জাহাজ নয়, যেন এক ‘দানবীয় কচ্ছপ শহর’

পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় প্যাঞ্জিওসের নির্মাণ সম্ভব নয়। তাই, এ ভাসমান শহর নির্মাণের আগে এর নির্মাণ কারখানা স্থাপনের জায়গা খুঁজছেন ডিজাইনাররা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2022, 07:58 AM
Updated : 18 Nov 2022, 07:58 AM

পুরো বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে শঙ্কিত, তখন এক দানবীয় ভাসমান শহর নির্মাণের স্বপ্ন দেখছেন একদল ডিজাইনার। স্বপ্ন সত্যি হলে বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজের তকমা বগলদাবা করে নেবে ‘প্যাঞ্জিওস’।

সামুদ্রিক কচ্ছপের মতো দেখতে ‘প্যাঞ্জিওস’-এর নকশা করেছে ইতালির কোম্পানি ‘লাজ্জারিনি’র ডিজাইনাররা। কল্পিত ভাসমান শহরটির নামকরণ করা হয়েছে সুপারকন্টিনেন্ট ‘প্যাঞ্জিয়া’র নামানুসারে।

‘প্যাঞ্জিয়া’ নামটি অপরিচিত মনে হলেও এই সুপারকন্টিনেন্ট ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসা ভূখণ্ডের ওপরই গড়ে উঠেছে আজকের মানব সভ্যতা। ২০ থেকে ৩৩ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে অস্তিত্ব ছিল এই সুপারকন্টিনেন্টের। 

হালের এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপসহ মহাদেশীয় ভূখণ্ডের সবগুলোই ছিল প্যাঞ্জিয়ার অংশ। ভূপৃষ্ঠের ওপরের স্তরের টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়ায় প্যাঞ্জিয়া ভেঙ্গেই সাত মহাদেশের উৎপত্তি।

আর লাজ্জারিনির ডিজাইনারদের ভাবনাতেও ‘প্যাঞ্জিয়া’র প্রভাব স্পষ্ট। একই সঙ্গে একটি দানবীয় ভাসমান শহর এবং বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজ নির্মাণের স্বপ্ন দেখছেন তারা। আটশ কোটি ডলার খরচ করেই জাহাজটি নির্মাণ সম্ভব বলে সিএনএনকে জানিয়েছেন এর ডিজাইনাররা।

লাজ্জারিনির নকশা অনুযায়ী, প্যাঞ্জিওসের দৈর্ঘ্য হবে ৫৫০ মিটার বা ১ হাজার ৮০০ ফুট এবং প্রস্থ হবে ৬১০ মিটার বা ২ হাজার ফুট।     

বিলাসবহুল ইয়ট নির্মাণের ভাবনা নতুন মাত্রা পেয়েছে লাজ্জারিনির ডিজাইনারদের পরিকল্পনায়। প্যাঞ্জিওসে হোটেল, শপিং মল, পার্ক এমনকি আকারে ছোট জাহাজের জন্য ঘাট এবং হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকবে বলে দাবি তাদের।

তবে, পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় প্যাঞ্জিওসের নির্মাণ সম্ভব নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক ও সক্ষম জাহাজ নির্মাতাদের হাতেও নকশা অনুযায়ী প্যাঞ্জিওস নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই। তাই, এ ভাসমান শহর নির্মাণের আগে এর নির্মাণ কারখানা স্থাপনের জায়গা খুঁজছেন ডিজাইনাররা। 

সিএনএন জানিয়েছে, প্যাঞ্জিওসের নির্মাণস্থল হিসেবে সৌদি আরবকে বিবেচনায় রেখেছেন এর নকশাকারীরা। জাহাজটি নির্মাণের জন্য প্রথমে অন্তত এক বর্গ কিলোমিটার সাগর সেঁচে একটি গোলাকার বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। 

এর সম্ভাব্য অবস্থান হিসেবে জেদ্দা থেকে ৮১ মাইল উত্তরে অবস্থিত কিং আবদুল্লাহ জাহাজঘাটের একটি অংশ চিহ্নিত করেছেন ডিজাইনাররা।

সিএনএন আরও জানিয়েছে, স্থলের আর দশটি শহরের মতো ছোট ছোট ব্লকে ভাগ করা থাকবে প্যাঞ্জিওস। জাহাজের ওপরের অংশে থাকবে বাগান আর উড়ুক্কু যান অবতরণের জায়গা। 

যাত্রী ও ক্রুদের থাকার জায়গার নিচেই থাকবে ৩০ হাজার সেল; যা পুরো কাঠামোকে ভাসিয়ে রাখবে। আর জাহাজের বেইজমেন্ট নির্মাণে ব্যবহার করা হবে স্টিল। সর্বোচ্চ ৫ নট গতিতে ছুটতে পারবে জাহাজটি। 

পুরো জাহাজের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাবে ছাদে বসানো সোলার প্যানেল।  

প্যাঞ্জিওসের নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য থাকবে না বলে জানিয়েছে সিএনএন। এর যাত্রীদের জন্য যাত্রাই হবে গন্তব্য। 

২০৩৩ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করেছে লাজ্জারিনি; নির্মাণ কাজ শেষ করতে সময় লাগবে আট বছর।

তবে, এখনই প্যাঞ্জিওস ঘুরে দেখার সুযোগ আছে প্রযুক্তি ভক্তদের। চলমান ক্রাউডফান্ডিং উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১৬ ডলার খরচ করে একটি ভার্চুয়াল টিকেট কিনে ভার্চুয়াল প্যাঞ্জিওস ঘুরে দেখতে পারবেন যে কেউ। 

এ ছাড়াও, ভিআইপি অ্যাপার্টমেন্টের এনএফটি কেনা যাবে ১৬৯ ডলার দামে।