বছরের প্রথম প্রিমিয়ার লিগের এই ম্যাচে ছয় গোলের সবকটিই হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে।
Published : 02 Jan 2024, 03:03 AM
আফ্রিকান নেশন্স কাপ খেলতে যাওয়ার আগে ক্লাব ফুটবলে একটি অম্ল-মধুর ম্যাচ কাটল মোহামেদ সালাহর। প্রথমে পেনাল্টি পেয়েও পারলেন না গোল করতে। পরে আবার তিনিই দলকে নিলেন এগিয়ে। এর আগে-পরে আক্রমণে ঝড় তুলল তার দল। তবে উড়ে যায়নি নিউক্যাসল ইউনাইটেড। গোল আর পাল্টা গোলে জমে উঠল লড়াই। শেষটায় অবশ্য বড় ব্যবধানেই জিতল লিভারপুল।
অ্যানফিল্ডে সোমবার রাতে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-২ গোলে জিতেছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। দারুণ এই জয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষস্থান মজবুত হয়েছে তাদের।
মাচে ছয় গোলের সবকটিই হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। বিরতির পর খেলা শুরু হতেই দলকে এগিয়ে নেন সালাহ। দলের শেষ গোলটিও করেন তিনি। মাঝে কোডি হাকপোর গোলে করেন অ্যাসিস্ট। লিভারপুলের আরেক গোলদাতা কার্টিস জোন্স।
অধিকাংশ সময় ঘর সামলাতে ব্যস্ত নিউক্যাসলের দুই গোলদাতা আলেক্সান্দার ইসাক ও সভেন বোটমান।
২০ ম্যাচে ১৩ জয় ও ৬ ড্রয়ে লিভারপুলের পয়েন্ট হলো ৪৫। সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট কম নিয়ে দুইয়ে অ্যাস্টন ভিলা।
আর্সেনাল ও ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট সমান ৪০; তবে গোল ব্যবধানে এগিয়ে তিন নম্বরে শিরোপাধারীরা। পেপ গুয়ার্দিওলার দল সিটি একটি ম্যাচ কম খেলেছে।
ঘরের মাঠে শুরু থেকেই আক্রমণের পর আক্রমণ করে গেছে লিভারপুল। কতটা দাপট দেখিয়েছে, তা ফুটে উঠছে পরিসংখ্যানেও। পুরো ম্যাচে গোলের জন্য ৩৪টি শট নিয়েছে দলটি, তার মধ্যে লক্ষ্যে ছিল ১৫টি। বিপরীতে, নিউক্যাসল কেবল পাঁচটিই শট নিতে পারে।
দ্বাদশ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি লিভারপুল। ডান দিক থেকে সালাহর পাস গোলমুখে পেয়ে টোকা দেন দারউইন নুনেস, বল লক্ষ্যেই ছিল; কিন্তু ঝাঁপিয়ে রুখে দেন গোলরক্ষক। ফিরতি বল পেয়ে ওয়াতারু এন্দোর জোরাল শট রক্ষণে প্রতিহত হয়।
চার মিনিট পর দারুণ এক পাল্টা আক্রমণে জালে বল পাঠান লুইস দিয়াস। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে অফসাইডের পতাকা তোলেন লাইন্সম্যান। ভিএআরেও তা বহাল থাকে।
২০তম মিনিটে ডি-বক্সে কলম্বিয়ান ফরোয়ার্ড দিয়াস ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় লিভারপুল। অবশ্য তাদের হতাশা এবারও দূর হয়নি; সালাহর স্পট কিক যথেষ্ট জোরাল হলেও নাগালে পেয়ে ঠেকিয়ে দেন স্লোভাকিয়ার গোলরক্ষক মার্তিন দুভরাওকা।
সুযোগ ছিল তারপরও। ওই স্পট কিক গোলরক্ষক ঠেকালেও বল হাতে রাখতে পারেননি। ছয় গজ বক্সেই বল পেয়ে যান ট্রেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ড। কিন্তু অত কাছ থেকেও উড়িয়ে মারেন ইংলিশ ডিফেন্ডার।
