ইউরোপা লিগ
অবিশ্বাস্য ছুটে চলায় আরও একবার শেষ সময়ে গোল করে অপ্রতিরোধ্য অপরাজেয় পথচলা অব্যাহত রেখে রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি ইউরোপা লিগের ফাইনালে উঠল শাবি আলোন্সোর বায়ার লেভারকুজেন।
Published : 10 May 2024, 12:16 PM
একবার-দুবার হলে সেটিকে বলা যায় চমক। কয়েকবার এরকম হলে চোখ কপালে ওঠে বিস্ময়ে। কিন্তু ম্যাচের পর ম্যাচ, দিনের পর দিন বারবার যখন হতে থাকে! বায়ার লেভারকুজেন যা করে চলেছে, বিস্ময়ের নতুন ঠিকানা তাতে মিলছে আর খুঁজতে হচ্ছে নতুন সব বিশেষণ। আরও একবার… হ্যাঁ, আরও একবার একদম শেষ সময়ের গোলে ঘুরে দাঁড়িয়ে তারা ধরে রাখল অপ্রতিরোধ্য অপরাজেয় পথচলা। রেকর্ডের খেলাতেও শাবি আলোন্সোর দল নিজেদের নিয়ে গেল সবার ওপরে।
ইউরোপা লিগের সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগে রোমাকে ৩-০ গোলে হারিয়েই ফাইনাল একরকম নিশ্চিত করে ফেলেছিল লেভারকুজেন। দ্বিতীয় লেগে বৃহস্পতিবার ২-২ গোলের নাটকীয় ড্রয়ের পর ৫৯ বছর পুরোনো এক রেকর্ড নতুন করে লিখেছে তারা।
অবিশ্বাস্য এক মৌসুমের শেষ প্রান্তে চলে আসা লেভারকুজেন অপরাজিত রইল টানা ৪৯ ম্যাচে। পেরিয়ে গেল তারা ১৯৬৩-১৯৬৫ সময়ে বেনফিকার ৪৮ ম্যাচ অপরাজিত থাকার ইউরোপিয়ান রেকর্ড।
লেভারকুজেনের এই অপরাজেয় পথচলা শেষ হওয়ার বাকি ছিল মাত্র কয়েক সেকেন্ড। আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার লেয়ান্দ্রো পারেদেসের দুটি পেনাল্টি গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর প্রথম লেগের ব্যবধান ঘুচিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিল রোমা। ৮১ মিনিট পর্যন্ত ইতালিয়ান দলটি এগিয়ে ছিল ২-০ গোলে। এরপরই রোমার ডিফেন্ডার জানলুকা মানচিনির আত্মঘাতী গোলে লেভারকুজেনকে সুযোগ করে দেয় ম্যাচে ফেরার।
৯০ মিনিট শেষেও অবশ্য ব্যবধান ছিল ২-১। যোগ করা হয় আরও সাত মিনিট। সেটির সপ্তম মিনিটেই ইয়োসিপ স্তানিসিচ গোল করে উল্লাসে ভাসান ঘরের মাঠের দর্শকদের। বায়ার্ন মিউনিখ থেকে ধারে আসা ডিফেন্ডারের গোলে অপরাজেয় পথচলা ধরে রাখে লেভারকুজেন।
এই মৌসুমে কতবার এভাবে পিছিয়ে পড়েও ঘুরে দাঁড়াল লেভারকুজেন, কতবার শেষ সময়ের গোলে জিতল বা পরাজয় এড়াল, সেই হিসাব রাখাও কঠিন।
তারা এখন এটাকে যেন নিয়ম বানিয়ে ফেলেছে। তার পরও ম্যাচ শেষে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলেন না লেভারকুজেন অধিনায়ক গ্রানিত জাকা।
“এই ধরনের আবহের স্বপ্ন দেখে থাকে সবাই। এই ধরনের ম্যাচের স্বপ্ন দেখে থাকে। ছেলেবেলায়, স্বপ্ন দেখার দিনগুলিতে এসব ম্যাচের কথাই সবাই ভাবে। খেলা শেষের সামান্য আগে সমতা ফেরানো এবং এরপর ফাইনালে যাওয়া… এটা অবিশ্বাস্য।”
আর্সেনাল থেকে এই মৌসুমেই লেভারকুজেনে আসা অভিজ্ঞ এই মিডফিল্ডার বললেন, পিছিয়ে পড়লেও অপরাজেয় পথচলায় ছুটতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন তারা।
“বড় একটি দলের বিপক্ষে এভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে যে মানসিকতার ছাপ আমরা রেখেছি এবং যেভাবে ফাইনালে উঠেছি, আজকে আমরা খুশির চেয়েও বেশি কিছু। রোমা খুবই অভিজ্ঞ দল এবং মাঠে কাজটা ঠিকঠাক করতে জানে তারা। কিন্তু এখানে এই দুই লেগজুড়ে সেরা খেলা উপহার দেওয়া দলটিই ফাইনালে উঠেছে।”
“দলের তাড়না স্পষ্ট ফুটে উঠছে, আমরা একটুও থমকে যাইনি। প্রথম গোলটি করার পর দ্বিতীয় গোলও করতে চেয়েছি, অপরাজেয় যাত্রা ধরে রাখতে চেয়েছি। টানা ৪৯ হয়ে গেল, আমরা এটা নিয়ে দারুণ গর্বিত।”
ক্লাবের ১০৪ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার বুন্ডেসলিগা জয় আগেই নিশ্চিত করে ফেলেছে লেভারকুজেন। ঐতিহাসিক এক ‘ট্রেবল’ জয় থেকে এখন তারা স্রেফ দুই ম্যাচ দূরে।
আগামী ২২ মে ইউরোপা লিগের ফাইনালে খেলবে তারা আতালান্তার বিপক্ষে। ২৫ মে তারা খেলবে জার্মান কাপের ফাইনালে,কাইজাস্লটানের বিপক্ষে। ফুটবলবিশ্বে সাড়া জাগানো কোচ শাবি আলোন্সো বললেন, এই দুটি ট্রফিও তার দলের প্রাপ্য।
“এক সপ্তাহেই দুটি ফাইনাল খেলতে হবে আমাদের। আজকে ওদের দ্বিতীয় গোলের পর আমরা দারুণ মানসিকতার ছাপ রেখেছি। পরে আমার ফুটবলারদের চোখে চোখ রেখেছি এবং দেখতে পেয়েছি, ওরা আরও বেশি চায়।”
“তিনটি শিরোপা জয়ের হাতছানি এখনও আমাদের সামনে আছে। আমার এই ছেলেদের ট্রেবল প্রাপ্য।”