অডিট আপত্তি: জিপির শেয়ারে ধস

অডিট আপত্তির দুই হাজার কোটি টাকা অবিলম্বে পরিশোধের আদেশ আসার পর গ্রামীণফোনের শেয়ারের বড় দরপতন হয়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2019, 12:34 PM
Updated : 24 Nov 2019, 12:34 PM

সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ আসার পর লেনদেনের শুরু থেকেই জিপির শেয়ারের দর পড়তে থাকে।

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার জিপির ক্লোজিং প্রাইস ছিল ৩২৯ টাকা ৫০ পয়সা। রোববার দিন শুরু হয় ৩২৮ টাকা ৯০ পয়সা দর নিয়ে।

দিন শেষে এ কোম্পানির শেয়ারের দাম নেমে আসে ৩১১ টাকা ১০ পয়সায়, যা আগের দিনের তুলনায় ১৮ টাকা ৪০ পয়সা বা ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম।

বাজার মূলধনের প্রায় ১২ শতাংশ দখল করে রাখা গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম পড়ে যাওয়ায় সূচক পতন হয়েছে পুঁজিবাজারেও।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ১৮ দশমিক ২৪ পয়েন্ট কমেছে। আর চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২০ পয়েন্টের মত।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি বলে আসছে, গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের। এ নিয়ে গ্রামীণফোন ইতোমধ্যে মামলা করেছে বিটিআরসির বিরুদ্ধে। 

গ্রামীণফোনের আবেদনে হাই কোর্ট বিটিআরসির নিরীক্ষা আপত্তি দাবির নোটিসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। আপিল বিভাগ রোববার সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে গ্রামীণফোনকে অবিলম্বে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে।

গ্রামীণফোন ওই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞাও বাতিল হয়ে যাবে। তখন গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে যে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে বিটিআরসি।

অডিট আপত্তি নিয়ে এই বিরোধের মধ্যে গত কয়েক মাস ধরেই গ্রামীণফোনের শেয়ার দর ওঠানামা করছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম ছিল ৫১০ টাকা, যা এই শেয়ারটির সর্বোচ্চ মূল্য।

এরপর তা কমতে কমতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪১০ টাকায় নেমে আসে। ১৫ জুলাই তা আরও কমে ৩২৪ টাকায় নেমে আসে। ৪ সেপ্টেম্বর তা নেমে আসে ৩০০ টাকার নিচে; ২৮৯ টাকা ৪০ পয়সায়।

গ্রাহক সংখ্যায় দেশের সবচেয়ে বড় এই মোবাইল ফোন অপারেটরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের  নায় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) গ্রামীণফোনের শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১৮ টাকা ৭৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ১৮ টাকা ৩৮ পয়সা।

তবে শেষ প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) হিসাব গ্রামীণফোনের ইপিএস কমেছে। এই প্রান্তিকে মুনাফা হয়েছে ৫ টাকা ৩৮ পয়সা। গত বছরের এই সময়ে মুনাফা হয়েছিল ৬ টাকা ২৫ পয়সা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমেক বলেন, “জিপির শেয়ারের দামের কিন্তু একটা বড় প্রভাব আছে আমাদের পুঁজিবাজারের ওপর। এই শেয়ারের দাম কমে গেলে সূচক বড় ভাবে কমে যায়। আর বাড়লে বেশ বেড়ে যায়।”

“তবে গ্রামীণফোনের সমস্যার একটা ভাল সমাধান হলে ভাল হত। জিপির বিষয়টি আমাদের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পর্যবেক্ষণ করছে।”

রোববারের বাজারে লেনদেনের পাশপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।

ঢাকায় এদিন ৩৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এই বাজারে ৪২১ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।

সিএসইতে ১৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। বৃহস্পতিবার লেনদেনের অংক ছিল ১৫ কোটি ২৯ লাখা টাকা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৩৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৮টির, কমেছে ১৬৭টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির দর।

ডিএসইএক্স বা প্রধান সূচক দশমিক ১৮ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৬৮৮ দশমিক ৪২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৫ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে এক হাজার ৭৫ দশমিক ৮২ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ১২ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৬৩৮ দশমিক ১৬ পয়েন্টে।

অন্যদিকে সিএসইতে প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৯ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ২৫২ দশমিক ২৪ পয়েন্টে।

সিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ২৪৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১১১টির, কমেছে ১০২টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির দর।