শারীরিক সুস্থতার শীর্ষে থাকা মানুষদের মধ্যে মহাকাশচারীরা অন্যতম। তবে যখন সাধারণ লোকজন মহাকাশে পর্যটক হিসেবে ঘুরতে যাবেন, তখন কী ঘটতে পারে?
Published : 27 Jun 2024, 02:58 PM
নভোচারীরা অনেকের কাছেই এমন বিশেষ অভিজাত গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত, যারা অনেক স্বাস্থ্যবান, শারীরিকভাবে ফিট ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারদর্শী।
তবে মহাকাশ ভ্রমণের সময় তারাও বিভিন্ন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় পড়তে পারেন, যার মধ্যে রয়েছে হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া থেকে শুরু করে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা এমনকি ওজনহীনতাও।
শারীরিক সুস্থতার শীর্ষে থাকা মানুষদের মধ্যে মহাকাশচারীরা অন্যতম। তবে যখন সাধারণ লোকজন মহাকাশে পর্যটক হিসেবে ঘুরতে যাবেন, তখন কী ঘটতে পারে?
স্বাস্থ্য সমস্যা আছে এমন যে কেউ মহাকাশে গেলে তার অবস্থা খারাপ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। নতুন এক গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, যাদের ‘কার্ডিওভাসকিউলার’ বা হার্টের সমস্যা রয়েছে মহাকাশে তাদের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে!
মহাকাশ ভ্রমণ ও স্বয়ংক্রিয় বুদ্ধিমত্তা (এআই) এ দুটি বিষয়ই রোমাঞ্চকর। প্রশ্ন হলো, এ দুটি বিষয়কে সমন্বিত করলে ফল কী দাঁড়ায়।
সেই লক্ষ্যে, মানব দেহতত্ত্ব ও মহাকাশ অনুসন্ধানের প্রভাব খুঁজে দেখতে এআই ও গাণিতিক মডেল ব্যবহার করেছেন ‘অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র গবেষক ড. লেক্স ভ্যান লুন।
সাম্প্রতিক এ গবেষণায় তিনি স্বয়ংক্রিয় বুদ্ধিমত্তার দুটি জমজ ডিজিটাল সংস্করণ তৈরি করেন, যার মধ্যে একটিতে তিনি জুড়ে দিয়েছেন হার্টের সমস্যা।
এই গবেষণার পেছনে এত আগ্রহের কারণ হল, মহাকাশ পর্যটনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও যারা নভোচারীদের মতো শারীরিকভাবে অতটা ফিট নন, মহাকাশ যাত্রাকে তাদের আরও কাছে নিয়ে আসা।
গড়পড়তা সবার জন্য মহাকাশ ভ্রমণ একটি স্বাভাবিক বিষয় করে তোলা গেলে, তখন নতুন একটি সমস্যা সামনে এসে দাঁড়াবে। কারণ, বয়স্ক ও ধনী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এমনকি পরবর্তীতে গিয়ে একাধিক শারীরিক ঝুঁকি থাকা ব্যক্তিদেরও মহাকাশে ছুটি কাটাতে দেখা যেতে পারে। তখন সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো কী?
মহাকাশে ‘মাইক্রোগ্র্যাভিটি’র কারণে অভিযাত্রীর শরীরের চারপাশে তরল ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে ‘পাফি ফেইস বার্ড লেগ সিন্ড্রোম’-এর মতো রোগের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এতে করে মুখ ফুলে যাওয়ার পাশাপাশি পা’ও শুকিয়ে যেতে পারে।
এর ফলে, মানবদেহের ওপরের অংশের শিরায় চাপ বেড়ে যেতে পারে, যা সুস্থ-সবল মানুষের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক বিষয় হলেও হার্ট ফেইলিওরে আক্রান্ত মানুষের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশ্বে ১০ কোটির বেশি মানুষ হার্ট ফেইলিওরে ভুগছেন, তাই মহাকাশে এর সম্ভাব্য প্রভাব খুঁজে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইউনিভার্স টুডে।
হার্ট ফেইলিওরের নানা ধরন আছে। এর মধ্যে দুটি ধরনের উল্লেখ করেছেন গবেষক। একটি হচ্ছে দুর্বল হৃদযন্ত্র, যেটি রক্ত ঠিকঠাক পাম্প করতে পারে না। আরেকটি হচ্ছে বিরামহীনভাবে কাজ করে, তবে যথেষ্ট রক্ত ধমনীতে পাঠাতে পারে না। মহাকাশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে এমন রোগগুলোর চিকিৎসা ও এর বিভিন্ন ঝুঁকি কমিয়ে আনার সব ধরনের সম্ভাব্য উপায় গবেষণা করা দরকার।
তবে এ গবেষণার জন্য মহাকাশে গিয়ে সত্যিকারের তথ্য সংগ্রহ করা জটিল বিষয়। তাই এর বিভিন্ন প্রভাব খতিয়ে দেখতে কম্পিউটার মডেলিংয়ের আশ্রয় নিয়েছেন গবেষকরা।
ড. লুনের নেতৃত্বাধীন গবেষণা দলটি দেখেছে, মাইক্রোগ্র্যাভিটির মতো পরিবেশে মানুষের ‘কার্ডিয়াক আউটপুট’ অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে হৃদপিণ্ডে পাম্প হওয়া রক্তের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
বেশিরভাগ মানুষের কাছে এটি সমস্যা না হলেও হার্ট ফেইলিওর রোগীর ক্ষেত্রে এটি হৃৎপিণ্ডের বাম অলিন্দের চাপ ব্যাপক বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে, রোগীর শারীরিক অবস্থাও সঙ্গে সঙ্গে খারাপ হয়ে যাবে।
সে সময় রোগীর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা না করলে এটি তাকে এমন অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে, যেখানে ‘পালমোনারি এডিমা’ অর্থাৎ ফুসফুসে তরল জমে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। ফলে, তার শ্বাস নেওয়াও জটিল হয়ে উঠবে।
কর্পোরেট খাতে মহাকাশ ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায়, মহাকাশ পর্যটন ব্যবস্থাও ধীরে ধীরে বাস্তব রূপ নিচ্ছে। কেউ কেউ এরইমধ্যে মহাকাশে ভ্রমণের পেছনে অর্থ ঢালতে শুরু করেছেন। আর ভবিষ্যতে ভ্রমণের খরচ কমে এলে মহাকাশে পাড়ি জমানো মানুষের সংখ্যাও বেড়ে যাবে।
সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক এগোলে শেষমেষ অন্য কোনো দেশে ভ্রমণ করার মতোই সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে মহাকাশ ভ্রমণ।