স্প্যানিশ ফুটবল
কোনো একদিন ফের বার্সেলোনার ডাগআউটে ফেরার দরজাও খোলা রাখলেন দলটির সাবেক এই মিডফিল্ডার।
Published : 25 May 2024, 08:36 PM
নাটকীয় পালাবদলে বার্সেলোনার কোচের পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ায় মনে কষ্ট থাকলেও, ক্লাবের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন শাভি এর্নান্দেস। তবে এর পেছনের কারণ খোলাসা করতে চান না দলটির সাবেক এই মিডফিল্ডার।
বার্সেলোনা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা শুক্রবার শাভির সঙ্গে দেখা করে তাকে জানিয়ে দেন, আগামী রোববারের ম্যাচের পর আর দলের দায়িত্বে থাকছেন না তিনি। সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি, ইএসপিএনসহ আরও অনেক গণমাধ্যমের খবর, শাভির স্থলাভিষিক্ত হবেন বায়ার্ন মিউনিখ ও জার্মানির সাবেক কোচ হান্স ফ্লিক।
লা লিগার শেষ রাউন্ডে সেভিয়ার বিপক্ষে নিজের বিদায়ী ম্যাচ সামনে রেখে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে শাভি বললেন, ক্লাবের সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনা করে কোচ বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
“ক্লাব সভাপতির সঙ্গে আমি কথা বলেছি। পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে কারণগুলো তিনি আমার কাছে তুলে ধরেছেন। আমি যা করতে পারি তা হলো, এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া এবং সম্মান করা। তিনিই ক্লাবে সিদ্ধান্ত নেন। আমরা করমর্দন করেছি, আলিঙ্গন করেছি এবং একে অপরকে শুভকামনা জানিয়েছি। এখন আমি গ্যালারিতে আরেকজন সমর্থক হব।”
“ক্লাবের (সর্বোত্তম স্বার্থ) বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ তারা বিশ্বাস করে যে, পরিবর্তন দরকার। আমি এখনও অনুপ্রাণিত, ক্ষুধার্ত এবং উচ্চাভিলাষী আছি। আমি বিশ্বাস করি, স্কোয়াডে ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা বড় কিছু করতে পারতাম, কিন্তু এখন তা আর হচ্ছে না।”
গত জানুয়ারিতে হুট করেই চলতি মৌসুম শেষে বার্সেলোনার দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন শাভি। কোনোভাবেই নিজের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন না করার কথা বললেও, গত এপ্রিলে ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিশদ আলোচনার পর বদলে যায় তার ভাবনা। চুক্তির আরেকটি মৌসুম থেকে যাওয়ার কথা নিশ্চিত করেন তিনি।
এরপর সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। তবে সপ্তাহখানেক আগে, হঠাৎ করেই নানা গুঞ্জন ছড়াতে থাকে। গত ১৬ মে সাংবাদিকদের কাছে ক্লাবের ‘নাজুক আর্থিক অবস্থা’ নিয়ে মন্তব্য করেন শাভি। এমন অবস্থায় রেয়াল মাদ্রিদের মতো দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা খুবই কঠিন হবে, বলেন তিনি।
গণমাধ্যমের খবর, এতেই নাকি কোচের ওপর চটে যান লাপোর্তা। এরপর কয়েক দিনের মধ্যেই চাকরিচ্যুত করা হলো ৪৪ বছর বয়সী শাভিকে।
শাভির আগে সাবেক কোচ রোনাল্ড কুমান ও ক্লাবের সবচেয়ে সফলতম খেলোয়াড় লিওনেল মেসির বিদায়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সেভিয়া কোচ কিকে সানচেস ফ্লোরেস বলেন, নিজেদের কিংবদন্তিদের সঙ্গে বাজে আচরণ করছে বার্সেলোনা। ফ্লোরেসের মন্তব্য নিয়ে জিজ্ঞেস করলে শাভি বলেন, “আমার উত্তর দেওয়ার প্রশ্ন নয় এটি।”
সভাপতি লাপোর্তা কিংবা ক্রীড়া পরিচালক দেকোর সঙ্গে কোনো সমস্যা নেই বলেও দাবি করেন শাভি। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
২০২১ সালের নভেম্বরে নানা সমস্যায় জর্জরিত বার্সেলোনার প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন শাভি। তখন লিগে নবম স্থানে ছিল দলটি। শাভির হাত ধরে মৌসুম শেষ করে তারা দুইয়ে থেকে। পরের মৌসুমেই জেতে লা লিগা শিরোপা, ২০১৯ সালের পর যা তাদের প্রথম লিগ শিরোপা। সেবার স্প্যানিশ সুপার কাপও ঘরে তোলে বার্সেলোনা।
তবে এই মৌসুমটা তাদের ভালো কাটেনি। ধরে রাখতে পারেনি লা লিগার শিরোপা, চার ম্যাচ বাকি থাকতেই যা জিতে নেয় রেয়াল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গত দুই আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের পর এবার বার্সেলোনার পথচলা থামে কোয়ার্টার-ফাইনালে। শিরোপাহীন মৌসুম শেষ করতে যাচ্ছে তারা।
দায়িত্বের আড়াই বছরে সবকিছু মিলিয়ে অবশ্য খুশি শাভি। কোনো একদিন ফের কাম্প নউয়ে ফেরার পথও খোলা রাখছেন তিনি।
“গত কয়েক বছরে আমরা যে কাজ করেছি, তাতে আমি গর্বিত ও খুশি। আমরা কঠিন মুহূর্তে দায়িত্বে এসেছিলাম। ক্লাবের (আর্থিক) পরিস্থিতির কারণে সবকিছু সহজ ছিল না। আমরা সবসময়ই ক্লাবকে প্রাধান্য দিয়েছি। এই মৌসুমে আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে না হওয়ার পরও সবকিছু মিলিয়ে আমি খুশি, কারণ ভালো কাজ হয়েছে।”
“(বার্সেলোনার ডাগআউটে) অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেভিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচ আমরা উপভোগ করার চেষ্টা করব। এরপর আমি বিরতি নিতে চাই এবং তারপর আমরা দেখব ভবিষ্যতে কী হয়। আমি কখনোই (ফিরে আসার) দরজা বন্ধ করব না। এটা আমার জীবনের ক্লাব।”