‘বাজে’ ম্যাচের দায় নিয়ে আনচেলত্তি বললেন, ‘সমালোচনা পুরোপুরি প্রাপ্য’

লাইপজিগের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে দল একটুও ভালো খেলতে পারেনি, মেনে নিচ্ছেন রেয়াল মাদ্রিদের কোচ, অধিনায়কসহ দলের অন্যরাও।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2024, 03:54 AM
Updated : 7 March 2024, 03:54 AM

শেষ বাঁশি বাজার পর যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল গোটা বের্নাবেউ! মাঠ ও ডাগ আউটে থাকা রেয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড় থেকে কোচিং স্টাফ আর গ্যালারির সমর্থক, স্বস্তির শ্বাস ফেললেন হয়তো সবাই। লাইপজিগের আক্রমণের স্রোত আর চোখরাঙানি সামলে শেষ পর্যন্ত কোনোরকমে রক্ষা তো পাওয়া গেল! দলের এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সের দায় সবটুকুই নিয়ে কোচ কার্লো আনচেলত্তি বললেন, একাদশ বাছাইয়েই ভুল করেছিলেন তিনি।

ঘরের মাঠে একদমই বিবর্ণ ছিল রেয়াল মাদ্রিদ। লাইপজিগের সঙ্গে তাল মেলাতেও ধুঁকছিল তারা। এমনকি নিজেদের দর্শকদের কাছ থেকে হুইসেল ও শিসও শুনতে হলো তাদের, যেটা আসলে ‘দুয়ো’ কিংবা জেগে ওঠার ডাক। কিন্তু রেয়াল ছিল অচেনাই।

শেষ পর্যন্ত বড় খেসারত দিতে হয়নি তাদের। ১-১ গোলে ড্র করে দুই লেগ মিলিয়ে ২-১ অগ্রগামিতায় কোয়ার্টার-ফাইনালে পা রাখে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নরা।

প্রথম লেগে লাইপজিগের মাঠে ১-০ ব্যবধানে জিতে এসেছিল রেয়াল। সেদিনের চোট জর্জর দলের চেয়ে বুধবার অনেক ভালো দল পেয়েছিলেন আনচেলত্তি। কিন্তু ঘরের মাঠে নিজেদের হারিয়ে খুঁজেছে রেয়ালের ফুটবলাররা। নিষ্প্রভ প্রথমার্ধের পর ৬৫তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন ভিনিসিউস জুনিয়র। তবে তিন মিনিট পরই সমতায় ফেরে লাইপজিগ।

জার্মান দলটি এরপর একের পর এক আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে রেয়ালকে। কিন্তু ফিনিশিং ভালো ছিল না তাদের। রেয়ালের রক্ষণভাগ খুব ভালো না করলেও বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়ান মৌসুমজুড়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করা গোলকিপার আন্দ্রি লুনিন। শেষ পর্যন্ত আর গোল হয়নি।

দলের পারফর‌ম্যান্স নিয়ে ম্যাচ শেষে একদম অকপট আনচেলত্তি। এমন খেলার পরও শেষ আটে পা রাখার স্বস্তিও ছিল তার কণ্ঠে।

“বাজে ম্যাচ ছিল এটি, তাড়না ছিল একদমই কম। মানসিক দিকগুলো আমাদের খেলায় প্রভাব ফেলেছে। মানসম্পন্ন একটি দলের বিপক্ষে খেলেছি আমরা, যাদের হারানোর কোনো ভয় ছিল না এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছে। আমরা ভুগেছি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল কোয়ার্টার-ফাইনালে যাওয়া এবং আমরা তা পেরেছি।”

ফেরলঁদ মঁদি, নাচো, ফেদে ভালভের্দেসহ দলের রক্ষণ ও মাঝমাঠের নির্ভরযোগ্য বেশ কজন এ দিন ছিলেন একদমই বিবর্ণ। তবে কারও দিকে আঙুল না তুলে রেয়াল মাদ্রিদ কোচ কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন নিজেকেই।

“রাতটি অবশ্যই খুব ভালো ছিল না। দায় আমারই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কখনও কখনও এরকম হয়ে থাকে। ঘরের মাঠে চেলসির বিপক্ষেও (২০২২ সালের এপ্রিলে) হয়েছিল এরকম। কখনও কখনও একটি বাজে ম্যাচ দলকে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দিতে পারে।”

“শুরুর একাদশ সাজাতে হয়তো আমি ভুল করেছি। আবার একাদশ গড়লে হয়তো একই দল বেছে নিতাম না। আত্মসমালোচনা করতে হবে আমাদের… আজকে যে সমালোচনা আমাদের হচ্ছে, তা পুরোপুরি প্রাপ্য। মাঝবিরতিতে (দর্শকরা) যে শিস দিয়েছেন, সেটাও প্রাপ্য।”

রেয়ালের ডিফেন্ডার আন্টোনিও রুডিগারও কোনো রাখঢাক না রেখেই মেনে নিলেন নিজেদের ব্যর্থতা।

“আমরা ভীষণরকম ভুগেছি। তারা ভালো খেলেছে, আমরা খারাপ-ব্যস। আমরা খুবই নড়বড়ে ছিলাম আজকে, কোনো তাড়নাই ছিল না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে এরকম খেললে বড় খেসারত দিতে হতে পারে…।”

“আজকে আমরা কোনো উত্তরই খুজে পাইনি। এই ধরনের ম্যাচে ৯০ মিনিটের বেশি সময় মনোযোগ ধরে রাখতে হয়। মোটেও ভালো পারফরম্যান্স ছিল না এটি। তবে দিনশেষে আমরা উতরে গেছি।”

একইরম কথার প্রতিধ্বনি ছিল ডিফেন্ডার নাচোর কণ্ঠেও। শেষ পর্যন্ত স্বস্তিতে মাঠ ছাড়লেও এই ম্যাচ থেকে শিখতে বললেন রেয়াল অধিনায়ক।

“আমরা অবশ্যই জানি যে, মৌসুমের সেরা ম্যাচ এটি ছিল না। কখনও কখনও কোনো ম্যাচ খুবই খারাপ যায়, আজকের রাতটি ছিল সেরকমই। আমাদের পারফরম্যান্সের জন্যই ম্যাচ এরকম হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা কোয়ার্টারে উঠেছি, এটাই আসল কথা। এই ম্যাচকে সামনের ম্যাচগুলির জন্য শিক্ষা হিসেবে নিতে পারি আমরা।”