শেষ সময়ে সাগরিকার গোলে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠল সাইফুল বারী টিটুর দল।
Published : 04 Feb 2024, 08:02 PM
মলিনতার খোলস ছেড়ে শেষ দিকে বেরিয়ে এলো বাংলাদেশ। দুটি ভালো সুযোগ কড়া নাড়ল দুয়ারে; কিন্তু ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় মিলল না গোল। তবে হাল ছাড়ল না তারা। অবশেষে যোগ করা সময়ে দারুণ নৈপুণ্যে ব্যবধান গড়ে দিলেন সাগরিকা। ভারতকে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ।
কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে রাউন্ড রবিন লিগে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ১-০ গোলে জিতল বাংলাদেশ। নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে মুকুট ধরে রাখার মিশন শুরু করা সাইফুল বারী টিটুর দল টানা দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে নিশ্চিত করল ফাইনাল।
ভারত যাত্রা শুরু করেছিল ভুটানকে ১০-০ গোলে উড়িয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে এসে গোলের পথটাই ভুলে গেল তারা। তাদের পয়েন্ট ৩।
দিনের প্রথম ম্যাচে ভুটানকে ১-০ গোলে হারানো নেপালের পয়েন্ট ৩।
আগামী মঙ্গলবার নিজেদের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ভুটান এবং ভারত-নেপাল। বাংলাদেশের সামনে সুযোগ টানা তিন ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে শিরোপ লড়াইয়ের মঞ্চে ওঠা।
দ্বিতীয় মিনিটে দূরপাল্লার ফ্রি কিকে চেষ্টা করেন আফিদা খন্দকার, কিন্তু অধিনায়কের শট কাঁপায় উপরের জাল। শুরুর এই ঝলক অবশ্য ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। ভারতের চাপে বরং বলের নিয়ন্ত্রণ রাখার দিকেই মনোযোগ দিতে হয় তাদের, প্রথমার্ধে লক্ষ্যে কোনো শটও রাখতে পারেনি তারা।
অষ্টম মিনিটে বাঁ দিক থেকে আসা ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে তালগোল পাকান আফিদা ও জয়নব বিবি রিতা। তবে ভারতের মিডফিল্ডার পুজা বলের নাগাল পাওয়ার আগেই স্লাইডে ক্লিয়ার করেন গোলরক্ষক স্বপ্না রানী মন্ডল।
দ্বাদশ মিনিটে আবারও বাংলাদেশের রক্ষণে হানা দেয় ভারত। সতীর্থের ক্রস ধরে নেহার নেওয়া কোনাকুনি শট ঝাঁপিয়ে আঙুলের টোকায় কর্নার করে দেন স্বপ্না।
৩৭তম মিনিটে আফিদার ফ্রি কিকে অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে বেরিয়েও ঠিকঠাক হেড নিতে পারেননি সুরমা জান্নাত। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে মুনকি আক্তার বক্সের একটু ওপরে ফাউলের শিকার হলে ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। আফিদার শট বেরিয়ে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই খেলতে থাকে সাবধানী ফুটবল। ৭১তম মিনিটে সুযোগ কড়া নাড়ে বাংলাদেশের দুয়ারে। স্বপ্নার কর্নারে বল বাঁক খেয়ে ছুটছিল গোল মুখে, ভারত গোলরক্ষক অনিকা দেবী কোনোমতে ক্লিয়ার করেন। এরপর মুনকির ফিরতি শট উপরের জাল কাঁপায়।
৮৩তম মিনিটে গোলের ভালো নষ্ট হয় বাংলাদেশের। ফ্রি কিকে সুরমা ঠিকঠাক হেড করতে পারেননি, বল ড্রপ খেয়ে জালের দিকে ছোটার পথে কোনোমতে আটকান গোলরক্ষক। তবে তিনিও পারেননি পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে; দ্রুত গোলমুখ থেকে ক্লিয়ার করেন ডিফেন্ডার থৈবিসানা চানু তৈজাম।
তিন মিনিট পরই গোলের সুবর্ণ সুযোগ নষ্টের হতাশায় পুড়তে হয় বাংলাদেশ। একক প্রচেষ্টায় আক্রমণে ওঠা মুনকি গোলরক্ষক অনিকাকে একা পেয়েও তার গায়ে মেরে বসেন।
যোগ করা সময়ে আচমকাই নিজেদের বক্সের উপর থেকে লং পাস বাড়ান আফিদা। ভারতের রক্ষণভাগ কিছুটা অপ্রস্তুত থাকায় দুই জনের ফাঁক গলে বল নিয়ে বেরিয়ে যান সাগরিকা। এরপর নিখুঁত শটে অনিকার পাশ দিয়ে খুঁজে নেন জাল। এ নিয়ে আসরে এই ফরোয়ার্ডের গোল হলো ৩টি।
একটু পর শেষের বাঁশি বাজতেই শুরু হয় আফিদা-সাগরিকাদের উৎসব। ২০২১ সালেও এবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ বছর বয়সীদের নিয়ে হওয়া আসরে ভারতকে রাউন্ড রবিন লিগ ও ফাইনালে একই ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
গত বছর অনূর্ধ্ব-২০ বছর বয়সীদের এ প্রতিযোগিতায় নেপালকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের পথে রাউন্ড রবিন লিগে ভারতের সঙ্গে গোলশুন্য ড্র করেছিল বাংলাদেশ।
২০২২ সালে অবশ্য তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সেবার অনূর্ধ্ব-১৮ বছর বয়সীদের প্রতিযোগিতায় গ্রুপ পর্ব ও ফাইনাল-দুই ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ।