২০২৪-২৫ অর্থবছরের চার কর্মদিবসে সূচক বাড়ল ২৩০ পয়েন্ট। লেনদেনও বেড়েছে টানা চার দিন।
Published : 07 Jul 2024, 07:40 PM
টানা দরপতনের মধ্যে নতুন অর্থবছরে পুঁজিবাজারের আচরণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে। টানা চার কর্মদিবসে সূচকের লাফের পাশাপাশি বাড়ল লেনদেনও। হারানো দর ফিরে পেতে শুরু করেছে শেয়ারগুলো।
গত সপ্তাহের মঙ্গল থেকে বৃহস্পতি উত্থানের সুখস্মৃতি নিয়ে নতুন সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার শুরুতে সূচক কমলেও পরে ক্রয় চাপে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬১ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন শেষ হয়।
এ নিয়ে নতুন এই চার দিনেই সূচকে যোগ হল ২৩০ পয়েন্ট।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষদিন রোববার ডিএসইতে লেনদেন ছিল ৭১২ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন তা ৪৪০ কোটি টাকায় নেমে আসলেও টানা চার দিন বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ৯০৮ কোটি ৭৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকায়।
জুনে অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে আগে আয়কর সুবিধা নেওয়ার কারণে সাধারণত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ে। কারণ করযোগ্য আয়ের একটি অংশ বিনিয়োগ করলে তার ১৫ শতাংশ কর ছাড় পাওয়া যায়।
ডিএসইর প্রধান সূচকের অবস্থান এখন গত ১৪ মের পর সর্বোচ্চ, আর রোববারের লেনদেন গত ১৩ মের পর সর্বোচ্চ।
গত ১১ জুন ডিএসইর প্রধান সূচক পাঁচ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি নেমে আসার ঘটনায় হতাশা ও ক্ষোভের মধ্যেই পুঁজিবাজারের ঘুরে দাঁড়ানো শুরু আসলে পরের দিন থেকেই। সেদিন থেকে ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে সূচক কমেছে কেবল দুই দিন, সূচক বেড়েছে ৪৮৮ পয়েন্ট।
নতুন অর্থবছর থেকে পুঁজিবাজারে মূলধনি আয়ে অর্থাৎ শেয়ার কেনা-বেচা করে ৫০ লাখ টাকা মুনাফা করলে করারোপ হয়েছে, যদিও এই প্রস্তাব আরোপ হবে- এমন কথা ছড়িয়ে পড়ার পর মে মাসের মাঝামাঝি থেকে নতুন করে দরপতন শুরু হয়েছিল।
তবে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এসব কিছুই না, ফ্লোর প্রাইস বা দরপতনের সার্কিট ব্রেকার কমিয়ে দিয়ে পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করার প্রভাবের সময় অন্য কোনো আলোচনা প্রাধান্য পায়। দর সংশোধন কৃত্রিমভাবে আটকে রাখার চেষ্টা কখনও ভালো কিছু নিয়ে আসে না। সেই দর সংশোধন শেষে এখন স্বাভাবিক উত্থান চলছে।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘পতনের বাজারে যারা শেয়ার বিক্রি করেছিলেন, তারা কেনা শুরু করেছেন। গত কয়েকদিনে অনেকেই হারানো পুঁজির কিছুটা পেয়েছেন। আশা দেখতে শুরু করেছেন সব ধরনের বিনিয়োগকারী, তাই অনেকেই নতুন করে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।’’
গত চার দিনে সূচকে উন্নতিতে লোকসান কিছুটা পূরণ হয়েছে বলে জানিয়ে বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ মিন্টু সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘প্রায় তিনের একভাগ লস মেকআপ (পুঁজির ঘাটতি পূরণ) করতে পেরেছি। অর্ধেক লসও ফিরে পেলেও নতুন টাকা খাটাব।’’
প্রধান সূচকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খুব একটা বাড়তে পারেনি ডিএসইর অন্য দুই সূচক। শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২১৪ পয়েন্ট হয়। আর তালিকাভূক্ত কোম্পানির মধ্যে ‘সেরা’ ৩০টি নিয়ে গঠিত ডিএস৩০ সূচকও ১৩ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন করছে ১ হাজার ৯৬৪ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া শেয়ারের মধ্যে দর এগিয়ে ছিল ৩০৫ টির, কমে ৬৯ টির ও আগের দরে লেনদেন হয় ২৪টি প্রতিষ্ঠানের।
সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে বাড়ল ২০ কোম্পানির দর
উত্থানের এ বাজারেও দীর্ঘ সময় বিক্রেতা ছিল না ডিএসইর ১২টি প্রতিষ্ঠানের। ২০টি কোম্পানির দর বেড়েছে সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে, অর্থাৎ এক দিনে সর্বোচ্চ যত বাড়তে পারত, ততটাই বেড়েছে।
শতকরা হিসেবে সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের প্রাধান্য দেখা গেছে। এই খাতে ৩৩টির ইউনিট দর বেড়েছে, একটি আগের দিনের দরে ও তিনটি দর হারিয়ে লেনদেন শেষ করেছে। যে ২০টি কোম্পানির দর সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করেছে, তার ছয়টিই এই খাতের।
খাতওয়ারি হিসাবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কোম্পানির দর বেড়েছে বীমা খাতে। এই খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৫৪টির। এর মধ্যে সাধারণ বীমার ৩৯টি কোম্পানি ও জীবন বীমার আছে ১৫টি কোম্পানি। সাধারণ বীমার একটি কোম্পানি আগের দিনের দরে আর তিনটি দর হারিয়ে লেনদেন শেষ করেছে।
প্রকৌশল, বস্ত্র, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাতের বিনিয়োগকারীরাও হাসিমুখে দিন শেষ করেছেন।
সব মিলিয়ে ৩০৫টি কোম্পানির দর বেড়ে, ৬৯টি হারিয়ে এবয় ২৪টি আগের দিনের দরে লেনদেন শেষ করেছে।
লেনদেন বৃদ্ধির শীর্ষ দশে ছিল অ্যাপোলো ইস্পাত, ডেল্টা স্পিনার্স, খান ব্রাদার্স পিপিওভেন, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল, জিলবাংলা সুগার, ফার্স্ট প্রাইম ফাইন্যান্স মিউচুয়াল ফান্ড, ডরেন পাওয়ার, আইসিবি থার্ড এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড, রিং শাইন টেক্সটাইলস ও জিবিবি পাওয়ার।
এদিন ১০ শতাংশ দর বেড়েছে দুটি কোম্পানির, ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে ১২টির, আট শতাংশের বেশি বেড়েছে ১০টির, ৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে পাঁচটির, ৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে ৯টির এবং ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে ২৭টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর।
খাতওয়ারি লেনদেন সবচেয়ে বেশি হয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১৪০ কোটি টাকা। মোট লেনদেনের ১৭ শতাংশই হয়েছে এই খাতটিতে।
খাদ্য খাতে ১১ শতাংশের কিছুটা বেশি, প্রকৌশল খাতে ১০ শতাংশের কিছুটা বেশি এবং বস্ত্র খাতে প্রায় ১০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে।
উত্থানের এই দিনেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেঁধে দেওয়ার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশের কাছাকাছি দর হারিয়েছে বেশ কিছু কোম্পানি।
এগুলো হল নিউলাইন ক্লথিং, ওয়ালটন হাইটেক, জাহিন টেক্সটাইলস, গোল্ডেন জুবিলি মিউচুয়াল ফান্ড, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, রহিমা ফুড ও ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড।