ইউক্রেইন যুদ্ধের রেশ: দ্বিতীয় দিনে আরও বড় পতন, ১১ মাসে সর্বোচ্চ

বেশ কিছু দিন ধরে চলা অস্থিরতার সঙ্গে ইউক্রেইন যুদ্ধের রেশ যুক্ত হওয়ায় দ্বিতীয় দিনেও নির্বিচারে দর কমেছে বেশির ভাগ শেয়ারের; এতে প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ১৬৩ পয়েন্টের বেশি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2022, 12:43 PM
Updated : 27 Feb 2022, 12:43 PM

বাজারে আরও পতন হবে এমন আতঙ্কে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা চলতে থাকলে এক পর্যায়ে সূচক কমেছিল পৌনে দুইশ পয়েন্ট। শেষ দিকে পুনরুদ্ধারের কিছুটা চেষ্টা হলেও পতনের মাত্রা ছিল সাম্প্রতিক যে কোনো দরপতনের দিনের চেয়ে বেশি।

সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার ‘বাধাহীন’ শেয়ারদর কমার দিনে ৯৬ শতাংশ শেয়ারের দর কমেছে। দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিন থেকে ১৬৩ দশমিক ২৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ কমে ৬ হাজার ৬৭৬ দশমিক ১৪ পয়েন্টে নেমেছে। এতে সূচক ফিরে গেছে দুই মাস আগের অবস্থানে।

আর শতাংশের হিসাবে এ পতন গত ১০ মাস ২৩ দিনের মধ্যে বেশি। এর আগে এরচেয়ে বেশি পতন হয়েছিল গত বছরের ৪ এপ্রিল। সেদিন ডিএসইএক্স সূচক কমেছিল ১৮১ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

এমন পতনের দুই কারণ দেখছেন মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ইউক্রেইন যুদ্ধের ব্যাপার তো আছেই, সঙ্গে সময়টা মাসের শেষ দিকে হওয়ায় এসময় বিক্রি একটু বেশি থাকে। দুটো মিলিয়ে বড় পতন হয়েছে।“

তবে তার আশা এমন পতন আর থাকবে না।

শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যুদ্ধ শুরু হওয়ার খবরের একটা মনস্তাত্বিক প্রভাব দেশের পুঁজিবাজারে পড়েছে। যুদ্ধের ফলে তেলের দাম বেড়ে যাবে- এর একটা প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে পড়বে। সেটার প্রভাব পুঁজিবাজারে চলে আসবে। দুটো কারণে পুঁজিবাজারে সূচক কমেছে।”

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, “এখন মানুষ অনেক ভয়ে আছে। আস্তে আস্তে এ ভয় কেটে যাবে। অস্থিরতা কমে গেলে বাজারের পতনও থেমে যাবে।”

রোববার এ বাজারে লেনদেনও আগের দিনের তুলনায় ১২ দশমিক ৭৬ শতাংশ বা ১৩৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা কমেছে।

মোট ৯১৬ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা আগের কর্মদিবসে ছিল ১ হাজার ৫০ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

এদিন ডিএসইতে ৯৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমার বিপরীতে বেড়েছে ৩ শতাংশের দাম। এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১ শতাংশ শেয়ারের দাম।

এ বাজারে লেনদেন হওয়া ৩৭৯টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে ১০টির এবং কমেছে ৩৬৫টির। অপরিবর্তিত রয়েছে চারটির দর।

ঢাকার অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৩০ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৪৪৫ দশমিক ১৪ পয়েন্টে।

ডিএস৩০ সূচক ৪৭ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৪৬৭ দশমিক ৯০ পয়েন্টে।

লেনদেনের শীর্ষ ১০

বেক্সিমকো লিঃ, বিএসসি, বিএটিবিসি, ফরচুন সুজ, অরিয়ন ফার্মা, আইএফআইসি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, লাফার্জহোলসিম, সাইফ পাওয়ার ও ড্রাগন সোয়েটার।

দাম বাড়ার শীর্ষ ১০

প্যাসিফিক ডেনিমস, ইয়াকিন পলিমার, এডিএন টেলিকম, আইসিবি অগ্রণী ওয়ান, ডরিন পাওয়ার, সোনালী পেপার, পেনিনসুলা চিটাগং, হাওয়া ওয়েল টেক্সটাইল, ড্যাফোডিল কম্পিউটারস ও মেরিকো বাংলাদেশ।

দর হারানো শীর্ষ ১০

অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, তাক্কাফুল ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, বিএনআইসিএল, সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পেপার প্রসেসিং, আরামিট সিমেন্ট, ডিজিআইসি ও মুন্নু এগ্রো।

এদিন চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারেও সূচকে বড় পতন হয়েছে। লেনদেনও কমেছে আগের দিনের চেয়ে।

সিএসইতে ৩০৪টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৯টির, কমেছে ২৮৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১১টির দর।

বেশির ভাগের দাম কমায় এ বাজারের প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৪৯০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমে নেমে গেছে ১৯ হাজার ৫০০ দশমিক ৬৬ পয়েন্টে।

রোববার এ বাজারে আগের দিনের তুলনায় কমে ৩৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিন ছিল ৩৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।