এ অভিযানে রাশিয়ার সয়ুজ রকেট ব্যবহারের কথা থাকলেও যুদ্ধ বদলে দিয়েছে সব।
Published : 21 Oct 2022, 05:52 PM
রাশিয়ার ‘দুর্দিনে’ রহস্যময় ডার্ক ম্যাটারের খোঁজে মহাকাশে অনুসন্ধানকারী টেলিস্কোপ পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব বর্তেছে স্পেসএক্সের ঘাড়ে।
সয়ুজ রকেটর বদলে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সিসের (ইএসএ) ‘ইউক্লিড স্পেস টেলিস্কোপ’ আর ‘হেরা প্রোব’কে মহাকাশে নিয়ে যাবে স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেট।
ইউক্লিড টেলিস্কোপ এবং নাসার ‘ডার্ট’ মিশনের উত্তরসূরী হিসেবে পরিচিত হেরা প্রোবকে মহাকাশে পাঠাতে রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমসের সঙ্গে চুক্তি করে রেখেছিল ইএসএ। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে মহাকাশযান দুটির অভিযান শুরু হওয়ার কথা ছিল রাশিয়ার সয়ুজ রকেটে চড়ে।
কিন্তু, ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের দৃশ্যপটে সিদ্ধান্ত পাল্টেছে ইএসএ। রাশিয়া ইউক্রেইনে সামরিক আগ্রাসন শুরু পরার পর সম্পর্কে নতুন টানাপোড়েন শুরু হয়েছে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মধ্যে। তার জেরে ইএসএ রসকসমসের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে স্পেসএক্সের সঙ্গে জোট বাঁধছে বলে জানিয়েছে স্পেস ডটকম।
রসকসমসের বদলে স্পেসএক্সের সঙ্গে জোট বাঁধার ঘোষণা দিয়েছেন খোদ ইএসএ প্রধান জোসেফ অ্যাশবাখার।
“আজকে ইউক্লিড, আর্থকেয়ার এবং হেরা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি; আমরা সদস্য দেশগুলো ইউক্লিড এবং হেরা ফ্যালকন ৯ রকেটে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছি এবং আর্থকেয়ার লঞ্চ করা হবে ভেগা সি রকেটে।”
ইউরোপের জলবায়ু পর্যবেক্ষণ প্রকল্প ‘কোপারনিকাস’-এর অংশ হিসেবে পৃথিবীকে ঘিরে চক্কর দিতে থাকবে আর্থকেয়ার স্যাটেলাইট। সয়ুজ রকেটের বদলে স্যাটেলাইটটি বহন করবে আরিয়ানস্পেসের ভেগা সি রকেট।
স্পেস ডটকম জানিয়েছে, এ ঘোষণার পেছনে রয়েছে ইউক্রেইনে আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার ওপর অবরোধ-নিষেধাজ্ঞা আরোপের জেরে রাশিয়ার সঙ্গে ইএসএর সম্পর্কের অবনতি।
ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পরেও অ্যাশবাখার বলেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে ইএসএ। তবে সে সময়ই এ বিষয়ে নিজেদের সংশয়ের কথা জানিয়েছিলেন নীতি নির্ধারকরা। সে শঙ্কাই সত্যি হল বলে মন্তব্য করেছে স্পেস ডটকম।
বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে ইউক্লিড স্পেস টেলিস্কোপ
ইউক্লিড, হেরা আর আর্থকেয়ার – এই তিন প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ইউক্লিড স্পেস টেলিস্কোপ। এই টেলিস্কোপটি নির্মাণ করা হয়েছে মহাবিশ্বের ‘ডার্ক ম্যাটার’ পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে।
মহাকাশ গবেষকদের কাছে মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত ডার্ক ম্যাটার। নাসার ব্যাখ্যা বলছে– আলো শোষণ করে না, প্রতিফলিত হয় না এবং আলো নির্গত হয় না এমন অণু একত্র হয়ে ডার্ক ম্যাটার গঠন করে।
আলোর সঙ্গে এমন বিপরীতমুখী সম্পর্কের কারণে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনও চিহ্নিত করা যায় না, চোখেও দেখা যায় না ডার্ক ম্যাটার। কিন্তু আশপাশের বস্তুর ওপর এর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা যায়।
মহাকাশ গবেষকদের ধারণা, মহাবিশ্বের পরিধি ক্রমাগত বৃদ্ধির পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে ডার্ক ম্যাটার।
আর এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যেই ইউক্লিড স্পেস টেলিস্কোপ বানিয়েছে ইএসএ। ২০২০ সালেই টেলিস্কোপটি মহাকাশে যাওয়ার কথা থাকলেও, নানা কারণে উৎক্ষেপণের সময়সূচি পিছিয়ে ২০২৩ সাল নির্ধারণ করেছিল ইএস।
পৃথিবী থেকে মহাকাশের গন্তব্যস্থল ‘ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট’-এ পৌঁছাতে ইউক্লিডের সময় লাগবে ৩০ দিন; ওই অঞ্চলটিতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি স্থিতিশীল।
ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্টের ‘এল২’-তে অবস্থান নেবে ইউক্লিড, পৃথিবী থেকে যার দূরত্ব প্রায় ১০ লাখ মাইল। পৃথিবী, সূর্য আর চাঁদ থাকবে টেলিস্কোপটির পেছনে; সূর্য থেকে সরাসরি আসা আলোর অনুপস্থিতিতে ডার্ক ম্যাটারের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করবে ইউক্লিড।