“ইভিতে লাগা আগুন দমকলকর্মী ও আশপাশের বাসিন্দাদের ক্ষতিকর ধাতুর সংস্পর্শে আনে, যা তাদের ডিএনএ-এর ক্ষতি ও জিনগত পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।”
Published : 10 Mar 2025, 02:50 PM
বর্তমানে সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি বা ইভির ব্যবহার। ইভিতে আগুন লাগলে তা দমকলকর্মী, গাড়ির মালিক ও আশপাশের বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে বলে সতর্কতা উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
‘ইউনিভার্সিটি অফ মায়ামি’র ‘সিলভেস্টার কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টার’-এর গবেষকরা বলছেন, ইভিতে আগুন লাগার ফলে বিষাক্ত ভারী ধাতু নির্গত হয়, যা ক্যান্সার ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ইভি’র আগুন কেন বেশি বিপজ্জনক?
যে কোনো ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ইভিতে ব্যবহৃত ব্যাটারির পরিমাণ অনেক বেশি থাকায় এসব গাড়িতে আগুন লাগায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও বেশি। কারণ, এসব ব্যাটারিতে ভারী ধাতুর ঘনত্ব বেশি থাকে, যার সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
‘সিলভেস্টারের ফায়ারফাইটার ক্যান্সার ইনিশিয়েটিভ’ বা ‘এফসিআই’-এর উপ-পরিচালক ড. আলবার্তো কাবান মার্তিনেজ বলেছেন, “ইভিতে লাগা আগুন দমকলকর্মী ও আশপাশের বাসিন্দাদের ক্ষতিকর বিভিন্ন ধাতুর সংস্পর্শে আনে, যা তাদের ডিএনএ-এর ক্ষতি, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি ও জিনগত পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।”
ইভি ব্যাটারিতে পাওয়া ভারী ধাতুর মধ্যে রয়েছে–
● আর্সেনিক, যা ফুসফুস, মূত্রাশয়, ত্বক, লিভার ও কিডনি ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
● ক্যাডমিয়াম, যা ফুসফুস, প্রোস্টেট, কিডনি, অগ্ন্যাশয় ও স্তন ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
● ক্রোমিয়াম, যা ফুসফুস, ন্যাজাল ও সাইনাস ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
● নিকেল, যা ফুসফুস, ন্যাজাল ও ল্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত
● সীসা, যা মস্তিষ্ক, কিডনি, পেট ও ফুসফুসের ক্যান্সারের সঙ্গে জড়িত।
এসব বিপজ্জনক পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে দমকলকর্মীরা এরইমধ্যে ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন।
‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল সেইফটি অ্যান্ড হেলথ’-এর মতে, সাধারণ মানুষের চেয়ে দমকলকর্মীদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৯ শতাংশ বেশি এবং তাদের ক্যান্সারে মারা যাওয়ার ঝুঁকি বেশি ১৪ শতাংশ।
নিয়ন্ত্রিত ইভি আগুনে রয়েছে বড় ঝুঁকি
ইভিতে আগুন লাগার প্রথম কেইস স্টাডির অংশ হিসেবে বায়ু ও পরিবেশ দূষণ গবেষণার জন্য একটি নিয়ন্ত্রিত ইভিতে আগুন লাগার মতো ঘটনা ঘটান গবেষকরা। তাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে—
● ইভি ব্যাটারির আগুন প্রচলিত গাড়ির আগুনের চেয়ে অনেক বেশি উত্তপ্ত হয়।
● ইভি ব্যাটারি বিস্ফোরিত হলে তার ধ্বংসাবশেষ ৪০ ফুট পর্যন্ত উপরে উড়তে পারে।
● একটি ইভি’র আগুন নেভাতে এক লাখ লিটারের বেশি পানি লাগে, যেখানে প্রচলিত পেট্রলচালিত গাড়ির আগুন নেভাতে লাগে কেবল আড়াই হাজার লিটার পানি।
● পোড়া ইভি’র কাছে মাটিতে ‘পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন’ বা পিএএইচএস-এর মতো বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গেছে, যা পরিবেশ বাড়িয়ে তুলেছে দূষণের মাত্রা।
প্রয়োজন আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার
গবেষকরা বলেছেন, দমকলকর্মী ও আশপাশে থাকা বাসিন্দাদের এসব বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শ আসা থেকে রক্ষায় ইভিতে আগুন লাগার পর তা যথাযথ জীবাণুমুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। দমকলকর্মীদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে গবেষণা ও সহযোগিতার গুরুত্বের উপরও জোর দিয়েছেন তারা।
‘ফায়ার ফাইটার ক্যান্সার ইনিশিয়েটিভ’-এর পরিচালক ড. এরিন কোবেটজ এর ব্যবহারিক সমাধান খুঁজে পেতে দমকলকর্মীদের সঙ্গে কাজ করার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “দমকলকর্মীরা বাস্তব বিশ্বের দক্ষতা নিয়ে কাজ করেন এবং আমরা বিজ্ঞানভিত্তিক ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট জ্ঞান নিয়ে কাজ করি। আর আমাদের এ অংশীদারিত্ব জীবন বাঁচাচ্ছে এবং এ কাজ অব্যাহত থাকবে”।