বিদেশিরা শেয়ার ছাড়ায় পুঁজিবাজারে ধস: বিএসইসি চেয়ারম্যান

পুঁজিবাজারে ধসের কারণ হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করাকে চিহ্নিত করেছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Dec 2019, 05:52 PM
Updated : 19 Dec 2019, 06:00 PM

গ্রামীণফোনের সঙ্গে বিটিআরসির বিরোধ পুঁজিবাজারের কাঠামোকে ‘ধ্বংস করে দিয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

এর কারণ হিসেবে ওই ‘বিরোধের জের ধরে’ বিদেশিদের গ্রামীণফোনের শেয়ার বিক্রির কথা বলেছেন বিএসইসি চেয়ার‌ম্যান।

বৃহস্পতিবার বিকেলে মতিঝিলের জীবন বীমা টাওয়ারে পুঁজিবাজারের খবর সংগ্রহে নিয়োজিত সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) অফিস ও ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “বিদেশিরা যখন শেয়ার কিনে তখন তারা মূল ভিত্তি দেখে শেয়ার কেনে। যখন তারা শুনেছে যে টাকার ডিভ্যালুয়েশন হবে, তখন তারা গ্রামীণফোনের সাথে অলিম্পিক, স্কয়ার ফার্মা, ইউনাইটেড পাওয়ার, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো সব বিক্রি করে দিচ্ছে। শুধু এই শেয়ারগুলো বিক্রি করে দেওয়ার ফলে গত দুই মাসে দেশের পুঁজিবাজারে অনেক সূচক কমেছে।”

গত ১৪ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ২৭৫ পয়েন্ট কমেছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা চেয়ে গত এপ্রিল মাসে চিঠি দিয়েছিল টেলিযোগাযাগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। তাতে কাজ না হওয়ায় আরোপ করা হয় কড়াকড়ি। মীমাংসার উদ্যোগ নিয়ে অর্থমন্ত্রী গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের নিয়ে দুই দফা বৈঠক করলেও তাতে সমাধান আসেনি।

এই ‘ঝামেলার কারণে’ বিদেশিরা গ্রামীণফোনের শেয়ার বিক্রি শুরু করেছেন জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, “গ্রামীণফোনের সাথে বিটিআরসির ঝামেলা শুধু গ্রামীণফোন বা বিটিআরসিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, এটা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের কাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

“কারণ যখন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করা শুরু করে তখন দেশের পুঁজিবাজার সেটা নেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। এটার একটা বড় প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ে যায়।”

মোবাইল ফোন সেবা খাতে গ্রামীণফোনই বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র কোম্পানি। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণ ফোনের বাজার মূলধন ডিএসইর মোট বাজার মূলধনের প্রায় ১২ শতাংশ।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাংকগুলোর সামর্থ্য থাকলেও তারা পুঁজিবাজারের পাশে দাঁড়াচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “দেশের ব্যাংক তাদের আইনি সীমার মধ্যে যে বিনিয়োগ করতে পারে সেটাও বিনিয়োগ করছে না। ২০১০ সালে ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দাম ছিল ১০০ টাকার উপরে, এখন সেসব ১০ টাকায় নেমে এসেছে। ব্যাংকগুলো কোনো ইনিশিয়েটিভ নিচ্ছে না।

“এক্সপোজার লিমিটের মধ্যে থেকে পুঁজিবাজারের পাশে তো ব্যাংকগুলো দাঁড়াতে পারে।”

খায়রুল হোসেন বলেন, মানহীন আইপিওর কারণে পুঁজিবাজারে পতন হচ্ছে বলে যে কথা বলা হয়ে থাকে, সেটা ‘ঠিক নয়’।

“গত নয় মাসে কোনো আইপিও নাই, তাহলে পুঁজিবাজার কেন পড়ে গেল? বরং বাংলাদেশে আইপিওতে পুঁজিবাজারে আসা কোম্পানি ভারতের তুলনায় ভালো করেছে। বাংলাদেশে যদি ৩০ শতাংশ শেয়ারের দাম আইপিওর দামের নিচে নেমে থাকে ভারতে ৬০ শতাংশের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটেছে।

“এ রকম অনেক আইপিও এই বাজারে এসেছে, যেগুলো অনেক সময় ধরে ভালো করেছে। বিনিয়োগকারীরা সেটা থেকে লাভবান হয়েছে।”

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, “বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যত আইপিও দেওয়া হয়েছে, সব আইনের মধ্যে থেকে দেওয়া হয়েছে। সেকেন্ডারি মার্কেটে গিয়ে একটি কোম্পানি কী করবে, সেটার দায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার না।

“একটি কোম্পানি যখন সেকেন্ডারি মার্কেটে আসে, তার পরে অনেক কারণে কোম্পানি সমস্যায় পড়ে যায়। কারও মালিক দুষ্টু থাকে, কারও পণ্য আর বাজারে চলছে না- এভাবে কোম্পানি শেষ হয়ে যায়।

“সেকেন্ডারি মার্কেটে আসার পরে একটি কোম্পানি কী রকম করবে তার গ্যারান্টি কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা দিতে পারে না।”