করতালি, কোরাসের আবহে প্রস্তুতি আর্জেন্টিনার!

এই প্রথম যেন দেখা গেল এতটা আনন্দঘন পরিবেশে মেসি-মার্তিনেসদের অনুশীলন করতে।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরদোহা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2022, 06:26 AM
Updated : 30 Nov 2022, 06:26 AM

মাঠের পাশেই লম্বা, চওড়া একটা ঘর। খানিকটা ইনডোরের মতো। তখনও দলবল নিয়ে প্রস্তুতিতে নামেননি আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি। এর মধ্যে হঠাৎ ওই ঘরের ভেতর থেকে একযোগে বেজে ওঠে করতালির শব্দ; কিছুক্ষণ পর বাইরে বেরিয়ে এলো সমস্বরে গাইতে থাকা কোরাসের সুমধুর সুরও! এরপর পোল্যান্ড ম্যাচের প্রস্তুতিতে নামল আর্জেন্টিনা। কঠিন পরীক্ষায় বসার আগে এমন উচ্ছ্বাস দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের তাবুতে। চাপমুক্ত থাকার টোটকা কী? 

বৈশ্বিক ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে পোলিশদের বিপক্ষে আর্জেন্টাইনদের বিষাদের গল্প যেমন আছে, সাফল্যের হাসিও আছে। শুরুটা অবশ্য ১৯৭৪ সালের আসরের ৩-২ গোলের হার দিয়ে। চার বছর পর ফের দেখায় মারিও কেম্পেসের দারুণ নৈপূণ্যে পোল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল আলবিসেলেস্তারা। সেবারই প্রথম বিশ্বকাপের মুকুট জিতেছিল আর্জেন্টিনা। পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের ভেন্যু এবার কাতারের স্টেডিয়াম ৯৭৪। 

পয়েন্ট টেবিলের পরিস্থিতিও নেই অনুকূলে। রীতিমতো দুলছে আর্জেন্টিনা। এমন কঠিন পরীক্ষার আগে প্রস্তুতিতে উৎসবের আবহ বিরল দৃশ্য বটে। অন্তত প্রস্তুতি নিয়ে কোচ স্কালোনি যেভাবে শুরু থেকে চারধারে দেয়াল তুলে রেখেছেন! সৌদি আরবের বিপক্ষে ম্যাচের আগে প্রস্তুতিতে, লিওনেল মেসির চোট ইস্যুতে স্কালোনির রাখঢাক ছিল অনেক। সৌদির কাছে হেরে যাওয়ার পর পরিস্থতি হয়ে পড়ে আরও কঠিন। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর মাঠে সবকিছুতে ছিল ভীষণ কড়াকড়ি। ছবি তুলতে মানা, ভিডিও করতে মানা, মাঠের চারধারে ঘোরাঘুরিতে বারণ। বিধি-নিষেধের যেন অন্ত নেই।

থমথমে অবস্থার অবসান মেক্সিকো ম্যাচে ২-০ গোলের জয়ের পর। এ জয়ে স্বস্তি মিলেছে আর্জেন্টিনার, কিন্তু শঙ্কার মেঘটুকু আকাশ থেকে পুরোপুরি সরে যায়নি। তা দূর করে নকআউট পর্বে উঠতে পোল্যান্ডের বিপক্ষে জেতা তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান। বুধবারের ম্যাচে হারলে কোনো সুযোগ থাকবে না। ড্র করলে হয়তো সম্ভাবনা থাকবে, সেক্ষেত্রে মেলাতে হবে অনেক ‘কিন্তু-যদির’ হিসেব। অন্যদিকে পোল্যান্ডের হিসাবটা বেশ সোজা; মেসিদের বিপক্ষে হার এড়াতে পারলে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো নকআউট পর্বে উঠবে পোলিশরা।

‘৮৬’-এর ওই আসরে দিয়েগো মারাদোনা নামের এক জাদুকরের হাত ধরে সবশেষ বিশ্বকাপ জয়ের উচ্ছ্বাসে ভেসেছিল আর্জেন্টিনা। সেবার বলতে গেলে মারাদোনা একাই টেনেছিলেন আলবিসেলেস্তাদের আকাশি নীল-সাদা পতাকা। কাতারে সে ভার মেসি-মার্তিনেসদের কাঁধে। দোদুল্যমানতা আছে, তবে ফসকে যেতে বসা লাগাম মোটামুটি মুঠোয় রাখার আত্মবিশ্বাসটুকু ঠিকই ধরে রেখেছেন তারা। পোল্যান্ড ম্যাচের প্রস্তুতির আবহে তাই নির্ভার এক আর্জেন্টিনার দেখা মিলল বারবার। 

ওই করতালি ও কোরাসের পর মাঠে নেমে প্রস্তুতি শুরু করলেন মার্তিনেস, দিবালারা। জাগলিং করতে করতে শুটিং প্র্যাকটিসও সারলেন কয়েকজন। কারো শট ফাঁকা পোস্টে জড়ালে হাততালি দিতে থাকলেন সবাই। মিস করলেও হাততালি বাজল, তবে সে তালি যেন শব্দহীন। অধিনায়ক মেসিও অনুশীলনে এলেন মিনিট দশেক পর।

মাঠের মাঝামাঝি বৃত্তকারে দাঁড়িয়ে পাসিংটা আরও নিখুঁত করে নিতে ‘চোর-পুলিশ’ খেলার সময়ও একই আনন্দের আবহ চারদিকে। মাঠের যেদিকে সংবাদকর্মীদের বসার স্থান, ঠিক তার উল্টো দিকে লন টেনিসের নেট পেতে হেডের অনুশীলন চলল শুরু থেকে। বোঝা গেল পোল্যান্ড ম্যাচে সেট-পিসকে বাড়তি গুরুত্বপূর্ণ দিচ্ছেন স্কালোনি। 

স্কালোনির বাকি কৌশল দেখার কোনো সুযোগ থাকল না। সেগুলো তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে প্রকাশ করতে চান না কোনোভাবেই। বরাবরের মতো বরাদ্দ ১৫ মিনিট শেষ হতে তোড়জোড় শুরু করলেন দায়িত্বে থাকা লোকজন। সংবাদকর্মীদের বারবার তাগাদা দিতে থাকলেন বেরিয়ে যাওয়ার। নিয়ম মেনে সবাই বেরিয়েও গেলেন। তবে পোলিশ পরীক্ষায় নামার আগে আর্জেন্টিনার প্রস্তুতিতে কোলাহলের সুর ঠিকই বাজতে থাকল সবার কানে। কদিন ধরে যে সুর ছিল একেবারেই অনুপস্থিত!