মোহাম্মদ জুবায়েরের ব্লগ
উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ধরে রাখার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদকের কাছে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনই প্রশ্ন রাখলেন; জানতে চাইলেন এমন প্রাপ্তির অনুভূতি।
Published : 31 Oct 2024, 10:58 AM
কিছু অনুভূতি অবিশ্বাস্য, অভাবনীয়, অমলিন! সত্যিই তাই। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে যাকে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে প্রশ্নবানে বিদ্ধ করতে হয়, নানা উত্তরের অন্বেষণে কখনও কোমল, কখনও কঠোর হতে হয়, সেই গণমাধ্যমকর্মীকেই যখন দুইবারের উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী অধিনায়ক সাবিনা খাতুন প্রশ্ন করেন, সাক্ষাৎকার নেন, তখন বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে দুলতেই হয়!
এবারের মতোই আলো ঝলমলে, প্রাপ্তির অনাবিল আনন্দে ভেসে যাওয়ার উপলক্ষ আমার হয়েছিল দুই বছর আগে। কাঠমাণ্ডুর এই দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সেবার সাবিনারা দেশের মানুষকে এনে দিয়েছিলেন প্রথম উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। সে উচ্ছ্বাস, সে উন্মাদনা ছিল অকল্পনীয়। ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে আসার আনন্দ ছিল তার পরতে পরতে।
সেবার সেলফি তোলা হয়েছিল শুধু অধিনায়ক সাবিনার সাথে। প্রথম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের অনাবিল আনন্দের অনুভূতি জানা হয়েছিল। পেশাদার গণ্ডির বাইরে বেশি কিছু হয়নি। যদি বলি, সবচেয়ে সুখের স্মৃতি ছিল, টিম হোটেলে মেয়েদের সাথে এক ফ্রেমে বন্দি হওয়া। সেই ছবিটা তুলেছিলেন কালের কণ্ঠের ফটো সাংবাদিক মীর ফরিদ হোসেন।
এবারের পথচলা একেবারেই আলাদা। কেননা, মুকুট জয়ের চেয়ে মুকুট ধরে রাখা কঠিন। অফিস থেকে যখন জানতে চাওয়া হয়েছিল, দলের অবস্থা কী? কিছুটা শঙ্কা নিয়েই বলেছিলাম, কমপক্ষে ফাইনাল খেলবে। এই বিশ্বাসটুকু জন্মানোর কারণ পিটার জেমস বাটলার। ইংলিশ এই কোচ ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেডে খেলেছেন লম্বা সময়ে। ইংলিশ ফুটবলের কৌশল তার জানা-শোনা কম নয়।
ফাইনালের আগের দিনের সংবাদ সম্মেলনে নেপাল কোচ রাজেন্দ্র তামাং বলেছিলেন, এই বাংলাদেশ ইংলিশ কোচের অধীনে খেলে, ইংলিশ কৌশলে। বিস্তারিত তিনি বলেননি, কিন্তু কারো অজানা নয়, গতিময় ইংলিশ ফুটবলের বৈশিষ্ট্য। সাবিনা-মারিয়া-মনিকা-আফিদারা টুর্নামেন্ট জুড়েই খেলেছেন গতিময়, আত্মবিশ্বাসী ফুটবল। পাকিস্তানের বিপক্ষে যে ১-১ ড্র, সেখানেও দাপট ছিল বাংলাদেশেরই।
এরপর ম্যাচ গড়িয়েছে, বাংলাদেশের দাপট বেড়েছে। ভারতকে ৩-১ গোলে হারানোর পর ভুটানকে সেমি-ফাইনালে ৭-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দেওয়ার আনন্দ হয়েছে সঙ্গী। সবশেষ ফাইনালে দশরথের গ্যালারিভর্তি নেপালী সমর্থকদের স্তব্ধ করে দিয়ে এসেছে কাঙ্ক্ষিত জয়। অনেকের কাছে তা অকল্পণীয় মনে হতে পারে, কারো মনে হতে পারে পুরো কৃতিত্ব বাফুফের, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এই গল্প মেয়েদের লেখা, যে লেখার রঙ-তুলি ছিল বাটলারের হাতে!
সে যাই হোক, প্রথম উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ কাভার করতে গিয়েছিলাম ২০১৬ সালে, শিলিগুঁড়িতে। সেবার ভারতের বিপক্ষে হেরে ভেঙেছিল স্বপ্ন। পরেরবার ২০১৯ সালে নেপালের বিরাটনগরে, সেবারও ভারতের কাছে হেরে থেমেছিল পথচলা। কিন্তু হাল ছাড়লে তো চলবে না!
২০২২ সালের আসরে তাই অনেক প্রত্যাশা নিয়ে নেপাল পা রেখেছিলাম। মনের গহীন থেকে শুনেছিলেম স্বপ্ন দেখার বার্তা। পূরণও হয়েছিল। এবারও ছিলাম আশাবাদী, হয়ত প্রবলভাবে নয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্রয়ে সে স্বপ্ন ফিকে হতেও বসেছিল, কিন্তু এরপর থেকেই দুর্বার মেয়েরা। তর্ক-বিতর্কের স্রোত পেরিয়ে বাটলারের কৌশলই বাস্তবায়ন করে ছাড়ল তারা।
শিরোপা হাতে নিয়ে উচ্ছ্বাসের ফাঁকে সাবিনার সাথে কথা বলতে গেলে হলো বিস্ময়কর এক অভিজ্ঞতা। মনে করিয়ে দিলেন দুই বছর আগেও আমি ছিলাম তাদের সহযাত্রী। অর্থাৎ টানা দুইবারের উইমেন’স সাফ জয়ী সাংবাদিক। তো সাবিনা জানতে চাইলেন আমার অনুভূতি। পাঠকদের জন্য সেই অল্প-স্বল্প কথপোথন তুলে দিলাম।
সাবিনা: টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন দেশের সাংবাদিক হয়ে কেমন লাগছে?
এই অনুভূতি আসলে অসাধারণ। যেটা আসলে… যে লম্বা সফরটা আমরা এতদিন ধরে করে এসেছি, মেয়েদের ফুটবল নিয়ে আমাদের যে উচ্ছ্বাস, আকাঙ্ক্ষা সবকিছু ছিল, সেটা আমরা প্রথম পূরণ হতে দেখেছি এই মাঠেই, ২০২২ সালে, আবার আমরা তা পূরণ হতে দেখলাম ২০২৪ সালে। সাবিনার মতো একজন তারকার হাতে এই পরিমাণ সাফল্য দেখতে পাওয়াটাও অনেক বড় আনন্দের ব্যাপার।
এরপরই সাবিনা বুকে হাত দিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে অভিবাদন জানালেন। আমিও বললাম, “থ্যাঙ্ক উই স্যার, উই আর প্রাউড অব ইউ।”
এমন অভিজ্ঞতা সত্যিই অবিশ্বাস্য, অভাবণীয়, অকল্পনীয়!