টানা দ্বিতীয় দিনের মত বড় দরপতন পুঁজিবাজারে

ঝুঁকি কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার মধ্যে টানা দ্বিতীয় দিনের মত বড় দরপতন হয়েছে দেশের দুই পুঁজিবাজারে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2018, 10:21 AM
Updated : 31 Jan 2018, 10:21 AM

বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১.৪৩ শতাংশ। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাবিক সূচক সিএএসপিআই ১.৩৯ শতাংশ কমেছে।

পাশাপাশি দুই বাজারেই বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছে এদিন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার জানুয়ারি-জুন মেয়াদের যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করে, সেখানে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে লাগাম টানার ইংগিত আসে। 

পরদিন মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক ০.৭৮ শতাংশ এবং সিএসইর সার্বিক সূচক প্রায় ১ শতাংশ পড়ে যায়।

এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘বেপরোয়া’ ব্যাংকিংয়ে থাকা ব্যাংকগুলোর লাগাম টেনে ধরতে ঋণ-আমানত অনুপাত এডিআর রেশিও) কমানোর ঘোষণা দেয়।

নতুন নিয়মে সাধারণ কোনো ব্যাংক ১০০ টাকা আমানত গ্রহণ করলে ৮৩ টাকা ৫০ পয়সার বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারবে না। আর ইসলামী ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করলে ৮৯ টাকা ঋণ দিতে পারবে। এতদিন এই দুই ধরনের ব্যাংকের ক্ষেত্রে এডিআর ছিল ৮৫ শতাংশ এবং ৯০ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই আদেশের প্রেক্ষাপটে বুধবার সকাল থেকেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক পড়তে থাকে। দুপুরের পর সূচকে সামান্য ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা গেলেও তা তেমন জোরালো হয়নি।

ফলে সূচকের ঘরে আগের দিনের চেয়ে ৮৮ পয়েন্ট কম নিয়ে দিন শেষ হয় দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে।   

টানা দুই দিন দরপতন হলেও শেয়ার বাজারে মুদ্রানীতির এই ধাক্কা দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ১ থেকে ১.৫ শতাংশ এডিআর কমানো হয়েছে। তা বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোকে পাঁচ মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকগুলো হয় ঋণ বিতরণ কমাবে, অথবা আমানত বাড়াবে।

আবার গতবছর থেকে খাদ্য আমদানি বাড়ায় অনেক ব্যাংকের এলসির টাকা আটকে আছে। মাল দেশে চলে এলে সে টাকাও ছাড় হয়ে যাবে।

সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, “সব মিলিয়ে পুঁজিবাজারে এই মুদ্রনীতি সাময়িক প্রভাব ফেললেও দীর্ঘমেয়াদে এর কোনো প্রভাব থাকবে বলে মনে হয় না। এখন পুঁজিবাজার যেভাবে পড়ছে সেট অনেকটা মানুষের ভুল বোঝার কারণে।”

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের একটি সংগঠনের নেতা রুহুল আমিন বলেন, “পুঁজিবাজারে তারল্য সঙ্কট আছে, এখন ব্যাংকগুলোকে এডিআরের নতুন সীমায় আসতে হলে শেয়ার বিক্রি করতে হবে। এছড়া সামনে নির্বাচন। রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলে… পুঁজিবাজার খুবই সেনসেটিভ; সব মিলিয়ে সূচক কমে যাচ্ছে।”

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বুধবার ডিএসইতে ৪৭২ কোটি টাকা ২৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ৭৩ কোটি ৫ লাখ টাকা বেশি। অর্থাৎ আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বেড়ে গেছে।

ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৩৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৩১টির, কমেছে ২৭৮টির এবং ২৬টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ৮৮ পয়েন্ট কমে হয়েছে ৬ হাজার ৩৯ পয়েন্ট। ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ১৫ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট কমে একহাজার ৩৯৮ পয়েন্ট এবং ডিএস৩০ সূচক ২৮ দশমিক ০৫ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২৩৮ পয়েন্ট হয়েছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ৪৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ১১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বেশি।

লেনদেনে থাকা ২৩২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬টির, কমেছে ২০০টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬টির দর।

দিন শেষে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৬৩ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ৬৯১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।