ইউএস ওপেনের ফাইনালে তারুণ্যের লড়াইয়ে রুদকে হারিয়ে প্রথম শিরোপার পাশাপাশি র্যাঙ্কিয়ের শীর্ষে ওঠাও নিশ্চিত করলেন আলকারাস।
Published : 12 Sep 2022, 10:55 AM
লড়াইটা ছিল তারুণ্যের স্পর্ধার। লড়াইটা পাওয়ার টেনিসের। আলোচিত দুই তরুণের সেই লড়াইয়ে জয় ১৯ বছর বয়সী প্রতিভার। টেনিস বিশ্ব শুনতে পেল নতুন এক তারকার জয়ধ্বনি। আগ্রাসী টেনিসের দুরন্ত প্রদর্শনীতে ক্যাস্পার রুদকে হারিয়ে ইউএস ওপেনের শিরোপা জিতে নিলেন কার্লোস আলকারাস। পাশাপাশি তিনি নিশ্চিত করলেন ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠাও।
আলকারাসের প্রাণবন্ত টেনিসের সামনে খুব একটা লড়াই জমাতে পারেননি রুদ। ইউএস ওপেনের পুরুষ এককের ফাইনালে রোববার নরওয়ের ২৩ বছর বয়সী তারকার বিপক্ষে স্পেনের টিন এজ তারকা জিতে যান ৬-৪, ২-৬, ৭-৬ (১), ৬-৩ গেমে।
প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা আর এক নম্বরে ওঠা, ফাইনালে একই হাতছানি ছিল দুজনের সামনেই। অভিজ্ঞতায় কিছুটা এগিয়ে ছিলেন রুদ। কিন্তু এবারের টুর্নামেন্টের চমক আলকারাস তার বিদ্যুচ্চমকের মতো টেনিসের ঝলকানিতে ফাইনালেও অসহায় করে রাখলেন প্রতিপক্ষকে।
১৯৭৩ সালে এটিপি র্যাঙ্কিং চালু হওয়ার পর এক নম্বরে ওঠা প্রথম টিন এজ খেলোয়াড় আলকারাস। এতদিন সর্বকনিষ্ঠ এক নম্বর ছিলেন লেটন হিউয়িট। ২০০১ সালে ২০ বছর বয়সে শীর্ষে পা রেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান এই তারকা।
এই বছর থেকেই মূলত আলকারাসের পরিচিতি একটু একটু করে ছড়াতে থাকে টেনিস বিশ্বে। বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তিনি তৃতীয় রাউন্ডে ওঠেন, উইম্বলডনে পা রাখেন কোয়ার্টার-ফাইনালে, ফ্রেঞ্চ ওপেনে খেলেন চতুর্থ রাউন্ড পর্যন্ত। এরপর এই ইউএস ওপেনে প্রথম সেমি-ফাইনাল থেকে প্রথম ফাইনাল হয়ে প্রথমবার পেলেন ট্রফি জয়ের স্বাদ।
রুদ ট্রফি জয়ের কাছাকাছি গিয়েছিলেন গত ফ্রেঞ্চ ওপেনেও। কিন্তু ফাইনালে হেরে যান ওই টুর্নামেন্টের অবিসংবাদিত সম্রাট রাফায়েল নাদালের কাছে। এবার ইউএস ওপেনেও খুব কাছে গিয়ে ট্রফি পাওয়া হলো না তার। র্যাঙ্কিংয়ে তিনি থাকছেন এখন দুই নম্বরে।
প্রথম সেটে দারুণ খেলে মোটামুটি সহজেই জিতে নেন আলকারাস। তবে দ্বিতীয় সেটে তার সার্ভে গড়বড় হতে শুরু করে। রুদও ঘুরে দাঁড়ান দারুণভাবে। তৃতীয় সেটেও লড়াই জমে ওঠে বেশ। কিন্তু টাইব্রেকে স্নায়ুর লড়াইয়ে উতরে যান আলকারাস। পরের সেটে তার দাপুটে পারফরম্যান্সের সামনে টিকতে পারেননি রুদ।
ফাইনালে জয় নিশ্চিত হতেই কোর্টে শুয়ে পড়েন আলকারাস। দু হাতে মুখ ঢেকে কিছুটা সময় নিয়ে যেন বোঝার চেষ্টা করেন, কী করে ফেলেছেন তিনি! ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে জবাব দেন দর্শকের অভিনন্দনের। লাফিয়ে নেট টপকে আলিঙ্গনে জড়ান প্রতিপক্ষকে। এরপর ফটোগ্রাফারদের পেরিয়ে গ্যালারিতে উঠে ছুটে যান নিজের বক্সে, যেখানে তখন উৎসবে মেতেছে তার সাপোর্ট স্টাফরা।
“ছেলেবেলা থেকেই এমন কিছুর স্বপ্ন দেখে আসছি আমি… বিশ্বের এক নম্বর হব, গ্র্যান্ড স্ল্যামের শিরোপা জিতব…।”
“আমার পরিবার, আমার দলের সঙ্গে যে কঠোর পরিশ্রম করেছি, সেটিরই পুরষ্কার এই ট্রফি। আমার বয়স স্রেফ ১৯। কঠিন সব সিদ্ধান্তগুলি তাই আমার পরিবার ও দলই নিয়ে আসছে। এই ট্রফি আমার জন্য সত্যিই খুব, খুবই স্পেশাল।”
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আলকারাসকে টুইটারে অভিনন্দন জানান স্বদেশি কিংবদন্তি রাফায়েল নাদাল। আলকারাস তাতে আপ্লুত, “আমার কেবল একটি হলো, তার আছে ২২টি (গ্র্যান্ড স্ল্যাম)। তবে আমি এখন লাইনে দাঁড়ালাম!”
সাফল্যের ছোঁয়া পেয়ে উজ্জীবিত আলকারাস সামনের পথচলায় পৌঁছতে চান নতুন উচ্চতায়।
“অনেক অনেক সপ্তাহ ধরে আমি শীর্ষে থাকতে চাই… আশা করি, অনেক বছর ধরে থাকব। এই দুই সপ্তাহ ছিল অসাধারণ। তবে আমি আবার কঠোর পরিশ্রম করব, এমন সাফল্য আরও পেতে ঘাম ঝরাতে থাকব।”
আরও একটি ফাইনাল হারলেও রুদ ভেঙে পড়ছেন না। বরং নতুন উদ্যমে আবার কোর্টে নামবেন বলে জানিয়ে রাখলেন।
“আমরা দুজনই জানতাম কত কিছুর জন্য খেলছি আমরা, কত কিছুর হাতছানি আমাদের সামনে আছে। আজকে পারিনি। তবে দুই নম্বরে ওঠাও খুব খারাপ কিছু নয়! প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ট্রফি জয় আর এক নম্বরে ওঠার লড়াই আমি চালিয়ে যাব।”
নতুন চ্যাম্পিয়নের আবির্ভাব দিয়ে শেষ হলো দর্শক রেকর্ডের ইউএস ওপেন। ২৩ হাজার ৮৫৯ দর্শক ধারণ ক্ষমতার আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের প্রতিটি সেশন এবার ছিল পরিপূর্ণ। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে প্রথমবার হলো এমন কিছু। দুই সপ্তাহের আসরের মূল পর্বে এবার মোট দর্শক ছিল ৭ লাখ ৭৬ হাজার ১২০ জন। যা ছাড়িয়ে যায় ২০১৯ আসরের ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭২ দর্শকের রেকর্ডকে।