জন্মভূমিকে হারাতে উদগ্রীব হাকিমি

বিশ্বকাপের নকআউট পর্বেও চমক দেখানোর ব্যাপারে আশাবাদী মরক্কোর মিডফিল্ডার আশরাফ হাকিমি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2022, 04:16 PM
Updated : 5 Dec 2022, 04:16 PM

মাদ্রিদে জন্ম নেওয়া আশরাফ হাকিমি চাইলেই স্পেনের হয়ে খেলতে পারতেন। সেই সুযোগও এসেছিল। কিন্তু তা না করে তিনি বেছে নেন মরক্কোকে। এটি যে তার পিতৃভূমি। সেই দেশের হয়ে এবার বিশ্বকাপে জন্মভূমিকে হারানোর ছবি আঁকছেন এই মিডফিল্ডার। 

শেষ ষোলোর ম্যাচে আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত ৯টায় স্পেনের মুখোমুখি হবে মরক্কো। প্রথমবার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার হাতছানি উত্তর আফ্রিকার দেশটির সামনে। 

বড় সংগ্রামের জীবন হাকিমির। সংগ্রামটা করেছেন তার মরক্কোন বাবা-মা। একটা সময় মাদ্রিদের রাস্তায় ফেরি করে মালামাল বিক্রি করতেন তার বাবা, বাসাবাড়ি পরিষ্কারের কাজ করতেন মা। 

কিশোর বয়সে স্পেন যুব দলে ডাক পেয়েছিলেন হাকিমি। তার মন সায় দেয়নি সেই ডাকে। স্পেন ম্যাচ সামনে রেখে স্প্যানিশ ক্রীড়া পত্রিকা মার্কাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ব্যাখ্যা করলেন কারণটা। 

“আমার মনে হয়েছিল, এটি (স্পেন) আমার জন্য সঠিক জায়গা নয়, স্বচ্ছন্দ ছিলাম না। বিশেষ কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু আমি বাড়িতে যেভাবে থাকতাম, তেমনটা ছিল না। সেটা হলো মরক্কান হওয়ায় আরব সংস্কৃতি আমার আপন ছিল।” 

সাত বছর বয়সে রিয়াল মাদ্রিদের একাডেমিতে যোগ দেন হাকিমি। পরে জায়গা পেয়ে যান মূল দলে। এরপর তিনি ধারে খেলতে যান বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে। ইন্টার মিলানে যোগ দিয়ে জেতেন সেরি আ শিরোপা। গত মৌসুম থেকে খেলছেন পিএসজির হয়ে; লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপে, নেইমারের সঙ্গে। 

হাকিমির বয়স এখন ২৪। স্পেনের বিপক্ষে অবশ্য এবারই প্রথম খেলবেন না তিনি। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও খেলেছিলেন। সেবার স্পেনকে প্রায় হারিয়ে দিচ্ছিল মরক্কো। যোগ করা সময়ের গোলে ২-২ ড্র করে স্প্যানিশরা। 

এখন তিনি আরও পরিণত, আরও অভিজ্ঞ। নিজেদের সেরাটা মেলে ধরে এবার স্পেনকে হারানোর প্রত্যয় তার কণ্ঠে। 

“চার বছরের অভিজ্ঞতায় আমি এখন আরও পরিণত। স্পেন শীর্ষ পাঁচ দলের একটি এবং সবসময় জেতার জন্য বিশ্বকাপে আসে। তবে আমাদের কোচও আমাদের মধ্যে জয়ের মানসিকতা গড়ে তুলেছেন; আমরা কাদের বিপক্ষে খেলছি তাতে কিছু যায় আসে না। আমরা আমাদের ফুটবল খেলব এবং তাদের হারানোর চেষ্টা করব।” 

আসরে প্রথম ম্যাচে গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়াকে গোলশূন্য ড্রয়ে রুখে দেয় মরক্কো। পরের ম্যাচে তারা হারিয়ে দেয় গত আসরে তৃতীয় হওয়া ও ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর দল বেলজিয়ামকে। 

ওই ম্যাচ শেষে গ্যালারিতে থাকা মায়ের কাছে ছুটে যান হাকিমি। ছেলের গালে চুমু এঁকে দেন মা, আর ছেলে চুমু খান মায়ের কপালে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় সেই দৃশ্য। 

শেষ ম্যাচে কানাডাকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নকআউটের টিকেট নিশ্চিত করে মরক্কো। এবার আরেকটি চমক দেখানোর আশায় হাকিমি। 

“আমরা গ্রুপ সেরা হয়েছি, কিছুটা সম্মান আমাদের প্রাপ্য। আমার মনে হয় স্পেন তা জানে এবং আমাদের কিছুটা ভয় তাদের পেতে হবে। আর আমরা কেন আবার চমক দেখাতে পারব না?”