আবাহনী-মোহামেডান ফাইনাল: রোমাঞ্চিত লেমোস, ক্ষুধার্ত আলফাজ

আবাহনীর লক্ষ্য মুকুট ধরে রাখা, মোহামেডান মরিয়া ২০১৩ সালের পর প্রথম শিরোপার স্বাদ পেতে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2023, 02:39 PM
Updated : 29 May 2023, 02:39 PM

আবাহনী ও মোহামেডান সবশেষ শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল সেই ২০১১ সালে; ‘কোটি টাকার’ সুপার কাপে। প্রায় এক যুগ পর এবার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মুখোমুখি হচ্ছে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে। অবশ্য দুই কোচের সুরে নেই তেমন উত্তাপ। ঐতিহ্যবাহী এই দ্বৈরথ নিয়ে রোমাঞ্চিত আবাহনী কোচ মারিও লেমোস। মোহামেডান কোচ আলফাজ আহমেদ জানালেন, সাফল্যের জন্য ক্ষুধার্ত তার দল।

কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার শুরু হবে লড়াই। ফেডারেশন কাপের রেকর্ড ১২ বারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী নামবে মুকুট ধরে রাখার লক্ষ্যে। মোহামেডান মুখিয়ে ২০০৯ সালের পর ফের এই শিরোপার স্বাদ নিতে।

অনেক কারণেই সাফল্যের উচ্ছ্বাস ভাসতে মরিয়া হয়ে আছে মোহামেডান। ২০১৩ সালে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে হারিয়ে সুপার কাপ জয়ের পর আর কোনো শিরোপা স্বাদ পায়নি তারা। ২০০৭ সাল থেকে পেশাদার লিগে কোনো প্রাপ্তির গল্প নেই তাদের। বর্তমান লিগ টেবিলে চতুর্থ স্থানে থাকাটা ‘সাদা-কালো’  জার্সিধারীদের বিবর্ণতারই যেন প্রতিচ্ছবি।

আবাহনীর বিপক্ষে সবশেষ পাঁচ ম্যাচের পরিসংখ্যানেও জয় নেই মোহামেডানের। দুটিতে ড্র, হার বাকি তিনটিতে। সবশেষ ২০১৯ সালে লিগ ম্যাচে আকাশি-নীলদের বিপক্ষে জিতেছিল তারা।

তবে এবারের ফেডারেশন কাপে মোহামেডানের পারফরম্যান্স আলো ঝলমলে। সেমি-ফাইনালে তারা গত কয়েক বছরে মুড়িমুড়কির মতো শিরোপা জেতা বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়ে দেয় ২-১ গোলে। ফাইনালে শেষ আঁচড়টি দিতে চান আলফাজ। ঐতিহ্যের ‘কঙ্কাল’ হয়ে থাকার বলয় থেকে বেরিয়ে নতুন দিনের আগমণী বার্তাও মোহামেডান কোচ দিতে চান আবাহনীকে হারিয়ে।

“বসুন্ধরা কিংসকে হারানোর পরের ম্যাচগুলোতে আমরা যেভাবে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছি, সেটাই আগামীকাল খেলব। দল আত্মবিশ্বাসী, তবে আমাদের সাবধানী খেলা খেলতে হবে। আবাহনী অনেক বড় দল, ম্যাচে ৫০-৫০ সুযোগ আছে। যে ভালো খেলবে সেই জিতবে।” 

মোহামেডানের মতো সাফল্যের আকাল নেই আবাহনীর। সবশেষ লিগ শিরোপা আকাশী-নীল জার্সিধারীরা জিতেছে ২০১৭-১৮ মৌসুমে। গত মৌসুমে স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশ কাপও জিতেছিল তারা। মোহামেডানের বিপক্ষে ফাইনাল নিয়ে তাই রোমাঞ্চিত আবাহনী কোচ লেমোস।


“যে ডার্বি ঘিরে এমন ইতিহাস, আবেগ এবং উত্তেজনা, তার মধ্যে তো রোমাঞ্চের উপস্থিতি থাকবেই। আমিও রোমাঞ্চিত। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের অংশ হতে পেরে সত্যিই ভাগ্যবান আমি।”

ফাইনালের ভাগ্য গড়ে দেওয়ার ভার মূলত দুই দলের আক্রমণভাগের কাঁধে। মোহমেডানের হয়ে যেটি বলতে গেলে একাই টানছেন সুলেমানে দিয়াবাতে; মালির এই ফরোয়ার্ড চলতি লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা (১২টি)। ফেডারেশ কাপেও জালের দেখা পেয়েছেন চার বার।

আবাহনীর আক্রমণভাগ মূলত দেনিয়েল কলিনদ্রেস সোলেরা নির্ভর। লিগে ১১ গোল আছে কোস্টা রিকার এই ফরোয়ার্ডের। নাইজেরিয়ান থেকে বাংলাদেশি হয়ে যাওয়া এলিটা কিংসলে, ফয়সাল আহমেদ ফাহিমও ঘুরিয়ে দিতে পারেন ম্যাচের মোড়। কিংসলের নামের পাশে লিগ গোল ৭টি, ফাহিমের ৪টি। ফেডারেশন কাপেও এই তিন জন পেয়েছেন জালের দেখা। 

লেমোসের চাওয়া কেবল আক্রমণভাগ নয়, সব বিভাগেই নিখুঁত হয়ে ওঠা।

“ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা। কিন্তু এটা ফাইনাল, এখানে মনোযোগ হারানোর কোনো সুযোগ নেই। আক্রমণ, রক্ষণ-সব বিভাগেই নিখুঁত হতে হবে আমাদের।”

ডাগআউটে দুই কোচের ছকের লড়াইটাও জমতে পারে। পর্তুগিজ লেমোস অভিজ্ঞতায় যেমন ঋদ্ধ, শিরোপা স্বাদ হিসেবে তিনি আবাহনীর হয়ে পেয়েছেন এ পর্যন্ত একটি করে ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপ। সেখানে আলফাজ মোহামেডান দায়িত্ব নিয়েছেন লিগের মাঝপথে, শফিকুল ইসলাম মানিক হঠাৎ করে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর।

এই অল্প সময়ে অবশ্য দলকে বেশ গুছিয়ে নিয়েছেন আলফাজ। লিগ টেবিলে ছয়-সাতে ঘুরপাক খেতে থাকা মোহামেডানকে তুলে এনেছেন সেরা চারে। ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপের ফাইনালে তুলেছেন। একটা শিরোপার জন্য মোহামেডানের যে আর্তি, তা টের পাচ্ছেন সাবেক এই তারকা স্ট্রাইকার।

“আমি কোচ হওয়ার পর একটা পরিবর্তন টের পাচ্ছি। আমাদের শুরুটা ভালো ছিল না, কিন্তু আস্তে আস্তে দলে একটা পরিবর্তন এসেছে। আমি কোচ হিসেবে ভীষণ খুশি। আমাদের একটা শিরোপা দরকার। দলও শিরোপার জন্য ক্ষুধার্ত।  হতে পারে এই শিরোপাই আমাদের ভবিষ্যতের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।”

সত্যিই মোহামেডান একটা মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাফল্য-ব্যর্থতার উপর নির্ভর করবে তাদের সামনের পথ। রঙিন দিনে ফিরবে নাকি ডাকনাম ‘সাদা-কালো’র মতোই থাকবে, তাও নির্ধারিত হয়ে যাবে!