সূচকের সঙ্গে লেনদেন কমার পেছনে বিনিয়োগকারীদের ‘মনস্তাত্ত্বিক কারণ’ দেখছেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
Published : 14 Jul 2024, 07:40 PM
বিক্রির চাপে সপ্তাহের প্রথম দিন আবারও সূচকের পতন ঘটেছে ঢাকার পুঁজিবাজারে; টানা তিন দিনের পতনে সব মিলিয়ে ১১২ পয়েন্ট হারিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স।
রোববার শুরুতে সূচক ঊর্ধ্বমুখী হলেও মিনিট দশেক পর শুরু হয় পতন। এক পর্যায়ে সূচক নেমে যায় ৫ হাজার ৪৫৭ পয়েন্টে।
এরপর উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয় সূচকে ৫ হাজার ৪৮২ পয়েন্ট নিয়ে, যা আগের দিনের চেয়ে ২৪ পয়েন্ট কম।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় দিন একটানা উত্থানে সূচকে যোগ হয়েছিল ২৬৬ পয়েন্ট। সেখান থেকে তিন দিনে প্রায় ১১২ পয়েন্ট কমল। তাতে গত ৯ কার্যদিসে ডিএসইএক্স সূচক এগোল ১৫৪ পয়েন্ট।
রোববার ডিএসইতে লেনদেন খানিকটা কমে ৬২২ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট হাতবদল হয়েছে। এর আগের পাঁচ দিনই লেনদেন ৯০০ কোটি থেকে হাজার কোটি টাকার ঘরে ছিল।
সূচকের সঙ্গে লেনদেন কমার পেছনে বিনিয়োগকারীদের ‘মনস্তাত্ত্বিক কারণ’ দেখছেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এটা ঠিক যে, সূচক গত কয়েকদিনে আড়াইশ পয়েন্টের বেশি বেড়েছিল। সূচক বাড়লে দর সংশোধন হবে, এটাই স্বাভাবিক আচরণ। কিন্তু একটানা তিন দিন সংশোধন হওয়ার কথা না।
“অর্থনীতির বিভিন্ন নেতিবাচক খবরের প্রভাব হয়ত তাদের মনে পড়েছে। এ কারণে সূচকের উত্থান-পতনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কখনো বিক্রি করেছে, আবা কখনো কিনেছে। শুধুই বিক্রি করলে লেনদেন আরো কমে যেত, সূচকও পড়ত। এটি মনস্তাত্বিক কারণ।’’
পুঁজিবাজারের একটি ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন শেষে বিনিয়োগ উপদেষ্টা হওয়া আফতাব উদ্দিন এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আচরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। দেশে ডলার নেই– এমন খবর তো গতকাল ও আজকের মিডিয়াতে বের হয়েছে। ডলার সংকটের কথা শুনলেও বিনিয়োগকারীরা একটু সচেতন হয়ে সাইডলাইনে যাবেন।’’
১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ধসের পর সামম্প্রতিক দীর্ঘ সময়ে ধীরে ধীরে সূচকের পতন পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারিদের বেশি সচেতন করেছে বলে মনে করেন তিনি।
আফতাব উদ্দিন বলেন, “এখন অল্পতেই ঘাবড়ে গিয়ে বিনিয়োগকারীরা লেনদেন থেকে গুটিয়ে নেন। গত কয়েক দিনের বিভিন্ন রকম খবরে বাড়তি সতর্ক হতেই অধিকাংশ বিনিয়োগকারী লেনদেন কমিয়েছেন।’’
আবার কিছু শেয়ারের দর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বেড়েছে গত কয়েক দিন। আর একদিনের দর বৃদ্ধির সমপরিমাণ সংশোধন হতে তিন দিন লাগে, কারণ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন কোনো কোম্পানির শেয়ার দর এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারে না। সে কারণে সংশোধনের পর্যায় দীর্ঘ হতে পারে বলে মন্তব্য করেন আফতাব।
রোববারও লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। দিন শেষে মোট লেনদেনের প্রায় ১৮ শতাংশ অবদান এ খাতের ৩৩ কোম্পানির। এ খাতের লেনদেনে আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৯টি দর হারিয়েছে, বেড়েছে ১৩টির।
লেনদেনের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে খাদ্য ও অনুসঙ্গিক খাত এবং প্রকৌশল খাতের শেয়ার রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে।
খাতভিত্তিক শেয়ার দর হারানোর তালিকায় সবার উপরে ছিল বস্ত্রখাতের কোম্পানি। লেনদেন শেষে ৫৮টির মধ্যে দর হারিয়েছে ৫১টি, আগের দিনেও এ খাতের কোম্পানির শেয়ার দর কমেছিল সবচেয়ে বেশি।
একক কোম্পানি হিসেবে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে তিন বহুজাতিক রেকিট বেনকিজার, ইউনিলিভারস ও ম্যারিকো। আগের দিনেও এ তিন কোম্পানি লেনদেনের শীর্ষে ছিল।
বিতর্কিত কোম্পানি ফার কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারের দর এদিন ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়ছে। আগের কার্যদিবসের চেয়ে ২ টাকা বেড়ে লেনদেন হয়েছে ২২ টাকা ৫০ পয়সায়।
দর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা হাইডেলবার্গ মেটেরিয়ালের শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে ২৩ টাকা ৯০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ। সবশেষ লেনদেন হয়েছে ২৯৭ টাকা ৪০ পয়সায়।
আর ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়ে তৃতীয় স্থানে উঠেছে আমান কটন। এরপরে রয়েছে লাভেলো আইসক্রিম, জেমিনি সি ফুড, আমান ফিড, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, সোনালী আঁশ, জিকিউ বলপেন ও প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।
প্রায় তিন শতাংশ দর পতন হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দর হারানো কোম্পনির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এরপরই রয়েছে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, লিন্ডে বাংলাদেশ, সি পার্ল বিচ, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, মীর আক্তার হোসেন স্পিনিং, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ওয়াটা কেমিকেলস এবং ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
দিন শেষে হাতবদল হওয়া শেয়ারের মধ্যে দর বাড়ে ৭০টির, কমে ৩৯৭টির এবং ৩০টি কোম্পনির শেয়ার আগের দরে লেনদেন হয়।