পুঁজিবাজার নেতৃত্বে আসতে পারে, সে পথেই রয়েছি: পরিকল্পনামন্ত্রী

“বাংলাদেশের অর্থনীতিকে উঠতি বয়সী তরুণের সঙ্গে তুলনা করে মান্নান বলেন, “টিনএজার হওয়ায় এর একটা উদ্যম রয়েছে, কিছুটা লাফালাফিও রয়েছে, তাই এটাকে নজরদারি করতে হচ্ছে।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2023, 10:44 AM
Updated : 4 June 2023, 10:44 AM

দেশের পুঁজিবাজারের দশা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অনেকের হতাশা থাকলেও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান আশাবাদী ।

তার ভাষ্য, উন্নয়নশীল বিশ্বে পুঁজিবাজার উপেক্ষিত, বাংলাদেশেও একই বিষয় হয়েছে। দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন চলকে পুঁজিবাজার এখনো স্থান নিতে পারেনি।

“কিন্তু পুঁজিবাজার নেতৃত্বে আসতে পারে। আমরা সে পথেই রয়েছি। এখানে আমাদের আরেকটু নজরদারি করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।”

ঢাকার পল্টনে পুঁজিবাজারভিত্তিক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে রোববার বাজেট বিষয়ক এক আলোচনাসভায় কথা বলছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ক্যাপিটাল মার্কেট ডমিনেন্ট বা ড্রাইভ দিতে পারে এমন অর্থনীতি আমাদের হয়নি। আমরা সেদিকে যাচ্ছি। উই আর অন দ্য ওয়ে। উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশে যেতে হলে প্রয়োজন অর্থের। পুঁজিবাজার সেই অর্থায়নের উৎস হতে পারে। আমরা সেদিকে যাব, পুঁজিবাজারের মাধ্যমে আমাদের অভিযাত্রা শুরু হবে।”

‘ডিসকাশন অন বাজেট ২০২৩-২৪: ক্যাপিটাল মার্কেট পারসপেক্টিভস’ শীর্ষক এই আলোচনাসভার আয়োজন করে সিএমজেএফ ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি।

গত ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করা হয়। সেখানে পুঁজিবাজার নিয়ে নতুন কোনো উদ্যোগ না থাকার বিষয়টি উঠে আসে সিএমজেএফের আলোচনা সভায়।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম বলেন, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য ‘কিছুই রাখা হয়নি’। অতালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ব্যবধান বৃদ্ধি, এক্সপোজার সীমার বাইরে বন্ড ও সকল ফান্ডকে রাখার দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু তার কোনো প্রতিফলন বাজেটে নেই।

সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, “বাজেটে যখন পুঁজিবাজারের উপস্থিতি থাকে না, তখন বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি বার্তা যায়, সরকার পুঁজিবাজার নিয়ে ভাবছে না। আমরা আশা করব প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় পুঁজিবাজার স্থান পাবে।

“আমরা যেখানে বলছি, স্মার্ট বাংলাদেশ অভিযাত্রার দিকে যাত্রা শুরু করেছি। সেখানে প্রথাগত আর্থিক খাতকে অর্থায়নের উৎস হিসেবে ধরে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব না।”

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএইসই) চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু বলেন, “পৃথিবীর অনেক দেশই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে পুঁজিবাজার। কিন্তু সম্ভাবনা থাকা স্বত্বেও কেনো যেন আমাদের দেশের পুঁজিবাজার সেই অবস্থানে যেতে পারছে না। সরকারের একটু হাতের ছোঁয়া পেলে আমাদের পুঁজিবাজার অনেক কিছুই দিতে পারবে। এখানে সেই সম্ভাবনা রয়েছে।”

তিনি বলেন, “রাজস্ব আহরণে পুঁজিবাজার থেকেই বড় যোগান দিতে পারবে। দেশীয় কোম্পানির বিকাশে তাদের সহযোগিতা করতে কর ছাড় দেওয়া উচিত।”

আলোচনায় তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর হার ব্যবধান আরও বাড়ানোর দাবি ওঠে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অ-তালিকাভূক্ত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট। তবে ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকম, ট্যোবাকো ইত্যাদি খাত এর আওতার বাহিরে।

এই ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কর রেয়াত ‘উদ্যোক্তাদের তালিকাভুক্তি হতে উদ্বুদ্ধ করছে বলে না’ মন্তব্য করে বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের পার্থক্য বাড়ানোর দাবি জানান।

তিনি বলেন, “লভ্যাংশের ওপর দ্বৈত কর প্রত্যাহার, বন্ডের উপর অগ্রিম যে কর কেটে রাখা হয় তা ‍চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করা, লেনদেন কর নামিয়ে শূন্য দশমিক ০১৫ শতাংশ করা, বর্তমানে এটি শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশে রয়েছে।”

এছাড়া বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ডকে পুঁজিবাজার এক্সপোজার এর বাইরে রাখলে পুঁজিবাজার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে মত দেন তিনি।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দাবি প্রসঙ্গে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ব্যবধান বাড়ানো যেতে পারে জানিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, “লভ্যাংশে দ্বৈতকর থাকা উচিত নয়। এটি কেন হবে, একজন মানুষ একবারই কর দিবে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট হওয়ায় আমি বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলব।’’

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে উঠতি বয়সী যুবকের সঙ্গে তুলনা করে মান্নান বলেন, “কোনো সন্দেহ নেই, আমাদের অর্থনীতি তরুণ ও টিনএজার অর্থনীতি। টিনএজার হওয়ায় এর একটা উদ্যম রয়েছে, কিছুটা লাফালাফিও রয়েছে, তাই এটাকে নজরদারি করতে হচ্ছে।

“কৈশোরে উপনীতদের যেমন বিশেষ যত্ন নিতে হয়, তেমনি আমাদের বিকাশমান অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারকে চালকের আসনে নিয়ে যেতে যত্ন নিতে হবে। এখানে একটু নজরদারি-তদারকি করা লাগবে। দেশের অর্থনীতির আগের বেশি তথ্যনির্ভর ও জ্ঞাননির্ভর হচ্ছে। এখন বিজনেস সংগঠনগুলোও আগের চেয়ে বেশি দক্ষ। সর্বক্ষেত্রে সংস্কার করা দরকার, তবে আর্থিক খাত হিসেবে ব্যাংক ও এনবিআর এ সংস্কার খুবই জরুরি। আমরা সেখানেও কাজ করব।”

মন্ত্রী বলেন, “উন্নয়নশীল দেশে পুঁজিবাজার উপেক্ষিত থাকে। এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারের বিষয়টি সেভাবে না এলেও আমি বাজেটে আনার জন্য লিখিত আকারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানাব।”

বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্ত হন– এমন উদ্যোগ নেওয়ার দাবি করেন সিএমজেএফ সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।

ডিবিএ প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, “কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে তার সুশাসন বাড়ে। সরকারের রাজস্ব বাড়ে। তাই সরকারের উচিত পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বন্ড মার্কেট গড়তে সহায়তা দেওয়া।”