আক্রমণের ঢেউ তুলে প্রথম ৩০ মিনিটেই গোলের জন্য ১৪টি শট নেয় লিভারপুল, যদিও এর কেবল তিনটিই লক্ষ্যে রাখতে পারে তারা।
প্রবল চাপ সামলে মাঝেমধ্যে নিউক্যাসল পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করলেও পারছিল না। ৩৭তম মিনিটে অবশ্য লিভারপুলের রক্ষণ ভেঙে ডি-বক্সে ঢুকে পড়ে সফরকারীরা, ডাইভিং হেডে বল জালেও পাঠান শন লংস্টাফ। তবে এ যাত্রায়ও বাজে অফসাইডের বাঁশি।
দুই মিনিট পর অবিশ্বাস্য একটি গোল প্রায় করেই ফেলেছিলেন অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ড, কিন্তু দুর্ভাগ্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ডি-বক্সের বাইরে ডান দিকের বাইলাইনের কাছ থেকে শট নেন তিনি, ক্রসবার ঘেঁষে গিয়ে বল দূরের পোস্টে লাগে।
অনেক প্রচেষ্টার পর অবশেষে দ্বিতীয়ার্ধের চতুর্থ মিনিটে ডেডলক ভাঙতে পারে লিভারপুল। দিয়াসের দারুণ পাস ধরে ডান দিক থেকে ছয় গজ বক্সের মুখে বল বাড়ান নুনেস, আর নিখুঁত এক টোকায় দলকে এগিয়ে নেন সালাহ।
তিন মিনিট পর সালাহর পাস গোলমুখে পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় শট নেন নুনেস, দারুণ ক্ষিপ্রতায় রুখে দেন দুভরাওকা। প্রথমার্ধেও তিনি উরুগুয়ের ফরোয়ার্ড নুনেসের শট দারুণ নৈপুণ্যে পা দিয়ে ঠেকিয়েছিলেন।
এরপরই নিউক্যাসলের পাল্টা আঘাত। ৫৪তম মিনিটে বাঁ দিক দিয়ে শাণানো আক্রমণে অ্যান্থনি গর্ডন থ্রু পাস বাড়ান, অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে ডি-বক্সে বল ধরে কোনাকুনি শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন সুইডিশ ফরোয়ার্ড ইসাক।
৬২তম মিনিটে দুভরাওকার দেয়ালে ভেস্তে যায় লিভারপুলের আরেকটি প্রচেষ্টা। একাধিক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে দিয়াসের নেওয়া শট রুখে দেন গোলরক্ষক।
চাপ ধরে রেখে ৭৪তম মিনিটে ফের এগিয়ে যায় লিভারপুল। ১০ মিনিট আগে দিয়াসের বদলি নামা দিয়োগো জটার পাস পেয়ে খুব কাছ থেকে জালে পাঠান ইংলিশ মিডফিল্ডার জোন্স।
চার মিনিট পর আবারও জালে বল পাঠিয়ে জয়ের আশা জোরাল করে লিভারপুল। সালাহর ক্রস ছয় গজ বক্সের মুখে পেয়ে আলতো টোকায় ঠিকানা খুঁজে নেন আরেক বদলি ডাচ ফরোয়ার্ড হাকপো।
অবশ্য তাদেরকে একটুর জন্যও স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি নিউক্যাসল। ৮২তম মিনিটে কর্নার থেকে উড়ে আসা বল সবার ওপরে লাফিয়ে হেডে জালে পাঠান ডাচ ডিফেন্ডার সভেন বোটমান।
তবে নাটকীয়তা যতই হোক, উত্তেজনা যতই ছড়াক, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ কখনো হাতছাড়া করেনি লিভারপুল।
অনেকগুলো দুর্দান্ত সেভ করা দুভরাওকা খানিক পরই বড় একটা ভুল করে বসেন। জটাকে রুখতে গিয়ে তাকে ফাউল করে বসেন তিনি। ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
এবার আর কোনো ভুল করেননি সালাহ। নিখুঁত শটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন মিশরের এই ফরোয়ার্ড। তাতে লিভারপুলের জয়টাও নিশ্চিত হয়ে যায়।