জিপির লাইসেন্স বাতিলের ‘খবরে’ দরপতন পুঁজিবাজারে

দরপতন হয়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2019, 11:46 AM
Updated : 28 August 2019, 12:35 PM

সোমবারের বড় পতনের পর মঙ্গলবার বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও বুধবার ফের পতনের ধারায় ফিরেছে।

কোরবানির ঈদের পর বাজারে কিছুটা ইতিবাচক ধারা ফিরে এলেও এখন আর তা নেই। বিনিয়োগাগকারীদের মধ্যে ফের হতাশা বিরাজ করছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিক্রির চাপে দরপতন হচ্ছে। গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম কমার প্রভাবও পড়ছে বাজারে।

সপ্তাহের চতুর্থ দিন বুধবার বাংলাদেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে প্রায় ৩৯ পয়েন্ট।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৮৮ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট।

বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“ পুঁজিবাজারে একটি আইপিও'র সাবস্ক্রিপশন চলছে। মানুষজন সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে টাকা বের কর আইপিও আবেদন করছে। এজন্য মার্কেটে একটা বিক্রির চাপ আছে। বিক্রির চাপে শেয়ারের দাম কমেছে; সূচকও কমে গেছে।”

“আজকে (বুধবার) গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম ১ শতাংশের বেশি কমেছে। গ্রামীণফোনের বাজারমূলধন অনেক বড়। এর একটা বড় প্রভাব কিন্তু সূচক এর উপরে থাকে। আজকে সূচকের পতনে গ্রামীণফোনেরও অবদান আছে।”

বুধবার লেনদেনের শুরু থেকেই বাজারে খবর ছড়িয়ে পড়ে গ্রামীণফোনের লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি। এরপরই গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম কমতে থাকে।

শেষ পর্যন্ত এই শেয়ারটির দর ৩ টাকা ৬ পয়সা বা ১ দশমিক ১২ শতাংশ কমে লেনদেন শেষ হয়।

বিটিআরসির দাবি, গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের।

এই টাকা আদায়ের জন্য বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত একমাত্র মোবাইল অপারেটর কোম্পানি জিপি সেই টাকা শোধ করেনি। এখন প্রতিষ্ঠান দুটির লাইসেন্স বাতিলের মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বিটিআরসি।

বুধবার দুপুরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ওই দুই অপারেটরের লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে ইতোমধ্যে নোটিস পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে।

“আমরা তো প্রথমে ক্যাপ (ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়া) করেছি, পরে তাদের এনওসি (সেবার অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র) দেওয়া বন্ধ করেছি। এখন তাদের নোটিস দেওয়া, আরও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি।”

বছর দুয়েক আগে জিপির দর বাড়তে বাড়তে ৫২০ টাকায় উঠেছিল। এরপর থেকে কমতে কমতে বুধবার তা তা ৩১৬ টাকায় ৫০ পয়সায় নেমে এসেছে।

পুঁজিবাজার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে। বুধবার সূচকের পতনের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান গ্রামীণফোনের। এই তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে ব্র্যাক ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংক।

পুঁজিবাজারে রিং সাইন টেক্সটাইলের আইপিও আবেদন চলছে। তারা পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা তুলবে। আইপিওর জন্য আবেদন করা যাবে ২৫ অগাস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

আইপিওগুলোতে বেশ কয়েক গুণ আবেদন হয়। যদি এই দেড়শ কোটি টাকার জন্য দশগুণ আবেদন পড়ে তাহলে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে বের হয়ে যাবে।

বাজার পরিস্থিতি

বুধবার ডিএসইতে ৪৫৬ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা মঙ্গলবারের চেয়ে  ১১ কোটি ৪ লাখ টাকা কম। মঙ্গলবার এই বাজারে ৪৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছিল।

ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৫০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৫৯টির, কমেছে ২৬২টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির দর।

ডিএসইএক্স বা প্রধান মূল্য সূচক ৩৮ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৩৯ দশমিক ৯৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৫ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে এক হাজার ১৯২ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ১১ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮১৭ পয়েন্টে।

অন্যদিকে সিএসইতে ২৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেন আগের দিনের তুলনায় ৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা কম।

লেনদেন হয়েছে ২৬৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬০ টির, কমেছে ১৮৩ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩ টির দর।