বড় দরপতনে সপ্তাহ শেষ

বড় দরপতনে সপ্তাহ পার করল বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2019, 10:58 AM
Updated : 29 August 2019, 10:58 AM

সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৪৪ পয়েন্ট। শতাংশ হিসাবে যা প্রায় ১ শতাংশ।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৫৫ পয়েন্ট।

চলতি সপ্তাহের পাঁচ দিনের চার দিনই পড়েছে বাজার। সোমবারের বড় পতনের পর মঙ্গলবার বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও বুধ ও বৃহস্পতিবার দুদিনই ফের বড় পতন হয়েছে।

কোরবানির ঈদের পর বাজারে কিছুটা ইতিবাচক ধারা ফিরে এলেও এখন আর তা নেই। বিনিয়োগাগকারীদের মধ্যে ফের হতাশা বিরাজ করছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিক্রির চাপে দরপতন হচ্ছে। গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম কমার প্রভাবও পড়ছে বাজারে।

বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“ পুঁজিবাজারে একটি আইপিও'র সাবস্ক্রিপশন চলছে। মানুষজন সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে টাকা বের কর আইপিও আবেদন করছে। এজন্য মার্কেটে একটা বিক্রির চাপ আছে। বিক্রির চাপে শেয়ারের দাম কমেছে; সূচকও কমে গেছে।”

বৃহস্পতিবারও  গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম ৩ টাকা ৮০ পয়সা বা ১ দশমিক ২০ শতাংশ কমেছে। বুধবার কমেছিল ৩ টাকা ৬ পয়সা বা ১ দশমিক ১২ শতাংশ কমেছিল।

শাকিল রিজভী বলেন, “গ্রামীণফোনের বাজারমূলধন অনেক বড়। এর একটা বড় প্রভাব কিন্তু সূচক এর উপরে থাকে। আজকে সূচকের পতনে গ্রামীণফোনেরও অবদান আছে।”

বিটিআরসির দাবি, গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের।

বেশ কিছুদিন ধরেই এই বিষয়টি নিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিটিআরসির দেনদরবার চলছে। গ্রামীণফোন বড় অংকের এই টাকা বিটিআরসিকে দিলে তারা অর্থিক সংকটে পড়বে। স্বাভাবিক কারণেই শেয়ারটির দর কমে যাবে সে ভয়ে অনেকেই শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে। বেড়ে গেছে বিক্রির চাপ।

টাকা আদায়ের জন্য বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও মোবাইল অপারেটর দুটি সেই টাকা শোধ করেনি। এখন প্রতিষ্ঠান দুটির লাইসেন্স বাতিলের মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বিটিআরসি।

বুধবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ওই দুই অপারেটরের লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে ইতোমধ্যে নোটিস পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে।

“আমরা তো প্রথমে ক্যাপ (ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়া) করেছি, পরে তাদের এনওসি (সেবার অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র) দেওয়া বন্ধ করেছি। এখন তাদের নোটিস দেওয়া, আরও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি।”

বছর দুয়েক আগে জিপির দর বাড়তে বাড়তে ৫২০ টাকায় উঠেছিল। এরপর থেকে কমতে কমতে বুধবার তা তা ৩১৬ টাকায় ৫০ পয়সায় নেমে এসেছে।

পুঁজিবাজারে রিং সাইন টেক্সটাইলের আইপিও আবেদন চলছে। তারা পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা তুলবে। আইপিওর জন্য আবেদন করা যাবে ২৫ অগাস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

আইপিওগুলোতে বেশ কয়েক গুণ আবেদন হয়। যদি এই দেড়শ কোটি টাকার জন্য দশগুণ আবেদন পড়ে তাহলে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে বের হয়ে যাবে।

বাজার পরিস্থতি

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৪০৩ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বুধবার লেনদেনে পরিমাণ ছিল  ৪৫৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৫৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৭৮টির, কমেছে ২৩৬টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৯টির দর।

ডিএসইএক্স বা প্রধান মূল্য সূচক ৪৪ দশমিক ২২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯৫ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৯ দশমিক ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে এক হাজার ১৮৩ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ১৭ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮০০ পয়েন্টে।

অন্যদিকে সিএসইতে ১৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বুধবার লেনদেনের অংক ছিল  ২৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

লেনদেন হয়েছে ২৩৯টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৪২টির, কমেছে ১৮৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩টির দর।