এ শ্রেণির বেশিরভাগ ভাইরয়েডই সংক্রামক হয়ে থাকে, যার মাধ্যমে রোগের ঝুঁকিও দেখা দেয়। তবে নতুন আবিষ্কৃত ছোট্ট ওবেলিস্কগুলো সংক্রামক ভাইরয়েডের মতো দেখায় না।
Published : 01 Feb 2024, 01:33 PM
মানবদেহের অন্ত্র বা পেট ও মুখের ভেতরে অদ্ভুত এক ‘অজানা সত্ত্বা’ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। আণুবীক্ষণিক আকৃতির এই ভাইরাসের চেহারার সঙ্গে মিল রেখে গবেষকরা এর নাম দিয়েছেন ‘ওবেলিস্ক’ বা স্তম্ভ।
এ এনটিটি বা সত্ত্বা ভাইরাসের মতো কাজ করলেও এগুলো দেখতে অনেক ছোট ও সরলাকৃতির বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল ‘লাইভ সায়েন্স’। এমন ছোট আকারের কারণে এগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ভাইরাসের ‘ভাইরয়েড’ শ্রেণিতে। আর এগুলো সাধারণত প্রোটিনের আবরণ ছাড়াই জেনেটিক অণুর সহজতম রূপ, যা বিভিন্ন একক আরএনএ গঠনে সক্ষম।
তবে এ শ্রেণির বেশিরভাগ ভাইরয়েডই সংক্রামক হয়ে থাকে, যার মাধ্যমে রোগের ঝুঁকিও দেখা দেয়। তবে নতুন আবিষ্কৃত ছোট্ট ওবেলিস্কগুলো সংক্রামক ভাইরয়েডের মতো দেখায় না বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
গবেষকদের সামনে এখন বড় প্রশ্ন হল, এরা মানবদেহের পেট ও মুখের ভেতর এল কী করে? আর সেখানে তাদের কাজই বা কী? এ বিষয়ে কয়েকটি তত্ত্ব দিয়েছেন ‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’, ‘ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো’ ও ‘টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ভ্যালেন্সিয়া’র গবেষকরা।
এ ওবেলিস্ক আকৃতির ভাইরয়েডগুলো মানবদেহের মাইক্রোবায়োমে (যা দেহকে জীবাণু থেকে রক্ষা করে) জিনের কার্যকলাপ প্রভাবিত করতে পারে। এমনকি এরা মানুষের মুখের মধ্যে থেকেও এটা করতে সক্ষম। সেই লক্ষ্যে, এরা মানুষের মুখের একটি সাধারণ ব্যাকটেরিয়া ‘স্ট্রেপ্টোকক্কাস স্যাঙ্গুইনিস’কে আশ্রয় হিসাবে ব্যবহার করে বলে গবেষণায় দেখেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ভাইরয়েডগুলো মানবদেহের মুখ ও অন্ত্র উভয়ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াকে সংক্রামিত করে থাকে। তবে সে কারণটিও এখন অব্দি অজানা।
মানবদেহে এনজাইমের প্রতিলিপি তৈরির জন্য দরকারি কিছু নির্দেশনা এইসব ওবেলিক্সে রয়েছে। তাই বিজ্ঞানের নির্দেশিত হিসাব মতে, এটা মানবদেহের অন্যান্য ভাইরয়েডের চেয়ে জটিল।
আর এটি কীভাবে ভাইরাস থেকে ভাইরয়েডে বিবর্তিত হয়েছে অথবা আসলে ভাইরয়েড থেকে ভাইরাসে বিবর্তিত হয়েছে কি না, সে বিষয় নিয়ে বছরের পর বছর ধরে ‘ডিম আগে না মুরগি আগে’ এ বিতর্ক চলছে। তাই আরও গবেষণা না করা পর্যন্ত শেষ হবে না এ যুক্তি তর্ক।
এমন ওবেলিস্ক সিকোয়েন্স মানবদেহে কী করছে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা না মিললেও বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন, মানবদেহে এগুলো কতটা প্রভাব বিস্তার করে আছে।
এই সিকোয়েন্সগুলো মানুষের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার প্রায় সাত শতাংশ ও মুখের ব্যাকটেরিয়ার প্রায় ৫০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে। তবে, মানুষের মুখ ও অন্ত্রের ওবেলিস্কের সঙ্গে তুলনা করা হলে অন্ত্রের কাঠামোতে একটি স্বতন্ত্র আরএনএ সিকোয়েন্স খুঁজে পাওয়া যায়, যা মুখে নেই।
আর ওবেলিস্কগুলোর এ বৈচিত্র্য গবেষকদের অবাক করেছে। তাদের দাবি, “মানব ও বৈশ্বিক মাইক্রোবায়োমে উপনিবেশিত ও অলক্ষিত থেকে গেছে, বিভিন্ন এমন শ্রেণীর বৈচিত্র্যময় আরএনএ নিয়ে গঠিত এ ওবেলিস্কগুলো।”
“আমার ধারণা, এই নতুন আবিষ্কৃত ওবেলিস্কগুলো আরও স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে যে আমরা এখনও এই ভাইরাল মহাবিশ্বের সীমানা অন্বেষণ করে চলেছি,” লাইভ সায়েন্স’কে বলেছেন ‘লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি’র অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘ডিওই জয়েন্ট জিনোম ইনস্টিটিউট’-এর কম্পিউটেশনাল বা গণনামূলক বায়োলজিস্ট সাইমন রাউক্স।
“এটা অবাক করার মতোই বিষয়,” বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা অ্যাট চ্যাপেল হিল’-এর কোষ ও উন্নয়নমূলক জীববিজ্ঞানী মার্ক পাইফার।
“আমরা যত গবেষণা করছি, এতে তত বেশি অবাক করা বিষয় দেখছি।”
তবে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কথা বলতে গেলে, বিভিন্ন ক্যান্সার কোষ ও বায়োমেট্রিক ইমপ্লান্ট শনাক্ত করতে সম্প্রতি নতুন এক কাস্টম ব্যাকটেরিয়া তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা রোগীর রিপ্লেসমেন্ট সার্জারির পর তার অঙ্গের গতিবিধি শনাক্তে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
মানবদেহ হয়ত সমুদ্র বা মহাকাশের মতোই বিশাল ও রহস্যময়। তবে ধীরে ধীরে এর ধাঁধাগুলো উন্মোচিত হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে এনগ্যাজেট।