প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার সঙ্গে ছোট হয়ে আসছে গ্যাজেট। কারণ, আকারে ছোট ফোন বা ল্যাপটপে এখন তুলনামূলক বেশি ব্যাটারি, প্রসেসিং পাওয়ার ও মেমোরি ‘আঁটানো’ যায়।
Published : 06 Nov 2022, 06:40 PM
‘সুইচ’ কনসোল উন্মোচনের মাধ্যমে ‘হ্যান্ডহেল্ড হাইব্রিড’ গেইমিং খাতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছিল নিনটেনডো। তবে, এখন অন্যান্য ডিভাইসে এর চেয়েও ভালো মানের কনসোল অভিজ্ঞতা মিলছে। এর কিছু কিছু হার্ডওয়্যারনির্ভর আর বাকিগুলো স্ট্রিমিং সেবার মাধ্যমে।
আকারে বড় হচ্ছে ভিডিও গেইম কনসোল
প্লেস্টেশন ৫-এর মূল সংস্করণের ওজন সাড়ে চার কেজি, যা তার পূর্বসূরীর প্রায় দ্বিগুণ (দুই দশমিক আট কেজি)।
‘এক্সবক্স সিরিজ এক্স’ আকারে এতটাই বড় ছিল যে ইন্টারনেটে অনেকেই মজা করে একে একটি মিনি-ফ্রিজের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এর ফলে, আসলেই একটি ‘কনসোল-আকারের’ মিনি-ফ্রিজ বানিয়েছিল মাইক্রোসফট।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাইনিউজ প্রতিবেদনে লিখেছে, প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার সঙ্গে এটি এমনিতেই ছোট হয়ে গেছে। কারণ, আকারে ছোট ফোন বা ল্যাপটপে এখন তুলনামূলক বেশি ব্যাটারি, প্রসেসিং পাওয়ার ও মেমোরি ‘আঁটানো’ যায়।
ভিডিও গেইমের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য।
২০২১ সালে দ্রুততম সময়ে ১০ কোটি ইউনিট বিক্রি হওয়া হোম কনসোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছে নিনটেনডো।
“গেইম কনসোলটি ব্যবহার করা যায় প্রচলিত টিভি কনসোল হিসাবেও। বাজারে আসার পরপরই এটি এতো জনপ্রিয়তা পায় যে, নিনটেনডো চাহিদা অনুসারে উৎপাদন করেও কুলিয়ে উঠতে পারছিল না।” --প্রতিবেদনে লিখেছে স্কাইনিউজ।
এখন পোর্টেবল গেইমিংয়ের বাজারে এসেছে স্টিম ডেকের মতো বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী, যারা তুলনামূলক ভালো গ্রাফিক্স কার্ড, স্টোরেজ ও প্রসেসর যোগ করছে তাদের পণ্যে।
গেল গ্রীষ্মে ‘পোর্টেবল পিসি’ বাজারে এনেছে ‘আয়া’। চীনা এই কোম্পানির ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস ‘নিও এয়ার প্রো’-তে আছে ৩০ জিবি পর্যন্ত র্যাম, ভালো ব্যাটারি টাইম ও বাজারের সর্বশেষ জনপ্রিয় বিভিন্ন গেইম খেলার মতো শক্তিশালী গ্রাফিক্স কার্ড।
ডিভাইসটি পরীক্ষা করে স্কাইনিউজ বলছে, এতে সেকেন্ড প্রতি ৬০ ফ্রেইমের তুলনামূলক কম গ্রাফিক্স সেটিংয়ে ‘ওভারওয়াচ’, ‘কল অফ ডিউটি’ ও ‘ফিফা’র মতো গেইমগুলো ভালভাবেই চলে।
এতে ইউএসবি-সি পোর্ট থাকার ফলে কিবোর্ড, মাউস ও মনিটর লাগিয়ে একে একটি ‘গেইম বয়’ থেকে ‘ডেস্কটপ গেইমিং পিসি’তে পাল্টে ফেলা সম্ভব।
‘ভিডিও গেইমের নেটফ্লিক্স’ কি আসবে?
