এশিয়ান জুনিয়র স্কোয়াশে অনূর্ধ্ব-১৩ ব্যক্তিগত প্লেট ইভেন্টে সেরা হওয়া আরাফাতকে বরণ করে নেওয়া হলো আয়োজন করে।
Published : 22 Aug 2023, 11:05 AM
ওয়ার্ল্ড স্কোয়াশ ফেডারেশনের ফেইসবুক পেজে দেওয়া একদল উঠতি স্কোয়াশ খেলোয়াড়ের ছবি। সেখানে সম্মুখ সারিতেই এক কিশোরের গায়ে লাল-সবুজের পতাকাখচিত ‘বাংলাদেশ’ লেখা জার্সি। মুখে স্মিত হাসি। গলায় ঝোলানো পদকটি এক হাতে ধরা, অন্য হাতে সার্টিফিকেট। এশিয়ান জুনিয়র স্কোয়াশ ইনডিভিজ্যুয়াল চ্যাম্পিয়নশিপসে দেশের মুখ উজ্জ্বল করা এই কিশোরের নাম আরাফাত মোল্লা।
চীনে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতার অনূর্ধ্ব-১৩ বয়সীদের নিয়ে হওয়া প্লেট ইভেন্টের ফাইনালে হংকংয়ের প্রতিযোগীকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে সেরা হয় আরাফাত।
দেশের বাইরে প্রথম খেলতে গিয়ে বাজিমাত করা আরাফাত সোমবার মাঝরাতে যখন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন, বাইরে তখন তার জন্য অপেক্ষমাণ গণমাধ্যমকর্মীরা। বেশ আয়োজন করেই বরণ করে নেওয়া হলো তাকে।
বেশ পরিণত কণ্ঠেই এই কিশোর শোনাল তার ভবিষ্যতের লক্ষ্য। বাবা-মায়ের ত্যাগের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি সামনের পথচলায় পৃষ্ঠপোকদের পাশে পাওয়ার আশাবাদও জানাল সে।
“আমার পরিবার, আমাদের পৃষ্ঠপোষক, স্যার, কোচ, সবাই আমাদের পেছনে অনেক পরিশ্রম করেছে, সাহায্য করেছে। তাদের কারণে আমরা এই পর্যায়ে গিয়েছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা করব। সত্যি বলতে প্রথমবার (বিদেশ ভ্রমণ) আমি একটু নার্ভাস ছিলাম। এই প্রথম গিয়েছি (দেশের বাইরে) টুর্নামেন্ট খেলতে….কিন্তু যদি নার্ভাস হয়ে খেলতাম, তাহলে হারতাম, জিততাম না। ভেবেছি ভালো খেলতে হবে, অনেক আশা নিয়ে পাঠিয়েছে। স্পন্সররা বলেছে, ‘তোমরা যদি ভালো খেলতে পারো, তাহলে আমরা তোমাদের পাশে আছি, তোমাদের কোনো চিন্তা করতে হবে না।”
“সবকিছু আমার চোখের সামনে দেখা। আম্মু আমার জন্য নিজের শখের জিনিস (সোনার গয়না) বিক্রি করে দিয়েছে। তারপরও আমার খেলা চালিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। এটার তো প্রতিদান দিতে হবে। এখানে আমাদের বড় ভাইয়েরা আছে, স্যারেরা আছেন, স্পন্সররা আছে, সবাই আমাদেরকে অনেক সাহায্য করেছে। তাদের সাহায্য ছাড়া এটা আসলে সম্ভব হতো না।”
এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ১৩ অগাস্ট ঢাকা ছাড়ে সাইমুন ইসলাম, আরাফাত, আমিনুল ইসলাম ও পারভেজ করিমকে নিয়ে গড়া চার সদস্যের বাংলাদেশ দল। আসরে এশিয়ার ১৬ দেশ থেকে অংশ নেয় ২২৬ খেলোয়াড়।
অনূর্ধ্ব-১৩, ১৫, ১৭ ও ১৯- এই চার বয়সভিত্তিক ক্যাটাগরিতে ছেলে-মেয়ে দুই বিভাগে মোট আটটি ফাইনাল হয়েছে। সেখানে আলো ছড়িয়েছে মালয়েশিয়া, হংকং, পাকিস্তান ও ভারতের মতো দেশগুলোর প্রতিযোগীরা। আরাফাত সেরা প্লেট ইভেন্টে।
প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দলের পৃষ্ঠপোষকতা করে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক; সহযোগী পৃষ্ঠপোষকতা করে ইস্পাহানি গ্রুপ। এই দুই পৃষ্ঠপোষকের সহযোগিতায় ইরানি কোচ মহসিন জাভেদের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম ক্লাবে দলকে দেওয়া হয়েছিল নিবিড় প্রশিক্ষণ।
সেই প্রস্তুতির ফল পেয়ে খুশি স্কোয়াশের সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) জি এম কামরুল ইসলাম। ‘মৃতপ্রায়’ খেলাটিকে জাগিয়ে তুলতে দিতে কিছু দাবি-দাওয়া জানালেন তিনি।
“এটা অবশ্যই একটা বড় অর্জন। আমরা একটা স্বাধীন দেশের মানুষ, আমরা শুধু দেশ থেকে নেব, এটা নয়। দেশকেও কিছু ফিরিয়ে দিতে হবে, পারফর্ম করতে হবে। আপনারা জানেন, স্কোয়াশ বাংলাদেশে একটা মৃতপ্রায় খেলা, আমরা পুনর্জীবন দেওয়ার চেষ্টা করছি আমাদের সীমিত সামর্থ্যের মাধ্যমে…আমি কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী পেয়েছি, কিন্তু পর্যাপ্ত সমর্থন এখনও পাইনি। তারপরও আমাদের যা আছে, তা নিয়েই দেশের জন্য কিছু করতে চাই। আমাদের জুনিয়র বাচ্চারা, যারা এশিয়ান পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করল, প্রায় ৫০ বছরে আমরা প্রথম পদক পেলাম। এটা সত্যিই গর্বের ব্যাপার। বাচ্চাদেরকে আমরা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই, দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই যেন আমরা ভবিষ্যতে আরও ভালো করতে পারি।”
“আমরা মোটাদাগে কিছু জিনিস চাই। জেলা পর্যায়ে রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, পাবনা, মৌলভীবাজার এসব জায়গায় স্কোয়াশ কোর্ট আছে, আমরা চাই দ্রুত এগুলো সংস্কার করে যেন খেলাধুলা শুরু করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, এমনকি ঢাকা মেডিকেল যেখানে দুটো স্কোয়াশ কোর্ট আছে, খেলাধুলা হয় না, মানুষ বসবাস করে, আমরা চাই এগুলোকে পুনরায় চালু করা হোক। আমরা চাই স্কোয়াশ নতুন করে প্রাণ ফিরে পাক।”
ইরানি কোচ মহসিন জাভেদ প্রতিশ্রুতি দিলেন আগামীতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও সাফল্য পাওয়ার।
“আমার অনুভূতি…শুধু নিজের জন্য নয়, এই দেশের জন্যই এই আমি অর্জনে খুশি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, এটা স্রেফ শুরু, আমরা যে আসছি, এটা অন্য দেশগুলোকে দেখানোর চেষ্টা করেছি এবং এটাই প্রথম টুর্নামেন্ট, কিন্তু আমি নিশ্চিত পরের টুর্নামেন্টে আমাদের আরও বড় পরিকল্পনা থাকবে এবং হয়ত অদূর ভবিষ্যতে আপনারা আরও বেশি অর্জন দেখতে পাবেন।”