Published : 19 Jun 2024, 05:09 PM
‘ক্যাপিটাল গেইনে কর আরোপের প্রস্তাবের’ আগে থেকে দরপতনের বৃত্তে থাকা পুঁজিবাজারে ঈদের পর দিন সূচক বাড়ল এক শতাংশের কাছাকাছি। তবে লেনদেন আরও কমে নেমেছে সোয়া এক বছরের সর্বনিম্ন অবস্থানে।
ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ছিল সীমিত, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সারা দিনে হাতবদল হয়েছে ২৪৬ কোটি ৪৪ লাখ ৫ হাজার টাকার শেয়ার।
এর চেয়ে কম লেনদেন সবশেষ দেখা গেছে ২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। টাকার দরপতন, রিজার্ভ হ্রাস, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা আর সরকারের শেষ বছরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে তখনও দরপতনের বৃত্তে ছিল পুঁজিবাজার।
লেনদেন কম হলেও ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৩ পয়েন্ট বাড়ার ফলে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসের সূচক বেড়েছিল ৩৪ পয়েন্ট।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি আয়ে কর বসানোর কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি এমন প্রস্তাব আনতে পারেন, এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই পুঁজিবাজারে দরপতন ঘটছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারেজদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ তো বিনিয়োগকারী নাই বলা চলে। তারপরও সূচক এগিয়েছে ৪৩ পয়েন্ট। এটা ভালো লক্ষণ, এই সপ্তাহ এভাবেই চলবে মনে হয়।’’
ছুটি শেষে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় হতে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
গত শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক দুই দিন বন্ধ ও কোরবারি ঈদের ছুটি মিলিয়ে এবার পুঁজিবাজার বন্ধ ছিল পাঁচ দিন, যা শেষ হয় গত মঙ্গলবার।
সকালে যথারীতি ১০টায় লেনদেন শুরু হওয়ার ১৪ মিনিট পড়ে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫ হাজার ১৩৮ পয়েন্ট থেকে নেমে যায় ৫ হাজার ১২০ পয়েন্টে।
২১ মিনিট পরে পুনরায় প্রধান সূচকের উত্থান শুরু হলে থেমে থেমে এগিয়ে যেতে থাকে। এ ধারা অব্যাহত থাকে বেলা ১১টা অবধি। এর পরে দ্বিতীয়বার সূচক নেমে যায় ৫ হাজার ১১৯ পয়েন্টে।
ক্রয় চাপ বেড়ে গেলে সেখান থেকে সূচক ফের উঠতে শুরু করে, যা অব্যাহত ছিল লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত। প্রধান সূচকটি লেনদেন শেষ করে ৫ হাজার ১৬১ পয়েন্টে।
দিন শেষে লেনদেন হওয়া শেয়ারের মধ্যে দর এগিয়েছে ২৩২টির, কমেছে ৯৬টির ও আগের দরে লেনদেন হয় ৬৪টি প্রতিষ্ঠানের।
সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে তিনটিই লোকসানি কোম্পানি, যেগুলোর লভ্যাংশ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছয়টির দর বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি। এগুলো হল লোকসানি স্টাইলক্রাফট, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া আর্থিক কোম্পানি বিআইএফসি, গোল্ডেন জুবিলি মিউচুয়াল ফান্ড ও বিজিআইসি।
বাকি চারটি কোম্পানির দর বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি। এগুলো হল লোকসানি আরামিট সিমেন্ট ও সাফকো স্পিনিং, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স ও ওয়ালটন হাইটেক কোম্পানি।
আরও তিনটি কোম্পানির দর ৮ শতাংশের বেশি, চারটির দর ৭ শতাংশের বেশি, ৭ টির দর ৬ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশের কম, ১৪টির দর ৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশের কম, ২৩টির দর ৪ শতাংশ থেকে বেশি ও ৫ শতাংশের কম বেড়েছে।
সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল ওয়ালটনের। কোম্পানির শেয়ারদর ৮.৭৫ শতাংশ বাড়ায় সূচকে যোগ হয়েছে ১২.৪৫ পয়েন্ট।
স্কয়ার ফার্মা, বিকন ফার্মা, ইউনিলিভার, মেরিকো, বিএটিবিসি, রেনাটাও সূচকে যোগ করেছে ১ থেকে ৪ পয়েন্ট।
সবচেয়ে বেশি ৩.৯১ শতাংশ দর হারিয়েছে নতুন তালিকাভুক্ত সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৩৪ পয়সা আয় করে ৩০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে কোম্পানিটির মেয়ারের দরে কোনো সীমা ছিল না এদিন।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নীতিমালার কারণে ৩ শতাংশের বেশি দর কমতে পারেনি কোনোটির। সর্বোচ্চ সীমা বা তার কাছাকাছি দর কমেছে ১০টি কোম্পানির। এগুলো হল খান ব্রাদার্স, পিএইচপি ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ড, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, ওয়ান ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, রিং শাইন টেক্সটাইলস, মিথুন নিটিং, প্রিমিয়ার লিজিং, কপারটেক, ওয়াইপিএল।