কাতার বিশ্বকাপ থেকে ইরানকে বহিষ্কারের দাবি

ইরানে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে ফিফার কাছে এই দাবি জানিয়েছে একটি নারী অধিকার গোষ্ঠী।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2022, 01:00 PM
Updated : 30 Sept 2022, 01:00 PM

ইরানে পুরুষদের ফুটবল ম্যাচে নারী দর্শকদের স্টেডিয়ামে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। এজন্য ইরানকে কাতার বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে আগেও। সম্প্রতি পুলিশ হেফাজতে এক তরুণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যখন বিক্ষোভে উত্তাল পশ্চিম এশিয়ার দেশটি, তখন পুরনো দাবি নতুন করে উঠেছে আরও একবার।

ইরানে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দেশটিকে বৈশ্বিক আসর থেকে বহিষ্কারের এই দাবি জানিয়েছে ‘ওপেন স্টেডিয়ামস’ নামের একটি নারী অধিকার গোষ্ঠী। ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর কাছে বৃহস্পতিবার পাঠানো চিঠিতে তারা বলেছে, ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্তা সংস্থার চাপ সত্ত্বেও দেশের অভ্যন্তরে নারী দর্শকদের স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।  

“ইরানিয়ান এফএ কেবল শাসকগোষ্ঠীর অপরাধের সহযোগী নয়, ইরানের নারী দর্শকদের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকিস্বরূপ; সেটা আমাদের জাতীয় দল বিশ্বের যেখানেই খেলুক না কেন। ফুটবল আমাদের সবার জন্য একটি নিরাপদ স্থান হওয়া উচিত।”

“তাই আসন্ন ফিফা বিশ্বকাপে ইরানের অংশগ্রহণের বিষয়ে ইরানি ফুটবল সমর্থক হিসেবে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করতে হচ্ছে।”

ফিফাকে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ওই নারী অধিকার গোষ্ঠী।

"ফিফা কেন ইরানি রাষ্ট্র ও তার প্রতিনিধিদের বৈশ্বিক মঞ্চে স্থান দেবে, যখন তারা মৌলিক মানবাধিকার ও মর্যাদাকে সম্মান করতে শুধু অস্বীকারই করে না, বর্তমানে নিজেদের জনগণকে নির্যাতন ও হত্যাও করছে।”

“এই বিষয়ে ফিফার নীতিগুলি কোথায়? তাই আমরা ফিফাকে তার আইনের ৩ ও ৪ অনুচ্ছেদের ওপর ভিত্তি করে অবিলম্বে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ থেকে ইরানকে বহিষ্কার করতে বলছি।”

ফিফার এই অনুচ্ছেদগুলিতে লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম ও অন্যান্য বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে মানবাধিকার এবং সমতার বিষয়গুলির উল্লেখ আছে। এর লঙ্ঘন সংস্থাটি থেকে স্থগিত বা বহিষ্কারের শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি ফিফা বা ইরানের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।

পুলিশ হেফাজতে কুর্দি নারী ২২ বছর বয়সী মাশা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবারও ইরানের বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা এই বিক্ষোভে অন্তত ৮৩ জনের প্রাণ গেছে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লব হওয়ার পর থেকে শত্রুভাবাপন্ন পশ্চিমা শক্তিগুলো ইরানের বিরুদ্ধে কাজ করে চলছে এবং এই অস্থিরতার পেছনেও কলকাঠি নাড়ছে তারা।

ওই অভ্যুত্থানের পর থেকেই ইরানে নারী দর্শকদের স্টেডিয়ামে গিয়ে পুরুষদের খেলা দেখা নিষিদ্ধ। তবে দেশটির কোনো আইনে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেই বলে এর আগে জানিয়েছিল মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’।

নারীদের স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য গত এক দশক ধরে প্রচারণা চালিয়ে আসছে ‘ওপেন স্টেডিয়ামস’। তবে সাফল্য মিলেছে সামান্য।

ফিফা প্রেসিডেন্ট ইনফান্তিনোর চাপে তেহরানে ২০১৮ এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পার্সপোলিসের হোম ম্যাচে কিছু সংখ্যক নারী দর্শককে স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু গত মার্চে মাশাদে লেবাননের বিপক্ষে ইরানের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে নারী দর্শকদের স্টেডিয়ামে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। স্টেডিয়ামের বাইরে নারী দর্শকদের ওপর পেপার স্প্রে করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল তখন।

এই মাসের ফিফা উইন্ডোতে উরুগুয়ে ও সেনেগালের বিপক্ষে ইরান দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছে অস্ট্রিয়ায় গিয়ে। নিরাপত্তাজনিত কারণে দুটি ম্যাচই হয়েছে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে।

এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে ইরান। ‘বি’ গ্রুপে তাদের তিন প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও যুক্তরাষ্ট্র।