‘অদৃশ্য’ ত্বক ক্যান্সার শনাক্ত করবে ‘স্কিনোমিটার’

“সে সময় যদি এমন একটি স্ক্যানার থাকত, তাহলে সমস্যাটি সঙ্গে সঙ্গেই শনাক্ত করা যেত। আমার বেলায় ভেতরে ছড়ানোয় বাইরে থেকে অতটা বড় দেখায়নি।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2022, 02:07 PM
Updated : 2 Oct 2022, 02:07 PM

খালি চোখে দেখা যায় না ত্বকের এমন ক্যান্সার শনাক্ত করতে সক্ষম এক স্ক্যানার উদ্ভাবন করেছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা। তারা এর নাম দিয়েছেন ‘স্কিনোমিটার’।

যুক্তরাজ্যের ‘ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটি’র বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত এই স্কিনোমিটারের লক্ষ্য ত্বকের ভেতর ক্যান্সার কতদূর পর্যন্ত ছড়িয়েছে সেটি শনাক্ত করা।

‘ইউনিভার্সিটি হসপিটালে ত্বক-ক্যান্সার-রোগীদের নতুন এই প্রযুক্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহনে এখন উৎসাহ দিচ্ছেন গবেষকরা।

হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ও প্লাস্টিক সার্জন অধ্যাপক জো হার্ডউইক এই প্রকল্পকে ‘বেশ রোমাঞ্চকর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন – প্রতিবেদনে বলেছে ‘স্কাই নিউজ’।

“ত্বকের ভেতর থাকতে পারে এমন কিছু ক্যান্সার সেল, যা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। ফলে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেগুলো সরানোর সময় কখনও কখনও এর কিছু অংশ ভেতরে থেকেও যায়।” --ব্যাখ্যা করেন তিনি।

“এই প্রযুক্তির ইতিবাচক দিক হলো, অস্ত্রোপচারে আগের তুলনায় নির্ভুলতা বাড়ার পাশাপাশি প্রথম চেষ্টাতেই অনেক বেশি ক্যান্সার সেল সরিয়ে ফেলতে পারব আমরা।”

স্কাই নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোগীর শরীর থেকে সকল ক্যান্সার সেল সরেছে কি না, তা নিশ্চিত করতে ত্বকের একাধিক নমুনা পরীক্ষা করতে হয়। আর, এই স্ক্যানারের ব্যবহারে অস্ত্রোপচারের সময়ও ব্যপক হারে কমে আসবে।

২০১৩ সালে নিজ বাহুর ওপরের অংশে একটি সাদা রঙয়ের অস্বাভাবিক ‘পিণ্ড’ দেখতে পান হিদার নরগ্রভ। অপরেশন করে সেটি সরানোর ছয় মাস পর আগের চেয়েও বড় আকারে ফিরে আসে এটি।

পরপরই তার শরীরে ধরা পড়ে ‘মেলানোমা’ নামে ত্বকের ক্যান্সার। এর চিকিৎসা হচ্ছে, অপারেশন করে এটি কেটে ফেলা এবং স্কিন গ্রাফটিং বা ত্বক প্রতিস্থাপন করা।

“সে সময় যদি এমন একটি স্ক্যানার থাকত, তাহলে সমস্যাটি সঙ্গে সঙ্গেই শনাক্ত করা যেত।” --বলেন তিনি।

“আমরা জানতে পারতাম ক্যান্সার কতটা মারাত্মক হয়েছে। আমার বেলায় এটি ভেতরের ছড়ানোয় বাইরে থেকে অতটা বড় দেখায়নি।”

তার ভাষ্যমতে, অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীদের ‘দীর্ঘ ও বিরক্তিকর অপেক্ষা’ বন্ধ করবে এই স্ক্যানার। চিকিৎসাও আগের চেয়ে দ্রুত শুরু করা যাবে।

স্কাই নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোক বর্ণালী থেকে টেরাহার্টজ কম্পাঙ্কের তরঙ্গ ব্যবহার করে এই স্কিনোমিটার, যা ত্বক পৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয়। প্রতিফলিত ওই আলো বিশ্লেষণ করে ত্বকের ভেতর ক্যান্সার কতদূর ছড়িয়েছে সে ধারণা পাওয়া যায়।

এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটি’র পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এমা ম্যাকফার্সন।

“এ বিষয়ে আমরা বিশ্বের প্রথম ডেটা সংগ্রহ করে দেখানোর চেষ্টা করছি যে এটি কাজ করবে। আর ক্যান্সার নির্ণয়ের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি এর চিকিৎসার সময়ও কমিয়ে আনতে পারব আমরা।” --বলেন তিনি।

“যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর প্রায় ১৬ হাজার নতুন ত্বক ক্যান্সারের ঘটনা ধরা পড়ায় আমাদের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবায় (এনএইচএস) এর প্রভাব পড়ে। আমরা যদি এই প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে পারি তবে অনেকাংশে চাপমুক্ত হওয়ার পাশাপাশি ‘এনএইচএস’-এর খরচও কমিয়ে দেবে এটি।”

আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে স্কিনোমিটার ব্যবহার শুরুর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রচলিত সার্জারির ক্ষেত্রেও এর গ্রহযোগ্যতা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।

কোলন ক্যান্সার শনাক্তে এর সহায়তার সম্ভাবনার কথাও উঠে এসেছে স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে। এ ছাড়া, নির্ভুলভাবে আর্দ্রতার মাত্রা পরিমাপের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ত্বকের জন্য বিশেষ ‘সান ক্রিম’ তৈরিতেও ব্যবহৃত হতে পারে এটি।

হিদারের ভাষ্যমতে, এই পদ্ধতিই হয়তো সকল পার্থক্য তৈরি করে দিতে পারে। শরীরে ক্যান্সার ছড়ানোর পর দীর্ঘ চিকিৎসার মধ্য দিয়ে গেছেন তিনি।

তিনি আরও বলছেন, ভবিষ্যতে অন্য রোগীদের সাহায্য করতে স্বেচ্ছাসেবী ত্বক ক্যান্সার রোগীদের এই গবেষণায় অংশগ্রহন ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’।

গবেষণা সংস্থা ‘ক্যানসার রিসার্চ ইউকে’র সমর্থনে প্রকল্পটির খরচ বহন করেছে ‘ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ফিজিকাল সায়েন্সেস রিসার্চ কাউন্সিল’।