশিয়া এই ধরনের তথ্য ছড়ানো ব্যক্তিদের ওপর জরিমানা আরোপের পাশাপাশি বিভিন্ন এমন সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদ সাইট বন্ধে নতুন আইন পাশ করেছে, যেগুলো মস্কো বিরোধী কনটেন্ট শেয়ার করে।

এমনকি রাশিয়ার বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলও রাষ্ট্রায়ত্ত। আর এগুলোর দেশের সরকারের মনোভাব অনুসরণের কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

আরেক নতুন আইনে দেশীয় বিভিন্ন এমন ব্যক্তি বা সংস্থার ওপর জরিমানার বিধান রয়েছে, যেগুলো এলজিবিটি প্রচারণা চালায়। সমালোচকদের মতে, এই পদক্ষেপ লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের সম্পর্কে জনসম্মুখে কথা বলতে বাধা দেয়। দেশটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ‘অপ্রচলিত’ জীবনধারা হিসেবে বিবেচিত।

এই প্রসঙ্গে ইন্ডিপেন্ডেন্ট এমআরএফসি’র মন্তব্য জানতে চাইলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।