আগের দিনের মত এদিনও ৭০টিরও বেশি কোম্পানির শেয়ারে কোনো ক্রেতা ছিল না। আরও দুইশর মত কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে নামমাত্র।
Published : 17 Apr 2023, 03:57 PM
ঈদের আগে পুঁজিবাজারের ‘অচলাবস্থার চিত্র’ পাল্টানোর ইঙ্গিত নেই, বিপুল সংখ্যক কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতাও নেই। তবে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে হঠাৎ করেই তুমুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
মৌলভিত্তি শক্তিশালী নয়, নিয়মিত মুনাফা আসে না, এমন বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারে ক্রয়চাপ দেখা গেছে। আর দর বাড়ছে তরতর করে। এর মধ্যে একটি কোম্পানি রাষ্ট্রায়ত্ব, বাকিগুলো বেসরকারি।
সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সব মিলিয়ে খাদ্য খাতের ২১টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ৮৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। মোট লেনদেনের ২০ দশমিক ৫৬ শতাংশই হয়েছে এই এক খাতে। দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকার প্রথম পাঁচটির তিনটিই ছিল এ খাতের।
সব মিলিয়ে এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৪৩ কোটি ৫৮ লাখ ১৮ হাজার টাকা, যা আগের দিন ছিল ৪৭২ কোটি ৯১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
সার্বিক সূচক বেড়েছে ৬ দশমিক ৮২ পয়েন্ট। বেড়েছে ৪৮ কোম্পানির, কমেছে ৫৬ টির। আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ২০৮টি।
আগের দিনের মত এদিনও ৭০টিরও বেশি কোম্পানির শেয়ারে কোনো ক্রেতা ছিল না। আরও দুইশর মত কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে নামমাত্র।
খাদ্য খাতের যেসব কোম্পানি চাঙা
তবে এই খাতের শক্তিশালী মৌলভিত্তির কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবানোর শেয়ারে আগ্রহ নেই বললেই চলে। ভালো মুনাফা করে নিয়মিত লভ্যাংশ দেওয়া অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারেই কেবল দেখা গেছে কিছু আগ্রহী।
এর এই খাতের জেমিনি সি ফুড ছিল লেনদেনের শীর্ষ তালিকার চতুর্থ নম্বরে। কোম্পানিটির ২৫ কোটি ৮৫ লাখ ১৪ হাজার টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। দুই সপ্তাহে স্বল্প মূলধনী এই কোম্পানিটির শেয়ারদর দর বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধির তালিকায় পঞ্চম নম্বরে দেখা গেছে কোম্পানিটিকে। আগের দিনের তুলনায় ৪.৫২ শতাংশ বেড়ে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের দর দাঁড়িয়েছে ৭৯০ টাকা ৪০ পয়সা।
গত ২৭ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৪৫৬ টাকা ৭০ পয়সা। এই কয় দিনে বেড়েছে ৩৩৩ টাকা ৭০ পয়সা বা ৭৩ শতাংশ।
পাঁচ বছর উৎপাদন বন্ধ থাকার পর গত বছর চালু হওয়া এমারেল্ড অয়েলও যোগ দিয়েছে এই দৌড়ে। এক মাসেরও কম সময়ে দর বেড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি।
দর বৃদ্ধির তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা কোম্পানিটির শেয়ারদর দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকা ৭০ পয়সা। গত ২ এপ্রিল দর ছিল ৩০ টাকা ৮০ পয়সা। ১১ কর্মদিবসে দর বেড়েছে ৩২ শতাংশ।
নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব ন্যাশনাল টি কোম্পানির শেয়ারে। ১১৯ টাকা ৫৩ পয়সা দরে প্লেসমেন্টে ২ কোটি ৩৪ লাখ শেয়ার ছেড়ে ২৭৯ কোটি ২০ লাখ টাকা তোলার খবরে দুই দিন ধরেই দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন হচ্ছে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৭.৪৯ শতাংশ বা ৪৮ টাকা ৩০ পয়সা।
দুই দিনে ৯৩ টাকা ৩০ পয়সা বা ১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়েছে।
গত অর্থবছর শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা লভ্যাংশ দেওয়া আরডি ফুড ছিল দর বৃদ্ধি ও লেনদেনের শীর্ষ তালিকার তিন নম্বর। ২৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকার বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছে কোম্পানিটির। দর বেড়েছে ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়েছে ২০ শতাংশ।
অন্য খাতের কী চিত্র
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চাঙা তথ্য প্রযুক্তি খাতেও লেনদেন হয়েছে খাদ্যের কাছাকাছি। ৮৪ কেটি ১৪ লাখ বা ২০ দশমিক ২০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে খাতটিতে।
এছাড়া ১১.৭২ শতাংশ লেনদেন হয়েছে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে।
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য বেশ ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করে আসা ৩৫ কোম্পানির ব্যাংক খাতে লেনদেন হয়েছে কেবল এক কোটি ১২ লাখ টাকার কিছু বেশি।
লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুমেও সাধারণ বিমা খাতের ৩৬ কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে কেবল ১ কোটি চার লাখ টাকার কিছু বেশি। দুই বছর আগে এই খাতটিতে কোনো দিন ৭০০ কোটি কোনোদিন ৯০০ কোটি টাকাও লেনদেন দেখা গেছে।
দর বৃদ্ধি ও পতনের শীর্ষে যারা
এদিন দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হল যথাক্রমে ন্যাশনাল টি কোম্পানি, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, আরডি ফুড, এমারেল্ড অয়েল, জেমিসি সি ফুট, রূপালী লাইফ, ইসলামিক কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স, আলহাজ্ব টেক্সটাইলস, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং ইউনিক হোটেল।
সব মিলিয়ে একটির দর ৭ শতাংশের বেশি একটির ৬ শতাংশের বেশি, ৬টির দর ৪ শতাংশের বেশি, ৫টির দর তিন শতাংশের বেশি, ৭টির দর দুই শতাংশের বেশি, ১৭টির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।
অন্যদিকে দরপতনের শীর্ষ তালিকায় ছিল যথাক্রমে মিডল্যান্ড ব্যাংক, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, সমতা লেদার, বেঙ্গল উইন্ডসর, এপেক্স ট্যানারি, মনোস্পুল পেপার, হামিদ ফেব্রিক্স, জুট স্পিনার্স, বিচ হ্যাচারি ও বিডি ল্যাম্পস।
এর মধ্যে গত সপ্তাহে মিডল্যান্ডের শেয়ারদর প্রায় ৪০ শতাংশ, এক মাসেরও কম সময়ে লিগ্যাসির দর ১২০ শতাংশের বেশি বেড়ে গিয়েছিল। যেখান থেকে বেড়েছিল মিডল্যান্ড ব্যাংক, প্রায় সেখানেই ফিরেছে। লিগ্যাসির দর এক সপ্তাহেরও কম সময়ে কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ প্রায়।
সব মিলিয়ে একটির দর ৯ শতাংশের বেশি, একটির দর ৭ শতাংশের বেশি, দুটির দর ৩ শতাংশের বেশি, আটটির দর ২ শতাংশের বেশি, ১৪টি দর কমেছে এক শতাংশের বেশি।