সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার পুঁজিবাজারে আসছে শিগগিরই: খায়রুল

সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো খুব শিগগিরই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা –বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন। কিছু ভালো লাভজনক প্রতিষ্ঠান দু-এক মাসের মধ্যেই বাজারে আসবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2019, 12:04 PM
Updated : 30 Sept 2019, 02:46 PM

সোমবার দুপুরে ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ উদযাপনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ তথ্য দেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের জন্য অনলাইনে অভিযোগ দেয়ার একটি মডিউল উদ্বোধন করা হয়।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিক এবং বাজার বিশ্লেষকদের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন বলেন, “অর্থমন্ত্রী আমাকে এইমাত্র বলেছেন। ইন্সুরেন্সগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার চেয়ে অর্থমন্ত্রী বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজারে আনার বিষয়ে। সরকারি প্রতিষ্ঠান শিগগিরই আপনাররা দেখতে পাবেন। কিছু ভালো লাভজনক প্রতিষ্ঠান দু-এক মাসের মধ্যেই বাজারে আসবে।”

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠান চলাকালে একটি ফোন আসে। বিএসইসির চেয়ারম্যান উঠে যান। বক্তব্যের সময় তিনি সেটি উল্লেখ করে বলেন, “অর্থমন্ত্রী ফোন দিয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রী তাকে এই বিষয়গুলো সবাইকে জানাতে বলেছেন।”

খাইরুল হোসেন বলেন, “আপনারা দেখেছেন আমি এখানে বসে ছিলাম। মাননীয় অর্থমন্ত্রী আমাকে ফোন দিয়েছিলেন; উনি আমাকে বলেছেন, বাজারের উন্নয়নের জন্য যা যা করণীয় আমরা সর্বপ্রকার চেষ্টা করব। বাজারের সূচক শুধু পজেটিভ হলেই হবে না। বাজারের লেনদেন যেন অনেক বেশি হয়। সবার ভেতর যেন একটা আস্থা সৃষ্টি হয়। সে বিষয়ে আমরা চেষ্টা করব।” 

দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজার ভাল করবে বলে এ সময় জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান।  

“ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টর এসেছে; তার সুফল একসময় বাজার পাবে। তারা গবেষণা করছে যে, এই বাজারে কি ধরনের প্রতিষ্ঠানে আনা যায়। কোথায় বিনিয়োগ করা যায়। আস্তে আস্তে সে সব বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসবে। পুঁজিবাজারে এর প্রতিফলন ঘটবে। একটি বছর অপেক্ষা করেন, দেখবেন অনেক সুফল আমাদের কাছে আসবে।”

সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে আনতে এর আগেও অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সরকারি ৩৪টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে ওই সময় সে উদ্যোগ বেশি দূর এগোয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে বাজারে ভালো শেয়ারের ভয়াবহ সংকট দেখা দেয়। এরপর সংকট কাটাতে সরকারি কোম্পানিকে বাজারে আনার উদ্যোগ শুরু হয়।

২০১০ সালের ১৩ জানুয়ারি সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে সরকারি কোম্পানির ৫১ শতাংশ শেয়ার সরকারের হাতে রেখে বাকি শেয়ার পাবলিকের মধ্যে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সময়ে কোম্পানিগুলোকে ২০১০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেয়ার ছাড়তে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়।

এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আরেকটি বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে কোম্পানিগুলোকে শেয়ার ছাড়ার তাগিদ দেয়া হয়।

কিন্তু সে উদ্যোগ খুব একটা কাজে আসেনি।

এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানির সময়সীমা ২০১১ সালের ১৪ ও ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে এ সময়ে মোট কোম্পানির সংখ্যা ৩৪ থেকে কমে দাঁড়ায় ২৬টিতে। সর্বশেষ শেয়ার ছাড়ার জন্য ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়।

এ অবস্থায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা দেন, বীমা কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে না এলে লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে।

পুঁজিবাজারে আসতে চায় রবি

অনুষ্ঠানে খায়রুল হোসেন বলেন, মোবাইল অপারেটর রবি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

“রবি ও গ্রামীণফোনের সমস্যার বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে আলোচনা হয়েছে। রবি বলেছে সমস্যা সমাধান হলে তারা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। কোম্পানিটি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে তাদের অর্থিক প্রতিবেদন শক্ত না হওয়ার কারণে তাদেরকে সেটার উপর আরও কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তারা সেটা নিয়ে কাজ করছে।”

“আমরা তাদের সমস্যা সমাধানের যে কাজ করছি সেটা শেষ হওয়ার পর তাদেরকে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে কাজ করবো। তাদেরকে বলেছি সমস্যার সমাধান হওয়ার পর আপনারা আইপিও আবেদন নিয়ে আসেন; আমরা অনুমোদন দেব।

অনলাইনে জানানো যাবে অভিযোগ

পুঁজিবাজারে কোন ধরনের হয়রানির শিকার হলে তা যাতে সহজেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা কে জানানো যায় এবং সেটার সমাধান যেন বিনিয়োগকারী দ্রুত পায় সে বিষয়টি মাথায় রেখে একটি অনলাইন ব্যবস্থা চালু করেছে বিএসইসি।

বিএসইসি ‘কাস্টমার কমপ্লেইন্ট অ্যাড্রেস মডিউল’ (সিসিএএম) নামে একটি স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার তৈরি করেছে। সোমবার থেকে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা বিএসইসির ওয়েবসাইটের সংশ্লিষ্ট উইন্ডোতে গিয়ে সহজেই অনলাইনে ফরম পূরণ করে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ওয়েবসাইটে এই অভিযোগ জমা দেয়ার লিংকটি পাওয়া যাবে যে কেউ চাইলেই তার অভিযোগ জানাতে পারবেন।

এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, “এর ফলে বিনিয়োগকারীরা স্যাটিসফাইড হবেন। বাজারের প্রতি তাদের আস্থা ফিরে আসবে। যখন অভিযোগগুলো আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারব, তখন বিনিয়োগকারীদের এ বাজারের উপর আস্থা বেড়ে যাবে।”

তারা মনে করবে ব্যাংকে টাকা রাখলে আমার টাকা যতটুক নিরাপদ পুঁজিবাজার ও আমার টাকা ততটুকু নিরাপদ।”