“এটা অনেকটা ১৯৩০ সালে কাউকে ‘টার্বো জেট’ সুরক্ষার কথা জিজ্ঞেস করার মতো বিষয়। সে সময় টার্বো জেট আবিষ্কৃত হয়নি। একইভাবে মানবীয় স্তরের এআই এখনও উদ্ভাবিত হয়নি।”
Published : 16 Jun 2023, 11:41 AM
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশ্ব দখল করে ফেলবে না বা চাকরির বাজার ছিনিয়ে নেবে না- এমনই ভরসা দিচ্ছেন এআই’র তিন গডফাদারের একজন।
এআই মানবতার জন্য হুমকিস্বরূপ – কয়েকজন বিশেষজ্ঞের এমন ভয়কেও ‘পুরোপুরি হাস্যকর’ বললেন মেটা বিজ্ঞানী ইয়ান লেকান।
তিনি বলেন, “কম্পিউটার মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান হয়ে উঠতে এখনও অনেক বছর বাকি। আর আপনার কাছে অনিরাপদ মনে হলে এটা তৈরি না করলেই পারেন।”
সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকারের এক উপদেষ্টা বিবিসিকে বলেন, কিছু সংখ্যক ক্ষমতাধর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থাকে নিষিদ্ধই করা উচিৎ।
২০১৮ সালে এআই খাতে অবদান রাখায় জেফ্রি হিনটন ও ইয়োশুয়া বেনজিও’র সঙ্গে যৌথভাবে ‘টিউরিং অ্যাওয়ার্ড’ জেতেন লেকান। এর পর থেকেই তারা সবাই ‘এআই গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
বর্তমানে ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মালিক কোম্পানি মেটার প্রধান এআই বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করছেন অধ্যাপক লেকান। তবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবজাতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, বাকি দুই এআই গডফাদারের এমন মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন তিনি।
“এআই কি বিশ্ব দখলে নেবে? না। এটা কেবল মানুষের আচরণ মেশিনের মাধ্যমে চালানোর ঘটনা।” তিনি আরও যোগ করেন, এআই গবেষণায় ‘তালা-চাবি দেওয়া হবে মারাত্মকরকমের ভুল।
লেকানের যুক্তি, এআই মানুষের জন্য ঝুঁকি হতে পারে, এমন ভয় পাওয়া ব্যক্তিরা এটি ভেবে দেখেননি যে একে কীভাবে নিরাপদ করে তোলা যায়।
“এটা অনেকটা ১৯৩০ সালে কাউকে ‘টার্বো জেট’ সুরক্ষার কথা জিজ্ঞেস করার মতো বিষয়। সে সময় টার্বো জেট আবিষ্কৃত হয়নি। একইভাবে মানুষের পর্যায়ের এআই এখনও উদ্ভাবিত হয়নি।”
টার্বো জেটকে পরবর্তীতে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ করা হয়; এআই’র বেলায় এমনটিই ঘটবে বলে মনে করেন তিনি।
বিশাল এক এআই গবেষণা প্রকল্প আছে মেটার। আর মানুষের মতো সক্ষমতা থাকা বুদ্ধিমান ব্যবস্থা তৈরি এর অন্যতম লক্ষ্য। গবেষণার পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন ক্ষতিকারক পোস্ট শনাক্তেও কোম্পানি এটি ব্যবহার করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
আমন্ত্রিত সংবাদকর্মীদের সামনে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক লেকান, বিষয় ছিল তার ভাষায় ‘অবজেক্টিভ ড্রিভেন এআই’ নিয়ে তার কার্যক্রম। তার লক্ষ্য, এমন এক নিরাপদ ব্যবস্থা তৈরি করা যা বিভিন্ন বিষয় মনে রাখার পাশাপাশি যুক্তি দেখাতে, পরিকল্পনা করতে ও সাধারণ জ্ঞান ধারণ করতে পারে। তবে, চ্যাটজিপিটির মতো জনপ্রিয় চ্যাটবটে এখনও এমন সুবিধা আসেনি।
তিনি বলেন, এআই মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে, ওই পর্যায়ে পৌঁছানোর পর্যাপ্ত ধারণা এখনও গবেষকদের কাছে আসেনি। এটা আসতে দশক না হলেও অন্তত কয়েক বছর তো লাগবেই।
ভবিষ্যতে সম্ভাব্য মানুষের পর্যায়ের বা এর চেয়ে উন্নত মেশিন নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, তার ভাষায় সেটি আসলে ‘আর্টিফিসিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (এজিআই)’ নিয়ে উদ্বেগ, যা মানুষের মতোই নানা ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে পারে।
এজিআই’র মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এমন এক ‘সুপার-ইন্টেলিজেন্ট’ ব্যবস্থা চালু করতে পারেন যা কয়েক মিনিটেই গোটা বিশ্ব দখল করতে পারে, এমন ভীতির কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
“আসলে, এটা খুবই হাস্যকর।”
বিবিসি নিউজের এক প্রশ্নের জবাবে লেকান বলেন, এই ব্যবস্থায় কার্যকর অগ্রগতি দেখা যাবে। এমনকি ইঁদুরের মস্তিষ্কের সমান ক্ষমতাওয়ালা এআই’ও দেখা যেতে পারে। তবে, সেটা বিশ্ব দখল করবে না।
“এটা এখনও ডেটা সেন্টারের মাধ্যমে পরিচালিত হবে, যেখানে একটি বন্ধ করার সুইচও থাকবে।” --যোগ করেন তিনি।
“আর একে নিরাপদ মনে না হলে আপনি এটা না বানালেই পারেন।”
চাকরিতে প্রভাব
এআই বেশ কিছু চাকরির জায়গা নিতে পারে, এরইমধ্যে এমন যুক্তি দেখানো হয়েছে। এর ফলে, কয়েকটি কোম্পানি নির্দিষ্ট কিছু পদে নিয়োগ বন্ধ রেখেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
“এটা বেশিরভাগ লোকজনের চাকরি চিরতরে কেড়ে নেবে না।” --বিবিসিকে বলেন লেকান। তবে তিনি আরও যোগ করেন, কাজের ধরন বদলাবে কারণ এখন থেকে ২০ বছর পর সবচেয়ে চমকপ্রদ চাকরি কোনটা হবে, তা কেউই বলতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, বুদ্ধিমান কম্পিউটার ‘মানবতার জন্য নতুন এক রেনেসাঁ’ তৈরি করবে। ঠিক যেমন ইন্টারনেট বা ছাপাখানার বেলায় ঘটেছিল।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নিয়ন্ত্রণ আনার লক্ষ্যে ইউরোপে প্রস্তাবিত ‘এআই অ্যাক্ট’-এর ভোটাভুটির আগে মঙ্গলবার লেকানের এমন মন্তব্য এল।
তিনি বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন এআই স্টার্টআপের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন এবং তারা এটা ‘মোটেও পছন্দ করছে না’।
লেকান বলেন, তিনি এআই নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে নন। তবে তার মতে, প্রতিটি অ্যাপ্লিকেশনের জন্য নিজস্ব নিয়ম থাকা উচিৎ। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা এআই ব্যবস্থা ও মেডিকাল সংশ্লিষ্ট ছবি শনাক্তে আলাদা নিয়ম।