পুঁজিবাজারে বড় ধস

বড় ধরনের ধস নেমেছে দেশের পুঁজিবাজারে; প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2018, 09:16 AM
Updated : 4 Feb 2018, 03:57 PM

সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৩৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২১ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৮৮৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

এর আগে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল ডিএসইএক্সের সর্বোচ্চ পতন হয়। সেদিন এই সূচক ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৯৪ পয়েন্টে নামে।

২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ৪ হাজার ৫৫ দশমিক ৯০ পয়েন্ট ডিএসইএক্স সূচক চালু হয়। ওই বছরের ২১ জুলাই এর আগের সর্বোচ্চ দরপতন হয়। সেদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৯০ পয়েন্টে ঠেকেছিল।

রোববার সূচকে ব্যাপক পতনের পাশাপাশি দুই বাজারেই লেনদেনে থাকা কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৯০ শতাংশের বেশির দাম কমেছে।

কেউ কেউ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অস্থিরতার শঙ্কা থেকে বাজারে ধসের কথা বললেও বিশ্লেষকদের কেউ কেউ এ বিষয়ে একমত নন।

একজন বিশ্লেষক ‘অস্বাভাবিক’ এই দরপতনের জন্য ‘ব্যাংকনির্ভরতা’ ও স্বল্পমেয়াদী লেনদেনকারীদের দায়ী করেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন তারল্য সঙ্কটের কথা।

এদিকে ব্যাপক দরপতনের ফলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এইমস অব বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াওয়ার সায়ীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সামনে রায়, কি রাজনৈতিক পরিস্থিতি হতে পারে তা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের একটা সংশয় রয়েছে। তাই বলে এক দিনে বাজার এত পড়ে যাবে? এটা অস্বাভাবিক।

“বাজারের তো কোনো সাপোর্টই নেই। পাঁচ-সাত বছর আগের অবস্থাতেই যদি চলে, তাহলে এত সংস্কার করে কী আর হল?”

গত ছয় কার্যদিবসের মধ্যে পাঁচ দিনই ডিএসইএক্স কমেছে প্রায় ৩২৭ পয়েন্টের বেশি। গত একমাসে সূচক কমেছে ৩৮০ পয়েন্ট।

ধসের ধাক্কায় ডিএসইর আরএসআই (রিলেটিভ স্ট্রেংথ ইনডেক্স) এক দিনেই সাড়ে ২২ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ২৬ দশমিক ৮৫ পয়েন্টে। আরএসআই ৩০ এর নিচে নেমে যাওয়াকে অতিরিক্ত বিক্রির চাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ মনে করেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্কের পাশাপাশি তারল্য সঙ্কটও এই দরপতনে ভূমিকা রেখেছে।

“বাজারে তারল্য সঙ্কট রয়েছে। এটা কেটে গেলে বাজার পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে।”

ডিএসইতে অ-ব্যাংকিং আর্থিক খাত, তথ্য-প্রযুক্তি, সিমেন্ট, সিরামিক, সেবা ও রিয়েল এস্টেট, টেলিযোগাযোগ এবং পেপার ও মুদ্রণ খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর হারিয়েছে। বাকি খাতগুলোর সিংগভাগ কোম্পানির দরই কমেছে।

হাতবদল হওয়া ৩২৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৩টির, কমেছে ৩০২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১১টির।

এসময়ে ডিএসইতে ৩৬৪ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা বেশি।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিএএসপিআই সূচক প্রায় ৪০৪ পয়েন্ট কমে হয়েছে ১৮ হাজার ২১৯ পয়েন্ট।

সিএসইতে হাতবদল হওয়া ২০৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪টির, কমেছে ১৯৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টির।

ব্যাংক আমানত-ঋণের (এডি) অনুপাত কমানো ও মুদ্রানীতি ঘোষণা নিয়ে মাসখানেকের বেশি সময় ধরে বাজার ধুঁকছিল।

এরপর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায়ের দিন ঠিক হওয়ায় রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে বাজারের পতন তরান্বিত হয়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা কেউ কেউ মনে করেন।

রোববার পর্যন্ত গত গত ছয় কার্যদিবসের মধ্যে পাঁচ দিনই ডিএসইএক্স কমেছে প্রায় ৩২৭ পয়েন্টের বেশি। গত একমাসে সূচক কমেছে ৩৮০ পয়েন্ট।

ইয়াওয়ার সায়ীদ বলেন, “পুঁজিবাজারে প্রকৃত বিনিয়োগকারী তৈরি হচ্ছে না। এর বদলে বাজার নির্ভর থাকছে ব্যাংক ও মার্চেন্ট ব্যাংকের ওপর।

“আমাদের বাজার বিনিয়োগকারীর থেকে স্বল্প মেয়াদী লেনদেনকারীর সংখ্যাই বেশি।”

এসব কারণে বাজার টেকসই হচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও বাজারের ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী এ সম্পদ ব্যবস্থাপক।

ধসের বাজারেও ডিএসইতে যে কয়েকটি শেয়ার দরবৃদ্ধির তালিকায় এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছে- দুলামিয়া কটন, বার্জার, মুন্নু স্টাফলার, উসমানিয়া গ্লাস ও জাহিন স্পিনিং।

দর হারানোর শীর্ষে রয়েছে-মাইডাস ফাইন্যান্স, অলটেক্স, সামিট পোর্ট, সাইফ পাওয়ার ও ওয়েস্টার্ন মেরিন।

লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে- এনবিএল, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, স্কয়ারফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা ও আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ।