কোম্পানিটির সিইও রেনুকা রামানুজাম একজন সাবেক টেক্সটাইল শিক্ষার্থী, যিনি প্রথমে পেঁয়াজের খোসাকে কাপড় বোনার উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন।
Published : 11 Oct 2024, 05:15 PM
কার্বন নিঃসরণের পাশাপাশি বর্জ্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে পেঁয়াজের খোসা দিয়ে পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিংয়ের নতুন উপায় তৈরি করেছে স্কটিশ এক স্টার্টআপ কোম্পানি।
স্কটল্যান্ডের ওপবান শহরে অবস্থিত এ কোম্পানির নাম ‘হুইড’, যা চামড়া বা ত্বকের ডাচ শব্দ। কোম্পানিটির সিইও রেনুকা রামানুজাম একজন সাবেক টেক্সটাইল শিক্ষার্থী, যিনি প্রথমে পেঁয়াজের খোসাকে কাপড় বোনার উৎস হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।
৩০ বছর বয়সী রামানুজামের কোম্পানি কৃষক ও বিভিন্ন কৃষি ব্যবসার ফেলে দেওয়া পেঁয়াজের খোসাকে নিজেদের ব্যবসার উৎস হিসেবে ব্যবহার করছে। পাশাপাশি, তারা কার্ডবোর্ড ধাঁচের একটি উপাদান এমনকি ‘ফ্লেক্সিবল ফিল্ম’ প্যাকেজিং ব্যবস্থার বিকল্প তৈরি করছে বলে উঠে এসেছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে।
তাদের এ ব্যবসায় সমর্থন করেছে স্কটল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারিং ইনস্টিটিউট স্কটল্যান্ড’।
পেঁয়াজের খোসায় জীবাণুরোধী বৈশিষ্ট্য আছে। এর মানে, এর থেকে তৈরি প্যাকেজিং ব্যবস্থা পচনশীল খাবারের স্থায়িত্ব বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং ব্যবস্থা তৈরির ক্ষেত্রে পেঁয়াজের বাইরের খোসা থেকে উচ্চমানের ‘সেলুলোজ’ বের করতে হয়, যার সঙ্গে একটি বায়োপলিমার মিশ্রণ যোগ করা লাগে।
পলিমার আসলে দীর্ঘ চেইনওয়ালা অণু, যা ছোট ছোট এইরকম ইউনিট সারিবদ্ধভাবে মিলে তৈরি হয়। আর বায়োপলিমার হল প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও চর্বিজাতীয় বিভিন্ন উৎস থেকে তৈরি করা পলিমার।
হুইডের লক্ষ্য, যুক্তরাজ্যে বর্জ্যের পরিমাণ কমিয়ে আনা, যেখানে দেশটির বাসাবাড়ি থেকে বছরে আনুমানিক নয় হাজার কোটি প্লাস্টিকের প্যাকেজিং পরিতত্যাক্ত হয়।
“আমি এটি নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেছিলাম নিজের বেডরুমের মেঝেতে,” বলেন রামানুজাম।
“খাবার গরম করার সময় প্লাস্টিক থেকে বিভিন্ন রাসায়ণিক ছড়িয়ে পড়ে। আমি এর জন্য এমন সমাধান খুঁজেছি, যেখানে কোনো বাড়তি খরচ হবে না।”
“ধরুন, আপনার যে কোনো খাবারে অল্প পরিমাণে হলেও পেঁয়াজ থাকে। বিভিন্ন কুইজিন বা রন্ধনপ্রণালীতে গোটা বিশ্বেই পেঁয়াজের বহুল ব্যবহার রয়েছে। আর যেহেতু এটা সবখানে আছে, তাই এর বর্জ্যও সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে।”
২০২১ সালে এক বন্ধুর আমন্ত্রণে লন্ডন থেকে ওবান শহরে পাড়ি জমিয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডাচ নাগরিক রামানুজাম।
“আমি লন্ডনের সবার সঙ্গেই যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, তবে কোনো সাড়া পাইনি,” বলেন তিনি।
“তাই আমি ওবানেই থেকে যাই কারণ এখানকার কমিউনিটি খুবই শক্তিশালী।”
তিনি আরও যোগ করেন, কোম্পানির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ম্যারি রাপিনকে নিয়োগ দেওয়ার পর থেকে তার কাজের গতি বেড়েই চলেছে।
রাপিন এখন একটি ফ্লেক্সিবল ফিল্ম প্যাকেজিং ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছেন, যা শাকের মতো খাদ্যসামগ্রীর জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিক ব্যাগের জায়গা নিতে পারে।
“এ মুহুর্তে, এর বিভিন্ন প্রোটোটাইপ একেবারে স্বচ্ছ ও আমাদের ধারণার চেয়ে সামান্য মোটা,” বলেন তিনি।
“আমরা ডিমের কার্টনের মতো পণ্য তৈরির বিভিন্ন উপায়ও খুঁজে দেখছি।”
আগামী বছর নিজেদের প্রথম পণ্য অর্থাৎ পুরোপুরি পেঁয়াজের খোসা থেকে তৈরি কাগজ বাজারে আনার লক্ষ্য নিয়েছে এ যুগল।
এর পাশাপাশি, তাদের তৈরি পেঁয়াজের খোসার প্যাকেজিং কার্ডবোর্ড কাগজের প্যাকেজিং ব্যবস্থার জায়গা নেবে বলে আশা করছেন রামানুজাম।
“পরিবেশের জন্য গাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এরা বিভিন্ন প্রাণীকে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি কার্বণও ধারণ করে,” বলেন তিনি।
“কিন্তু পেঁয়াজের ওপর ওই দায়িত্ব বর্তায় না। ফলে, আমাদের উপাদান গাছ বাঁচানোয় সহায়ক।”
রামানুজাম আশা করছেন, তার প্যাকেজিং ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকবে।
“সুরক্ষা বা খরচ, যাই হোক না কেন, আমাদের সবসময় এর দরকার হবে,” বলেন তিনি।
“এটা যেন সেরা উপায়ে বানানো সম্ভব হয়, আমরা সেটি নিশ্চিত করতে চাই।”
ন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারিং ইনস্টিটিউট স্কটল্যান্ডের একজন মুখপাত্র বিবিসি’কে বলেন, কোম্পানিটি ছোট এবং মাঝারি ব্যবসার জন্য এমন সব টেকসই সমাধানে চ্যাম্পিয়ন, যেগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বা যন্ত্রপাতি হয়ত কোম্পানিগুলোর কাছে নেই।