লেনদেন শুরু হলেই পড়ছে সূচক। কমে যাচ্ছে লেনদেন। তালিকাভুক্ত কোম্পানির চার ভাগের এক ভাগের দর অভিহিত মূল্যের (ফেস ভ্যালু, ১০ টাকা) নিচে নেমে এসেছে।
তবে দরপতনের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। গত কয়েক বছর ধরে ৮ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) অর্জিত হচ্ছে বাংলাদেশে। কিন্তু তার কোনো প্রতিফলন পুঁজিবাজারে দেখতে না পেয়ে অবাক হচ্ছেন তারা।
কেউ বলছেন বাজারে টাকার অভাব। কেই দায়ী করছেন ব্যাংকিং খাতের দুরাবস্থাকে। আবার কেউ বলছেন, আস্থার সংকট চলছে বাজারে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তারা বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আস্থা না ফিরলে বাজার স্বাভাবিক হবে না।
গত দুই সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রোববারও দুই বাজারেই মূল্যসূচক কমেছে। লেনদেন নেমে এসেছে আরও নিচে।
রোববার প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৮ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭৬১ পয়েন্টে নেমে এসেছে।।
এই সূচক গত ৩৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে এর চেয়ে কম সূচক ছিল ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর। সেদিন সূচক ছিল ৪ হাজার ৭৫০ পয়েন্ট।
গত ২০ দিনে এই সূচক পড়েছে ২৪০ পয়েন্ট।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৪৫ দশমিক ২০ পয়েন্ট।
রোববার ঢাকায় লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসে ২৯৮ কোটি ২০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই লেনদেন তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে এর চেয়ে কম ছিল ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই। সেদিন লেনদেন ছিল ২৭১ কোটি ৭৬ লাখ।
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এই বাজারে ৩২৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
দেশের অর্থনীতির স্বার্থে, পুঁজিবাজারের স্বার্থে ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
“দিন যতো যাচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের হতাশা ততোই বাড়ছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও আসছে না। যে করেই হোক বাজারে আস্থা ফেরাতে হবে। ভালো শেয়ার কিনলে কিছু না কিছু মুনাফা হবে এটা নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যে তারল্য সংকট আছে সেটা রয়ে গেছে। ব্যাংকের সুদের হার এখনও বেশি। এটার নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে আছে।
“বাংলাদেশের আর্থিক খাতের অবস্থা বেশ কিছুদিন ধরে খারাপ। পুঁজিবাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ হচ্ছে এই আর্থিক খাত। ব্যাংক লিজিং সবগুলোর শেয়ারের দাম কমছে। ফলে সূচক কমেছে।”
“গ্রামীন ফোন পুঁজিবাজারের প্রায় ১০ শতাংশর মত। এটার সাথে কর নিয়ে যে একটি সমস্যা সেটার সমাধান হয়নি। এটার বর্তমানে যে দাম সেটাতো থাকার কথা না। সেটাও বড় প্রভাব ফেলছে বাজারে।”
শাকিল রিজভী মনে করেন, বাজারে এখন আস্থার সংকটই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আর এই তিন সমস্যা দূর না হলে বাজারে আস্থা ফিরবে না। বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখি হবেন না। বাজার স্বাভাবিক হবে না।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে ঢাকার বাজারে ৩৫৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত আছে। এরমধ্যে প্রায় ৮০টির দর ১০ টাকার নিচে। অর্থ্যাৎ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে চার ভাগের এক ভাগের দরই ফেস ভ্যালুর কম।
বাজার পরিস্থিতি
রোববার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৪৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৪১টির, কমেছে ২৬৭টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৭টির দর।
অন্যদিকে সিএসইতে প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৪৫ দশমিক ২০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৫১০ দশমিক ২১ পয়েন্টে।
১৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বৃহস্পতিবার সিএসইতে লেনদেনের অংক ছিল ১২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
সিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ২৩৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩০টির, কমেছে ১৮১টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টির দর।