কোনো আশ্বাসেই আস্থা ফিরছে না পুঁজিবাজারে

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে দরপতন চলছেই। প্রতিদিনই কমছে সূচক। লেনদেনেও চলছে খরা।

ফারহান ফেরদৌসআবদুর রহিম হারমাছি ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2019, 12:53 PM
Updated : 9 Oct 2019, 01:03 PM

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের আশ্বাস এবং তারল্য সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন কিছুতেই কোন কাজ হচ্ছে না। বাজারে পতন চলছেই।

সপ্তাহের চতুর্থ দিন বুধবার ঢাকার বাজারে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩২ পয়েন্টের বেশি। চট্টগ্রামে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই পড়েছে ৮০ পয়েন্টের মতো।

চলতি সপ্তাহের চার দিনে ঢাকার বাজারে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৭৬ পয়েন্ট। চট্টগ্রামে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই পড়েছে ২০০ পয়েন্টের মতো।

বাজার বিশ্লেষক ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেছেন, তারল্য সংকট, আর্থিক খাতের খারাপ অবস্থা এবং গ্রামীণ ফোনের সমস্যার সমাধান না হওয়ার কারণে পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতন হচ্ছে।

শাকিল রিজভী।

শাকিল রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যে তারল্য সংকট আছে সেটা রয়ে গেছে। ব্যাংকের সুদের হার এখনও বেশি। এটার নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে আছে।

“বাংলাদেশের আর্থিক খাতের অবস্থা বেশ কিছুদিন ধরে খারাপ। পুঁজিবাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ হচ্ছে এই আর্থিক খাত। ব্যাংক লিজিং সবগুলোর শেয়ারের দাম কমছে। ফলে সূচক কমেছে।”

“গ্রামীন ফোন পুঁজিবাজারের প্রায় ১০ শতাংশর মত। এটার সাথে কর নিয়ে যে একটি সমস্যা সেটার সমাধান হয়নি। এটার বর্তমানে যে দাম সেটাতো থাকার কথা না। সেটাও বড় প্রভাব ফেলছে বাজারে।”

শাকিল রিজভী মনে করেন, বাজারে এখন আস্থার সংকটই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আর এই তিন সমস্যা দূর না হলে বাজারে আস্থা ফিরবে না। বিনিয়োগকারীলা বাজারমুখি হবেন না। বাজার স্বাভাবিক হবে না।

এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামও শাকিল রিজভীর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, “ব্যাংকিং খাত ঠিক না হলে শেয়ার বাজার ঠিক হবে না।”

দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

গত ২২ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে ব্যাংকগুলোকে আরও বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে এই বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

তার আগে ১৬ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজার নিয়ে বাজারের অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কমাল।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “এখানে আজ আশ্বস্ত করব সবাইকে যে, আমরা পুঁজিবাজারকে সুশাসন দেব এবং আমরা গর্ভন্যান্সে ভালো করব। যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, মিসম্যাচ আছে, সেগুলো আমরা টেককেয়ার করব। এভাবে আমাদের পুঁজিবাজারকে আমরা একটি শক্তিশালী বাজারে রূপান্তরিত করব।”

৩০ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ উদযাপনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন বলেছিলেন, সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো খুব শিগগিরই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে।  কিছু ভালো লাভজনক প্রতিষ্ঠান দু-এক মাসের মধ্যেই বাজারে আসবে।

“ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টর এসেছে; তার সুফল একসময় বাজার পাবে। তারা গবেষণা করছে যে, এই বাজারে কি ধরনের প্রতিষ্ঠানে আনা যায়। কোথায় বিনিয়োগ করা যায়। আস্তে আস্তে সে সব বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসবে। পুঁজিবাজারে এর প্রতিফলন ঘটবে। একটি বছর অপেক্ষা করেন, দেখবেন অনেক সুফল আমাদের কাছে আসবে।”

সর্বশেষ ৮ অক্টোবর ‘প্রমোটিং ডিএসই এসএমই এন্ড ভি-নেক্সট প্লাটফর্ম’ অনুষ্ঠানে খায়রুল হোসেনে বলেন,“আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যেই আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট একটি অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থানে যাবে। এবং আমাদের জিডিপির ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ হবে।”

বাজার পরিস্থিতি

বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স  ৩২ দশমিক ০৫ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮৬২ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

ডিএসই’র অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৭ দশমিক ৫১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে এক হাজার ১২৩ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ১৪ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৭২৪ পয়েন্টে।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক ৭৯ দশমিক ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৮০৪ দশমিক ১১ পয়েন্টে।

বুধবার ঢাকায় ৩২০ কোটি ৯১ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। মঙ্গলবার এই বাজারে ৩০১ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।

বুধবার সিএসইতে ১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। মঙ্গলবার লেনদেনের অংক ছিল ১১ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

বুধবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৫২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৮টির, কমেছে ২৪১টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৩টির দর।

সিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ২৫১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫৯টির, কমেছে ১৫৫টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৭ টির দর।