পুঁজিবাজারে মাসের পর মাস তলানিতে পড়ে থাকার পর চলতি সপ্তাহে প্রথমে বস্ত্র, এরপর সিমেন্ট এবং শেষ কর্মদিবসে বীমা খাতের ‘আড়মোড়া’ ভাঙতে দেখা গেল।
খাতওয়ারী লেনদেনের শীর্ষে যেতে না পারলেও চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে তা। শীর্ষ তিন খাত ছিল খাদ্য, ওষুধ ও রসায়ন এবং তথ্য প্রযুক্তি। তবে কোনো খাতেই এককভাবে এক শ কোটি টাকার লেনদেন হয়নি, যদিও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে কিছুটা।
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে যতগুলো কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে, বেড়েছে তার চেয়ে বেশি। তবে টানা দুই দিন বৃদ্ধির পর কিছুটা কমেছে সূচক। লেনদেনে আবার উল্টো চিত্র। আগের দিন লেনদেন প্রায় শতকোটি টাকা কমে গেলেও এদিন বেড়েছে প্রায় ৭৭ কোটি টাকা।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ক্রমেই পড়তে থাকা পুঁজিবাজার গত মাসের শেষে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয়।
শুরুতে লোকসানি ও স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়তে শুরু করে। তবে চলতি সপ্তাহেই খাতওয়ারী আগ্রহ বৃদ্ধির বিষয়টি দেখা যাচ্ছে।
৫৮ কোম্পানির বস্ত্র খাতে গত সোমবার লেনদেন হয় এক শ কোটি টাকার বেশি। টাকার অঙ্কের হিসাবে সেদিন খাতটি উঠে আসে শীর্ষে। দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকাতেও দেখা যায় এই খাতের প্রাধান্য।
পরের দিন আগ্রহ বাড়ে সিমেন্ট খাতের প্রতি। শীর্ষে উঠতে না পারলেও কয়েকটি কোম্পানির আয় বৃদ্ধির তথ্যে শেয়ার কেনাবেচা বাড়ে অনেকটাই।
সেদিনের পর তিন কর্মদিবসে বস্ত্র খাতের লেনদেন আর শত কোটি টাকার ঘর ছুঁতে পারেনি। তবে আগের মতো সব শেয়ারের ক্রেতা না থাকার বিষয়টি আর দেখা যাচ্ছে না।
সিমেন্ট খাতে অবশ্য মঙ্গলবারের পরে দুই দিনই আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কমেছে। তার বীমার দুটি অংশের মধ্যে আগ্রহ তুলনামূলক বেশি বেড়েছে সাধারণ বীমায়। এই খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির দরও বেড়েছে।
সব মিলিয়ে ৮৪টি কোম্পানির দর বৃদ্ধি, ৭৬টির পতনের দিন আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ১৯৭টি কেম্পানির শেয়ার। সব মিলিয়ে তালিকাভুক্ত ৩৯৩টি কোম্পানির মধ্যে ক্রেতা ছিল ৩৫৭টির। ৩৩টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি। তিনটি কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে আছে নিষেধাজ্ঞা।
চলতি বছর এক দিনে এত বেশি সংখ্যক কোম্পানির শেয়ার হাতবদল হয়নি এর আগে। সূচক পতনের দিন লেনদেন হয়েছে আট শ কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই। আগের দিন তা ছিল ৭২১ কোটি টাকা।
বীমার কী চিত্র
গত কয়েক মাস ধরে সাধারণ বীমা খাতের ৪১টি কোম্পানিতে কোনো দিন ১৫ কোটি টাকার নিচে, কখনও কোনো রকমে ১০ কোটি টাকা পার হতো এই খাতের লেনদেন।
বৃহম্পতিবার এক লাফে তা উঠে যায় ৩৮ কোটির কাছাকাছি। বেড়েছে ২৩টি কোম্পানির দর, বিপরীতে কমেছে দুটির আর ১৬টি কোম্পানি লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে। একটি কোম্পানিতে কোনো শেয়ার হাতবদল হয়নি।
জীবন বীমা খাতে আগেও নানা সময় লেনদেনে গতি দেখা গেছে। তবে এদিন লেনদেন ছিল সাধারণ বীমার চেয়ে কম। প্রায় ২৯ কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়েছে এই খাতের ১৪টি কোম্পানিতে।
