টানা দরপতনে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে দরপতন চলছে। টানা দরপতনে দিশেহারা ছোট-বড় বিনিয়োগকারীরা। এক ধরনের আতংক বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। লেনদেন নেমে এসেছে তলানীতে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2019, 10:48 AM
Updated : 14 Oct 2019, 12:27 PM

কড়াকড়ি এবং কর বাড়ানোর ফলে সঞ্চয়পত্র থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিলেও সেই অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে না কেউ।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের আশ্বাস এবং তারল্য সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ- কোন কিছুতেই কোন কাজ হচ্ছে না। বাজারে পতন চলছেই।

লেনদেন শুরু হলেই পড়ছে সূচক। কমছে শেয়ারের দর। তালিকাভুক্ত কোম্পানির চার ভাগের এক ভাগের দর এখন অভিহিত মূল্যের (ফেস ভ্যালু, ১০ টাকা) নিচে।

সপ্তাহের দ্বিতীয় সোমবারও বড় দরপতন হয়েছে দুই বাজারে। ঢাকায় প্রধান সূচক ডিএসইএক্স হারিয়েছে ৫০ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ০৬ শতাংশ। অপর বাজার চ্টগ্রামে সার্বিক সূচক পড়েছে ১০৬ পয়েন্ট।

গত তিন সপ্তাহে ডিএসইএক্স কমেছে ৩০০ পয়েন্টের মতো।

টানা দরপতনে ক্ষুব্ধ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ মঙ্গলবার মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনে মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছে।

বাজারের এই দশায় হতাশা প্রকাশ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেছেন, দেশি-বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীরাই বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সবার মধ্যে এক ধরনের আতংক কাজ করছে। বাজার বোধ হয় আরও পড়বে; ভয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন শেয়ার।

সোমবার লেনদেন শেষ হওয়ার পর এই বাজার বিশ্লেষক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মূলত তিনটি কারণে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। গ্রামীণফোনের শেয়ার নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে ঝামেলার সম্মানজনক সমাধান এখনও না হওয়ায় তাদের কাছে থাকা জিপির শেয়ার বিক্রি করে খালি করে দিচ্ছে। বাজারের টানা পতনে আতংকিত হয়ে অন্য শেয়ারগুলোও বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা।

“আরেকটি কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার মান দুর্বল করে ডলার শক্তিশালী করতে শুরু করেছে। গত দুই-তিন দিনেই ২০ পয়সা কমিয়েছে। বাজারে গুজব আছে, এবার ডলার ৯০ টাকা পর্যন্ত যাবে। টাকার বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়। সে কারণেও তারা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে।”

“আর অব্যাহত দরপতনে দেশি বা স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা আস্থাহীনতায় ভুগছেন। ছোট-বড় সব বিনিয়োকারী বুঝে উঠতে পারছেন না বাজার কোথায় গিয়ে শেষ হবে। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সবাই।”

“এই অবস্থায় যে করেই হোক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। আর সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসি, ডিএসই সবাই  মিলে এ কাজটি দ্রুত করতে হবে,” বলেন লালী।

ক্ষোভ প্রকাশ করে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিনিয়োগকারীরা সবাই শেষ। কালকে (মঙ্গলবার) আমরা ডিএসইর সামনে মানববন্ধন করব।”

 

তিনি বলেন, “এমনিতেই শেয়ারের চাহিদা নেই। প্রচুর বাজে শেয়ার পুঁজিবাজারে দেয়া হয়েছে আইপিওর মাধ্যমে। একদিকে পুঁজিবাজারে টাকার অভাব আরেক দিকে অনেক শেয়ার। বাজার ভালো হবে কীভাবে?”

গত তিন বছর ধরে ৮ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) অর্জিত হচ্ছে বাংলাদেশে। কিন্তু তার কোনো প্রতিফলন পুঁজিবাজারে দেখতে না পেয়ে অবাক লালী ও মিজানুর।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে ঢাকার বাজারে ৩৫৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত আছে। এরমধ্যে প্রায় ৮০টির দর ১০ টাকার নিচে। অর্থ্যাৎ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে চার ভাগের এক ভাগের দরই ফেস ভ্যালুর কম।

বাজার পরিস্থিতি

সোমবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৭১১ দশমিক ৩০ পয়েন্টে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএসপিআই ১০৬ দশমিক পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৪০৪ দশমিক ১৮ পয়েন্টে।

সোমবার ডিএসইতে ২৯৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। রোববারের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। রোববার ডিএসইতে লেনদেন ছিল ২৯৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৫২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৮০টির, কমেছে ২৩১টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪১টি কোম্পানির শেয়ার দর।

ডিএসই’র অপর দুই সূচক ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১৭ দশমিক ৮১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে এক হাজার ৮১ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ ১৯ দশমিক ২৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৬৬৯ পয়েন্টে।

সিএসইতে সোমবার ১৩ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেন আগের দিনের তুলনায় ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা কম।

রোববার সিএসইতে লেনদেনের অংক ছিল ১৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

লেনদেন হয়েছে ২৩৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫৯টির, কমেছে ১৪৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টির দর।