তালিকাভুক্তির পর সর্বোচ্চ আয়ে রবির ‘সবচেয়ে বেশি’ লভ্যাংশ

২০২০ সালে ইপিএস ছিল ৩৩ পয়সা। লভ্যাংশ দেয়নি রবি। পরের বছর তা বেড়ে হয় ৩৪ পয়সা, লভ্যাংশ আসে ৫ শতাংশ। এবার ইপিএস ৩৫ পয়সা, লভ্যাংশ ৭ শতাংশ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2023, 01:29 PM
Updated : 16 Feb 2023, 01:29 PM

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর তৃতীয় বছরে এসে ৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর রবি।

অর্থাৎ, বিনিয়োগকারীরা প্রতি শেয়ারে পাবেন ৭০ পয়সা করে। বৃহস্পতিবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ গত ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করে এই লভ্যাংশ দেয়ার প্রস্তাব করেছে।

পরিচালনা পর্ষদের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে রবি শেয়ার প্রতি আয় করেছে রেকর্ড ৩৫ পয়সা। অর্থাৎ, যত আয় হয়েছে, তার দ্বিগুণ লভ্যাংশ দেবে কোম্পানি। সেজন্য তাদের হাত দিতে হবে রিজার্ভে।

কোম্পানিটির রিজার্ভে আছে ১ হাজার ৩৮০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এখান থেকে পৌনে দুই শ কোটি টাকা খরচ হবে লভ্যাংশ বিতরণে।

আগের বছর এই আয় ছিল ৩৪ পয়সা। সে বছর ৫ শতাংশ নগদ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা করে বিতরণ করা হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। 

২০২০ সালে পুঁজিবাজারে আসার বছরে শেয়ার প্রতি ৩৩ পয়সা আয় করে কোনো লভ্যাংশ দেয়নি রবি, যা বহুজাতিক কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীদের হতাশ করে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকের পর ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিক শেষে ৩ শতাংশ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ৩০ পয়সা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দেওয়া হয়। পরে চূড়ান্ত লভ্যাংশ দেওয়া হয় ২ শতাংশ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ২০ পয়সা।

এই হিসাবে ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর শেয়ার প্রতি কেবল এক পয়সা করে আয় বাড়াতে পেরেছে রবি, যেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রামীণ ফোনের আয়ের প্রবৃদ্ধি অনেকটাই বেশি।

সদ্য সমাপ্ত বছরের যে আয়, তার সিংহভাগেই হয়েছে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে। এই প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ২৪ পয়সা আয় করেছে এ কোম্পানি। আগের তিন প্রান্তিক মিলিয়ে আয় ছিল ১১ পয়সা।

আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ৫ হাজার ২৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি রবি এবার আয় করেছে ১৮৩ কোটি ৩২ লাখ ৭৬ হাজার ৫১৩ টাকার মত।

আয়ের পাশাপাশি রবির সম্পদমূল্যও গত এক বছরে কিছুটা বেড়েছে। ২০২১ সাল শেষে ৬ হাজার ৬২১ কোটি টাকার সম্পদ ছিল কোম্পানির। ২০২২ সাল শেষে তা বেড়ে ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা হয়েছে।

রবির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য ২০২১ সাল শেষে ছিল ১২ টাকা ৬৪ পয়সা, এক বছর পর তা বেড়ে ১২ টাকা ৮২ পয়সা হয়েছে।

কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি অর্থপ্রবাহ বেড়েছে অনেকটাই। ২০২১ সালে তা ছিল ৬ টাকা ২২ পয়সা, যা এক বছর পর বেড়ে হয়েছে ৭ টাকা ১২ পয়সা।

আগামী ১৩ মার্চ যাদের হাতে শেয়ার থাকবে, তারাই লভ্যাংশ পাওয়ার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন। অর্থাৎ সেদিনই হবে রেকর্ড ডেট। আর লভ্যাংশ চূড়ান্ত করতে বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম ডাকা হয়েছে আগামী ২৫ এপ্রিল।

২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় রবির। ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেইস ভ্যালুতে ৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৪টি শেয়ার ছেড়ে প্রায় ৫২৪ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিকম অপারেটর।

২০০৯ সালে গ্রামীণফোন তালিকাভুক্তর প্রায় এক যুগ পর রবির পুঁজিবাজারে আসা নিয়ে বেশ উচ্চাশার কথা বলাবলি হচ্ছিল। বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও ছিল বেশ আগ্রহ। তবে উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে পরে বিপাকে পড়েন বিনিয়োগকারীরা।

লেনদেন শুরু হওয়ার পর প্রতিদিনই দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি দর উঠে যায় ৭৭ টাকা ১০ পয়সায়। এরপর দর হারাতে হারাতে এখন কোম্পানির শেয়ারদর বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস ৩০ টাকায় নেমেছে।

তবে এই দরে শেয়ারের ক্রেতা নেই বললেই চলে। লভ্যাংশ ঘোষণার দিন কেবল ৩৫২টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। প্রতিদিন লাখ লাখ শেয়ার বিক্রির জন্য অর্ডার বসানো থাকে। কিন্তু দিনশেষে হতাশ হতে হয় বিনিয়োগকারীদের।

গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে এই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে কেবল গত ৩০ নভেম্বর একদিন ৫৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩৯৪টি শেয়ার হাতবদল হয়।