সব মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা। এর চেয়ে বেশি টাকার শেয়ার হাতবদল হওয়া খাতগুলো ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক (৯২ কোটি ৪০ লাখ), ওষুধ ও রসায়ন খাত (৮০ কোটি ২৯ লাখ) এবং তথ্য প্রযুক্তি (৭৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা)
জীবন বীমায় পাঁচটি কোম্পানির দর বেড়েছে, হারিয়েছে সমান সংখ্যক আর অপরিবর্তিত ছিল চারটির দর।
দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে শীর্ষ ১০টি কোম্পানির মধ্যে দুটি ছিল সাধারণ বীমা, একটি জীবন বীমা।
এর মধ্যে ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ দর বেড়েছে অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের। নতুন লেনদেন শুরু করা ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ১০ শতাংশ। তবে ১০ টাকায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ার ১১ টাকায় বিক্রি করতে রাজি ছিলেন না বিনিয়োগকারীরা।
ষষ্ঠ স্থানে থাকা ইসলামি কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৭.২১ শতাংশ।
শীর্ষ দশে ফের ‘দুর্বলের’ আধিক্য
শীর্ষ দশের বাকি কোম্পানিগুলো একেকটি একেক খাতের। তবে আগের কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় লোকসানি, আর্থিক হিসাব প্রকাশ না করা বা পরিশোধিত মূলধন কম এমন কোম্পানির আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে।
এর মধ্যে ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের পর হিসাব প্রকাশ না করা মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের দর ১০ শতাংশ, চলতি অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে ১০ টাকার শেয়ার প্রতি ৩৫ টাকা লোকসান দেওয়া জুন স্পিনার্সের দর ৮.৫৯ শতাংশ, চলতি অর্থবছরের অর্ধবার্ষিকে ১০ টাকার শেয়ারে ৪ টাকা ৩৩ পয়সা লোকসান দেওয়া স্ট্যান্ডারড্ সিরামিকসের দর ৭.৪৭ শতাংশ, তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি কেবল ৪৪ পয়সা আয় করা সমরিতা হাসপাতালের দর ৫.২৯ শতাংশ, তিন প্রান্তিকে ১০ টাকার শেয়ার প্রতি ৬ টাকা ৪৪ পয়সা লোকসান দেওয়া লিবরা ইনফিউশনের দর ৪.৯০ শতাংশ, স্বল্প মূলধনী কোম্পানি পেপার প্রসেসিংয়ের দরও ৪.৯০ শতাংশ এবং টানা দ্বিতীয় বছর লোকসানে থাকা ইয়াকিন পলিমারের দর বেড়েছে ৪.৮৩ শতাংশ।
শীর্ষ দশের বাইরে আরও পাঁচটি কোম্পানির দর ৪ শতাংশের বেশি, সাতটির দর ৩ শতাংশের বেশি, ১৬টির দর ২ শতাংশের বেশি, সমান সংখ্যক কোম্পানির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।
পতনের শীর্ষে ফের সি পার্ল
অস্বাভাবিক উত্থানের পর টানা পতনের মধ্যে থাকা এই কোম্পানিটি আগের দিন ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায়। কিন্তু পরের দিনই দর কমেছে ৮ শতাংশের বেশি।
হঠাৎ করে উত্থান ঘটতে থাকা অগ্নি সিস্টেমসের দর ৫.৮২ শতাংশ, আমরা নেটওয়ার্কের দর ৪.৭৫ শতাংশ, হাইডেলবার্গ সিমেন্টে দর ৪.৬০ শতাংশ কমেছে।
দরপতনের শীর্ষ দশে আরও ছিল এস কে ট্রিমস, ইনকেট অনলাইন, ইমাম বাটন, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, জিবিবি পাওয়ার এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।
এগুলোর দর ৩.৬৫ শতাংশ থেকে ৪.৩৪ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
শীর্ষ ১০ ছাড়াও আরও ১১টি কোম্পানির দর ৩ শতাংশের বেশি, ১৫টির দর ২ শতাংশের বেশি, ১৪টির দর কমেছে এক শতাংশের বেশি।