রেয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ট্রফিজয়ী ফুটবলার প্রিয় ক্লাবকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানালেন আবেগের জোয়ারে ভেসে।
Published : 25 Jul 2024, 12:15 PM
রেয়াল মাদ্রিদ আর নাচো ফের্নান্দেস- এক সুরের কথা, এক সুতোয় গাঁথা। শৈশবে যে ক্লাবে পা রেখেছিলেন তিনি সপ্নাতুর চোখে, সেখানেই স্বপ্নের পথ ধরে ছুটে কাটিয়ে দিয়েছেন পুরো ক্যারিয়ার। প্রায় দুই যুগের দীর্ঘ এই বন্ধন অবশেষে ছিন্ন হয়ে গেল। চোখের জলে ভেসে প্রিয় ক্লাবকে বিদায় বললেন ৩৪ বছর বয়সী ডিফেন্ডার। তবে তার এই অশ্রুতে আক্ষেপ-হতাশা নেই, বেদনা কিছু আছে বটে, তবে সবচেয়ে বেশি মিশে আছে গর্ব আর তৃপ্তি।
কিছুদিন আগেও তিনি ছিলেন ক্লাবের সাফল্য উদযাপনের মধ্যমণি। এবার তাকে ঘিরেই ভিন্ন এক আয়োজন হয়ে গেল বুধবার। যেটি তার বিদায়ী আয়োজন। ক্লাব হাউজে এই আয়োজনে তার বর্তমান ও সাবেক সতীর্থদের অনেকে ছিলেন উপস্থিত, ছিলেন ক্লাব কর্তারা।
২০০১ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে রেয়ালের একাডেমিতে যোগ দেন নাচো। মাদ্রিদের সন্তান বেড়ে ওঠেন নিজ শহরের ক্লাবে। রেয়ালের ‘বি’ দলের হয়ে তার অভিষেক ২০০৯ সালে, মূল দলের হয়ে প্রথমবার মাঠে নামেন ২০১১ সালে। সুদীর্ঘ পথচলায় রেয়ালের ‘বি’ দলের হয়ে খেলেছেন একশর বেশি ম্যাচ, মূল দলের হয়ে প্রায় আড়াইশটি।
খুব বড় তারকা হয়ে উঠতে পারেননি তিনি, দলের সেরাদের মধ্যেও তার নাম এসেছে কমই। তবে ক্লাবের প্রতি বিশ্বস্ততা, নিবেদন আর ভালোবাসায় তিনি বরাবরই ছিলেন শীর্ষদেরই একজন। ক্যারিয়ারজুড়ে সেরা একাদশে জায়গা পেতে অনেক লড়তে হয়েছে তাকে, চোটাঘাত হানা দিয়েছে অনেকবার। অন্যান্য ক্লাবে যাওয়ার হাতছানি তো ছিলই। কিন্তু তিনি রয়ে গেছেন প্রিয় আঙিনায়।
এই পথচলাতেই তিনি হয়ে উঠেছেন রেয়াল মাদ্রিদের সমৃদ্ধ ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ট্রফিজয়ী ফুটবলার। ছয়টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, পাঁচটি ক্লাব বিশ্বকাপ ও চারটি লা লিগাসহ মোট ২৬টি ট্রফি জয়ের অংশ ছিলেন তিনি। বিদায়ী মৌসুমেও তিনি পেয়েছেন দুহাত ভরে। এই মৌসুমে দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। দল জিতেছে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। এমনকি এই গোধূলিবেলায় কদিন আগে স্পেনের হয়ে স্বাদ পেয়েছেন ইউরো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার।
ইউরো চলার সময়ই ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন তিনি। কাতারের ক্লাব আল-কাদসিয়াহতে শুরু করবেন তিনি ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায়।
বিদায়বেলায় বান নেমেছে তার চোখে। কথা বলতে গিয়ে ধরে এসেছে কণ্ঠ। তবে সবকিছুতেই ছিল তৃপ্তির ছাপ।
“সবচেয়ে সুন্দর সমাপ্তি এটা, এর চেয়ে ভালো কিছু ভাবতেও পারি না। অধিনায়ক হিসেবে এবং ১৫তম ইউরোপিয়ান কাপ উঁচিয়ে ধরার সম্মান নিয়ে বিদায় নিচ্ছি।”
“আমি চলে যাচ্ছি, কারণ ক্যারিয়ারে ভিন্ন একটা অভিজ্ঞতা নিতে চেয়েছি এবং নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চেয়েছি। সবসময়ই স্মরণীয় হয়ে থাকতে চেয়েছি এমন একজন হিসেবে, যুব পর্যায় থেকে উঠে এসে যে ক্লাবের হয়ে সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে।”
বরাবরই ক্লাব অন্তপ্রাণ হিসেবে পরিচিতি ছিল নাচোর। তিনি নিজেও সেই পরিচয়ে খুঁজে পান সবচেয়ে বেশি গর্ব।
“দুনিয়ার সেরা ক্লাবে প্রায় ২৪ বছর বেড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছি আমি। রেয়াল মাদ্রিদ আমাকে হারতে ও জিততে শিখিয়েছে, এর চেয়েও বেশি শিখিয়েছে জীবন সম্পর্কে। এই ক্লাবই আমার সবকিছু। এই ক্লাবের হয়ে সর্বস্ব দিয়েছি, এই তৃপ্তি নিয়ে বিদায় নিচ্ছি আমি।”
ক্লাবের প্রিয় সন্তানকে বিদায় বেলায় আবেগময় স্তুতিতে ভাসিয়েছেন ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেস।
“গত ২৩ বছর ধরে তোমাকে আমাদের করে পেয়ে আমরা গর্বিত। ১০ বছর বয়সে এখানে এসেছো এবং আমাদের সব দলে খেলেছো। তোমাকে জানাতে চাই যে, রেয়ালের একাডেমি থেকে উঠে আসা কিংবদন্তি হিসেবে তোমাকে নিয়ে সর্বোচ্চ গর্ব আছে আমাদের এবং কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, কারণ তুমি এই ক্লাবের হয়ে নিজের হৃদয় উজাড় করে দিয়েছে। তুমি ভালো করেই জানো, এটাই তোমার ঘর এবং সবসময়ই ঘর থাকবে।”