সীমাবদ্ধতা মেনে খোশ মেজাজেই রোমান-দিয়া-বাকিরা

এবারের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের থাবায় জেরবার বিশ্ব। অলিম্পিক যখন দুয়ারে টোকিওতে তখন বাড়ছে এই ভাইরাসের সংক্রমণ। অলিম্পিক ঘিরে তাই উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা নেই আগের মতো। নানা সীমাবদ্ধতার বেড়াজালে বন্দি অ্যাথলেট, কোচ, কর্মকর্তারা। এই কঠিন বাস্তবতাটুকু মেনে নিয়ে প্রস্তুতি চলছে রোমান-দিয়া-বাকিদের।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2021, 07:07 AM
Updated : 21 July 2021, 07:07 AM

বাংলাদেশ দলের শেফ দ্য মিশন বশির আহমেদ মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন, সীমাবদ্ধতার মধ্যেই ফুরফুরে মেজাজে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন অ্যাথলেটরা।

বৈশ্বিক ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসর অলিম্পিকের এবারের আসরের পর্দা উঠবে আগামী শুক্রবার। এক বছর আগে এ আসর  শুরুর কথা ছিল, কিন্তু করোনাভাইরাসের ছোবলে পিছিয়ে দেওয়া হয়। টোকিওর এবারের আসর নিয়ে চলছে ধুন্দুমার সমালোচনা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে খোদ জাপানিদের অনেকে এ মহূর্তে আসরটি আয়োজনের ঘোর বিরোধী। তবে এর মধ্যেও উদ্বোধনী আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে আগের সূচি মেনে।

কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ রোধে অ্যাথলেটদের চলাফেরা, থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতেই কড়াকড়ি আরোপ করেছে টোকিও অলিম্পিকের আয়োজক কমিটি। এই অনভ্যস্ত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে জানালেন বিওএ সহ-সভাপতি মামুন।

“ওদের নিয়ম অনুযায়ী অ্যাথলেট, কর্মকর্তা, কোচ কেউ বাইরে যেতে পারবে না, বাইরের কেউ অলিম্পিক ভিলেজে আসতে পারবে না। প্রায় প্রতিদিনই কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে হচ্ছে। আমরা তো এগুলোর সঙ্গে খুব একটা অভ্যস্ত নই। এ কারণে শুরুর দিকে মানিয়ে নিতে একটু কষ্ট হয়েছে সবার। তবে এখন সবকিছু ভালো আছে। অ্যাথলেটরা অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে।”

“জাপানে গতকাল ঈদ-উল আজহা উদযাপিত হয়েছে। যেহেতু ওরা (অ্যাথলেটরা) পরিবার-পরিজন ছেড়ে বাইরে ঈদ করছে, আমরা চেষ্টা করেছি ওদেরকে ঈদের আনন্দ দেওয়ার। ওরা এখন সবাই ভালো আছে। প্রতিদিন অনুশীলন করতে পারছে।”

টোকিও এবং ঢাকার তাপমাত্রায় খুব একটা হেরফের নেই। তাই অনুশীলনে সমস্যা হচ্ছে না দিয়া-বাকিদের। সবচেয়ে বেশি সমস্যা যাতায়াতে হচ্ছে বলে জানালেন বিওএ সহ-সভাপতি।

“এখানে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা, সেটা হচ্ছে যাতায়াত ব্যবস্থা। যে ট্রান্সপোর্টেশন দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী ড্রাইভার নেই। এ কারণে এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যুতে যেতে সমস্যা হচ্ছে। মূলত যারা বড় বহর নিয়ে এসেছে, তাদেরকে এ সমস্যা আরও  বেশি পোহাতে হচ্ছে।”

“অনেক ক্ষেত্রে এমন হচ্ছে যে, যে ড্রাইভার আমাদের এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যুতে নিয়ে যাবেন, তিনি হয়ত থাকেন টোকিওর বাইরে বা বেশ দূরে। কোভিডের কারণে নানা সীমাবদ্ধতা থাকায় দেখা যাচ্ছে, সে সময়মতো আসতেই পারছে না। তবে আমরা যেহেতু বড় বহর নিয়ে আসিনি, তাই আমাদের সমস্যাও কম।”

টোকিওর আসরে অংশ নেবে বাংলাদেশের ৬ অ্যাথলেট। দুই আর্চার রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী। শুটার আব্দুল্লাহ হেল বাকি, দুই সাঁতারু আরিফুল ইসলাম ও জুনাইনা আহমেদ ও স্প্রিন্টার জহির রায়হান।

টোকিও থেকে অনেক দেশের অ্যাথলেটের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে নানা গণমাধ্যমে। তবে এ সব নিয়ে রোমান-বাকিরা আতঙ্কিত নয় বলেও জানালেন মামুন।

“কড়াকড়ি আছে কিন্তু ভিলেজে খেলোয়াড়রা এদিক-ওদিক যেতে পারছে, এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা নেই। ভিলেজের কফিশপগুলো খুলে দিয়েছে আজ। ভিলেজে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে আয়োজকরা দ্রুত তাকে ভিলেজ থেকে সরিয়ে নিচ্ছে। জাপানিদের সবকিছুই নিয়মমাফিক এবং এখানেও সবকিছু নিয়ম অনুযায়ীই হচ্ছে।”

“অনেক কথা শোনা গেলেও ছেলেরা আতঙ্কিত নয়। তারা তাদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। হাসি-খুশিই আছে। যাতায়াতের ওই সমস্যা ছাড়া আরেকটা ভোগান্তি আছে, সেটা হচ্ছে, আগে যেমন সবকিছু রুমে-রুমে পৌঁছে দিত, কোভিডের কারণে সেটা হচ্ছে না। লোকবলের পরিমাণ কমিয়েছে আয়োজকরা। ফলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ওরা সবকিছু দরজার কাছে রেখে যাচ্ছে, সেগুলো আবার অ্যাথলেটদের টেনে নিয়ে আসতে হচ্ছে। পরিস্থিতির কারণে তো করার কিছু নেই। এখানে আসার আগে যেমন আমাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ অফিসার চারজন দেওয়ার কথা ছিল। ওরা দিয়েছিলও চারজন। কিন্তু এখন দিয়েছে দুই জন।”

“অলিম্পিক ভিলেজে সব দেশের অ্যাথলেটরাই আনন্দে আছে। সীমাবদ্ধতা বেশি বাইরে। তবে এটাও সত্যি রিও দে জেনেইরো অলিম্পিকের মতো আবহ নেই এবং সেটা করোনাভাইরাসের কারণে। আবার এটাও ঠিক, রিও দে জেনেইরোর চেয়ে টোকিওর আয়োজন অনেক গোছাল মনে হচ্ছে আমার কাছে।”