গেইমিং খাতের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ চলছে মোবাইল ফোন জগতেও।
গেইম স্ট্রিমিংয়ে বিষয়টি অনেকটা নেটফ্লিক্সের মতোই। এর মাধ্যমে মাঝারি মানের স্মার্টফোনেও বাজারের সবচেয়ে ভালো গ্রাফিক্স থাকা গেইমগুলো খেলা সম্ভব।
আইফোনে এতোদিন ‘ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যান’ বা ‘ফার্মভিলের’ মতো বিভিন্ন ক্লাসিক গেইম খেলার প্রচলন থাকলেও, এখন ৫জি সংযোগ থাকলেই প্লেস্টেশন বা এক্সবক্সের বিভিন্ন গেইম খেলা যায় এতে।
ইন্টারনেটে গেইমারদের সমর্থিত বিভিন্ন গেইম খেলার সুযোগ দেয় এক্সবক্স, প্লেস্টেশন ও গুগলের (এখন পর্যন্ত) ক্লাউড স্ট্রিমিং সেবা।
অপো’র ফ্ল্যাগশিপ ফোল্ডিং স্মার্টফোন ‘ফাইন্ড এন’-এ ইনস্টল থাকা এক্সবক্সের ক্লাউড স্ট্রিমিং অ্যাপ চালিয়ে স্কাই নিউজ বলছে, এর গেইমিং অভিজ্ঞতা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে।
“ঝামেলাহীন ‘ডাবল ই’ ৫জি সংযোগ ব্যবহার করে আমরা ‘ফোর্জা হরাইজন ৫’ গেইমটি চালাতে পেরেছি। এই গেইমটি খেলতে গেলে গ্রাফিক্সের কারণে অন্য গেইমের চেয়ে বেশি ক্ষমতার হার্ডওয়্যার লাগে।” --প্রতিবেদনে লিখেছে স্কাই নিউজ।
গুগল সম্প্রতি স্টেডিয়া সেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। গেইম স্ট্রিমিংয়ে এটা একটা আঘাত অবশ্যই। গেইমারদের মনোযোগ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়ে এই সিলিকন ভ্যালি জায়ান্ট।
গেইমিংয়ের ভবিষ্যত ক্লাউডেই
“বেশ কিছু সময় ধরেই বোঝা যাচ্ছিল কোনো এক সময় গুগলের স্টেডিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তবে, মূল প্রশ্ন ছিল, সেটি কবে?” --স্কাই নিউজকে বলেছেন ভিডিও গেইম নির্মাতা ‘নো মোর রোবটস’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও গেইম প্রকাশক মাইক রোজ।
সম্প্রতি, ‘সকার স্টোরি’ নামের একটি গেইমের স্টেডিয়া সংস্করণ সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হন তিনি।
“ক্লাউড গেইমিং যে ভিডিও গেইম খাতের ভবিষ্যত হবে, তা নিয়ে আমি অনেক আত্মবিশ্বাসী।”
রোজ আরও বলেছেন, এক্সবক্সের মতো বিভিন্ন ক্লাউড সেবা টিকে যেতে পারে কারণ তারা বেশি সুবিধা দেয়।
“স্টেডিয়ার সমস্যা ছিল, এটি একেবারে নতুন একটি স্টোর শুরু করতে চেয়েছিল যা দর্শকের মধ্যে ধীরে ধীরে ক্লাউড গেইমিংয়ের গ্রহনযোগ্যতা বাড়ানোর পরিবর্তে সম্পূর্ণভাবে ক্লাউড সেবার ওপর মন দিতে বলছিল।” --বলেন তিনি।
আস্থা থাকার কারণেই, মাইক্রোসফটের ‘এক্সক্লাউড’ সেবায় আগামী এক বছরে প্রায় আধা ডজন গেইম আনবে ‘নো মোর রোবটস’।
“নেটফ্লিক্সের মতো দেখতে এইসব ক্লাউড গেইমিং সেবা দর্শকরা কতো দ্রুত গ্রহণ করবে, তা নির্ভর করবে এই ধরনের অবকাঠামোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় কি না, সেটির ওপর।” --প্রতিবেদনে লিখেছে স্কাই।