ভালো ও বড় কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে রাশেদ মাকসুদ বলেন, “আমরা ঘোলা পানিটা পরিষ্কার করতে চাই, তারা স্বচ্ছ পানি দেখতে পেলে সেখানে নামবেন।”
Published : 25 Aug 2024, 10:09 PM
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়ে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেছেন, গত ১৫ বছরে দুই স্টক এক্সচেঞ্জে অনিয়মের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া শেয়ারের তথ্য যাচাই করা হবে।
সরকার বদলের পর বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পঞ্চম দিনের মাথায় রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথমবার মতবিনিময় তিনি পুঁজিবাজারে সুশাসন ফেরাতে কারও চেহারা দেখা হবে না।
কেলেঙ্কারিতে জড়িত শেয়ারের লেনদেন পুনরায় যাচাই করার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, “ধাপে ধাপে লেনদেন রিভিউ (পুনযাচাই) করে দেখা হবে অনিয়ম কোথায় কোথায় হয়েছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হবে।
“লেনদেনগুলো দেখলে বোঝা যাবে, কে কোন উদ্দেশ্যে শেয়ারগুলো কিনেছে। তাদের পরিচয় কি, তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা কতটুকু ছিল।”
সভায় তিনি অনিয়ম ও শেয়ার কারসাজির ঘটনায় দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তি দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাশেদ মাকসুদ বলেন, “আমরা কাজ করার সময়ে কারও চেহারা দেখে কাজ করব না। সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিতে না পারলে এই প্রতিষ্ঠানে থাকার কোনো মানে হয় না।”
পুঁজিবাজার দাঁড়াতে না পারা, শেয়ার কেলেঙ্কারি, নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও শেয়ার কেনাবেচার মত কর্মকাণ্ডে বিএসইসির কর্মচারীদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বারবার।
গত ১৪ বছরে বিএসইসি দু’জন চেয়ারম্যান পেয়েছে। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে মহাধসের পরে নিয়োগ পেয়ে ২০২১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান ছিলেন এম খায়রুল হোসেন।
তার সময়ে বাজারে আসা কোম্পানির তালিকাভুক্ত হওয়া নিয়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়েও। বিষয়টি এত দূর পর্যন্ত গড়ায় যে, পরবর্তীতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে তদন্ত চালায়।
এরপরে পতনের বাজার সামলানো ও পুঁজিবাজার উন্নয়নে দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে।
শিবলী রুবাইয়াতের সময়ে সবচেয়ে বেশি শেয়ার কেলেঙ্কারির আলোচিত ঘটনার জন্ম হয়। গঠন করা হয় অনেক তদন্ত কমিটি।
কিন্তু বড় অপরাধে লঘু জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করার পরে আত্মগোপনে আছেন সদ্য বিদায়ী শিবলী রুবাইয়াত। পদত্যাগের ১০ দিন পরে গত ২১ অগাস্ট শিবলী ও তার সন্তানের বিও হিসাব স্থগিত করার নিদের্শ দেয় বিএসইসি।
শেয়ার কারসাজি চক্র বাজারে থাকতে কীভাবে উন্নয়ন হবে প্রশ্নে রাশেদ মাকসুদ বলেন, “গত ১৪ বছর ধরে চলা অনিয়মে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে ভালোই সময় লাগবে। তবে আমরা যদি ফোকাসড থাকি, সবাই একসাথে কাজ করি, তবে আশা করা যায় আমরা এ সমস্যা তাড়াতাড়ি কাটিয়ে উঠব। দুর্নীতি ও অনিয়ম যা হয়েছে, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হওয়া রোড ব্লকস (ব্যবস্থাপনায় বাধা) সরিয়ে ফেলা হবে।’’
পুঁজিবাজার উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ‘রোডম্যাপ’ ঠিক করা হববলে জানান তিনি।
অতীতে অনিয়মের শেয়ার লেনদেনগুলো যাচাই করতে একটি দল কাজ শুরু করেছে জানিয়ে রাশেদ মাকসুদ বলেন, “বিগত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারে যেসব অনিয়ম হয়েছে সেগুলো নিয়ে ইমিডিয়েটলি ইনডেপথ রিভিউ করতে হবে। লুপ হোলসগুলো বন্ধ করতে হবে।
“আমরা দেখব এটি কেন হয়েছে, পুনরায় যাতে না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় আইনগুলো রিভিউ করা হবে।”
কারসাজি চক্রের দৌরাত্ম কমানো ও সুশাসন ফিরিয়ে আনতে কয়েক পর্যায়ে কমিশন কাজ করবে।
এজন্য বাজার পর্যবেক্ষণ তৎপরতা বাড়ানো হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “‘আইন-কানুন ও নিয়ম অনেক আছে। অতীতে তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এবার আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ হবে, একইভাবে প্রয়োগ হবে।”
ভালো ও বড় কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগের বিষয়ে রাশেদ মাকসুদ বলেন, “আমরা একটা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করব। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দেখেই তারা আসবেন। আমরা ঘোলা পানিটা পরিষ্কার করতে চাই, তারা স্বচ্ছ পানি দেখতে পেলে সেখানে নামবেন। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ওয়ে (প্রশাসনিক ক্ষমতার ব্যবহার) করে আমরা করব না। সেটা সরকারি ও বেসরকারি উভয় কোম্পানির বেলাতেই।”
দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের নিয়মিত ও স্বাভাবিক কাজে বিএসইসি কোনো হস্তক্ষেপ করবে না, সেজন্য যার যার দায়িত্ব ও কাজ ভাগ করে দেওয়া হবে বলে জানান চেয়ারম্যান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনার মোহসীন চৌধুরী ও এটিএম তারিকুজ্জামান।