নূরানী ডাইংয়ে জালিয়াতি: সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে মামলা করবে বিএসইসি

ব্যাপক জালিয়াতির মাধ্যমে কোম্পানিটির সংশ্লিষ্টরা বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2022, 07:51 PM
Updated : 28 Sept 2022, 07:51 PM

আইপিও অর্থ আত্মসাৎ ও আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় তালিকাভুক্ত নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

বুধবার কমিশন সভায় বিভিন্ন সময়ে কোম্পানিটির ব্যাপক আর্থিক কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কোম্পানির উদ্যোক্তা, পরিচালক, তিন ইস্যু ম্যানেজার, নিরীক্ষক ও আইপিও বাস্তবায়নের তথ্য নিরিক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

এতে বলা হয়, “কমিশনের তদন্ত কমিটি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) রিপোর্টের আলোকে নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার লিমিটেড কোম্পানি এর উদ্যোক্তা ও পরিচালক, সংশ্লিষ্ট ইস্যু মানেজার এবং উক্ত সময়ে স্ট্যাচুটরি অডিটর, আইপিও তহবিল ব্যবহার যাচাইয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত অডিটরের বিরুদ্ধে শেয়ারহোল্ডারদের বিভিন্নভাবে প্রতারিত করা ও প্রতারণা কার্যক্রম সহযোগিতা করায় ‘এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন’ ও ফৌজদারি মামলা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।’’

প্রসপেক্টাসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের তালিকাভুক্ত হওয়ার সময়ে কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিল ইমপেরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেড, ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও সিএপিএম এডভাইজরি লিমিটেড।

আর আন্ডার রাইটারের দায়িত্বে ছিল এএফসি ক্যাপিটাল, ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। আর নিরীক্ষক হিসেবে ছিল আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি হতে আইপিও (প্রাথমিক গণ প্রস্তাব) এর প্রসপেক্টাসে দেওয়া ২০১৭ সালে কোম্পানির ঋণ তথ্যে গড়মিল পায় বিএসইসির তদন্ত দল।

ঋণ পরিমাণের তথ্য লুকানো, আইপিওর অর্থের ব্যবহার ও পরিচালকদের ঋণ গ্রহণ যাচাই করতে তদন্ত কমিটি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বিএসইসি জানিয়েছে, সেই তদন্তে বেরিয়ে আসে নূরানী ডাইং প্রসপেক্টাসে দেখিয়েছে ২০১৭ সালে কোম্পানির ঋণদায় ছিল এবি ব্যাংকে ৫৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ও ৪২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। কিন্তু তদন্তে দেখা গেছে ঋণ দায়ের পরিমাণ হচ্ছে ২০১৮ সালে ১৬৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, ২০১৯ সালে ১৯২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং ২০২০ সালে যা দাঁড়ায় ২১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

“এভাবে কোম্পানিটির ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা গোপন করা হয়; যার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের চাঁদা অংশগ্রহণকারীরা বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে প্রতারিত হন,” বলে বিএসইসি জানিয়েছে।

অপরদিকে আইপিও এর মাধ্যমে উত্তোলিত ৪৩ কোটি টাকা ব্যাংক বিবরণী জালিয়াতি করে নগদায়ন করে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট (সিস্টার) কোম্পানিকে দিয়ে ৪১ কোটি ১৪ লাখ টাকাই আত্মসাৎ করে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় বিএসইসি।

এতে বলা হয়, কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত তিন ইস্যু ম্যানেজার প্রসপেক্টাস ও এসব বিষয়ে তথ্যের সত্যতা সম্পর্কিত নিশ্চয়তা দেয়। এভাবে কোম্পানির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা বিনিয়োগকারীদের কাছে গোপন করা হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘‘২০১৯ ও ২০২০ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী ও প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ইস্যুয়ার কোম্পানি কর্তৃক প্রকাশিত হিসাব বিবরণীর রপ্তানি আয়, বিক্রয় ও দেনাদারের স্বপক্ষে বিভিন্ন প্রমাণপত্র, যেমন- পিআরসি, টিডিএস সার্টিফিকেট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি কাগজপত্র জালিয়াতি করা হয়। এই সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অডিটরস কৃর্তক এ সংক্রান্ত ক্লিন রিপোর্ট প্রদান করে। আর ওই সময়ে কোম্পানিটির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।’’

এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে প্রতারিত হন বলে বিএসইসির তদন্তে বেরিয়ে আসে।

এছাড়াও কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকেদের বিও হিসাবে থাকা ৩০ দশমিক ৯৩ শতাংশ শেয়ার যমুনা ব্যাংক ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের কাছে জামানত রেখে মার্জিন ঋণ গ্রহণ করে তসরুফ করা হয়। এই মার্জিন ঋণ পরে খেলাপিতে পরিণত হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

এসব অপরাধে বুধবারের কমিশন সভায় ফৌজদারি মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে বিএসসি।

২০১৭ সালে তালিকাভুক্ত বস্ত্রখাতের কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১২২ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং অনুমোদিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭ টাকায়।

২০২০ সালে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। এর উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে শেয়ার রয়েছে ৩০ দশমিক ৯৩ শতাংশ।