পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর কমানোর দাবি

দেশে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর হার আগামী অর্থবছর থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2021, 09:27 AM
Updated : 4 March 2021, 09:27 AM

সেইসঙ্গে মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্পোরেট কর হার ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানানো হয়েছে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান তাদের এ দাবি তুলে ধরেন।

ঢাকার সেগুনবাগিচায় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মু. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে এই প্রাক বাজেট আলোচনা হয়।

মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন ছাড়াও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও লাইফ ইন্সুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন।

ছায়েদুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারে এখনো ভালো কোম্পানির শেয়ারের যোগানের অভাব রয়েছে। দেশে প্রায় দেড় লাখ নিবন্ধিত কোম্পানি থাকলেও শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত মাত্র ৩২৫টি।

“পুঁজিবাজারে ভালো শেয়ারের যোগান নিশ্চিত করতে হলে সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তাই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর্পোরেট কর হার ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করছি।”

ছায়েদুর রহমান বলেন, ২০১১ সাল থেকে দেশের পুঁজিবাজার বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যান্য আর্থিক খাতের সূচক ভালো থাকার পরও পুঁজিবাজারে তার ‘ছোঁয়া লাগছে না’। অথচ পুঁজিবাজারকে পেছনে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর নানা রকম পদক্ষেপ নেওয়ায় বাজার কিছুটা গতি পেলেও অর্থ ও শেয়ারের যোগান ‘যথেষ্ঠ না থাকায়’ শেয়ারবাজারে ‘পরিপূর্ণ গতি আসছে না’ বলে মনে করেন মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।

তিনি বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে কর সুবিধা পেলে মৌল ভিত্তির ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী হবে। তাই আমরা তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার সুপারিশ করছি।”

পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্পোরেট কর হার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, “দেশে এখন ৬৩টি মার্চেন্ট ব্যাংক কর্মরত আছে। এই খাতটিকে বৃহৎ কর অঞ্চলে রেখে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ কর কর্তন করা হচ্ছে। অথচ চলমান কোভিড -১৯ মহামারীতে ব্যবসা সীমাবদ্ধতা থাকায় এখন অপারেটিং ব্যয় বহন করাই কষ্টকর হয়ে উঠেছে।”

এমন পরিস্থিতিতে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর আদায় ‘অযৌক্তিক’ মন্তব্য করে তিনি এই কর কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা দাবি জানান।

বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ২৫ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত নয়- এমন কোম্পানিকে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট কর দিতে হয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চিফ অপারেটিং অফিসার সাইফুর রহমান মজুমদার শেয়ার বাজারে ভালো ও মৌল ভিত্তির কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে তালিকাভুক্তির প্রথম পাঁচ বছর ১০ শতাংশ হারে কর নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।

তিনি বলেন, এতে সরকারের করের উৎস বৃদ্ধি পাবে। এসব কোম্পানি যখন শেয়ার বাজারে ভালো ব্যবসা করবে, লেনদেন বাড়বে, সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।

শেয়ার বাজারে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের বিদ্যমান সুবিধা আরও এক বছর চালু রাখার সুপারিশ করেন সাইফুর রহমান মজুমদার।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বলা হয়, দেশের প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক না কেন ১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত ব্যক্তি শ্রেণির করদাতারা আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের উপর প্রতি বর্গমিটারের উপর নির্দিষ্ট হারে এবং গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজের উপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে আয়কর কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না।

এর পাশাপাশি তিন বছরের লক-ইনসহ কতিপয় শর্তে ১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে এবং ওই বিনিয়োগের উপর ১০ শতাংশ কর দিলে আয়কর কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না।

অপ্রদর্শিত আয় বড় আকারে শেয়ার বাজারে আনতে ওই কর হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন সাইফুর রহমান মজুমদার।